Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ধরপাকড়, শুধু হুন্দাই কারখানাতেই আটক ৪৭৫

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২০ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ধরপাকড়, শুধু হুন্দাই কারখানাতেই আটক ৪৭৫

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এক নির্মাণাধীন ব্যাটারি কারখানায় হঠাৎ করেই যেন ঝড় বয়ে গেল। হুন্দাই ও কিয়া ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য ব্যাটারি তৈরি করতে গড়ে উঠছিল এই বিশাল কারখানাটি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্কপ্রয়োগকারী সংস্থা—আইস–এর নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালানো হয়।

এই অভিযানে অন্তত ৪৭৫ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সবচেয়ে বড় একক অভিযান।

এই কারখানাটি ছিল জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিল্প বিনিয়োগ। রাজ্যের গভর্নর ব্রায়ান কেম্পও এ প্রকল্পকে রাজ্যের অর্থনীতির জন্য এক 'অভূতপূর্ব সুযোগ' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

কোরিয়া ইকোনমিক ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ৫৬০ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০০ জন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। কোরিয়ান গণমাধ্যমগুলোও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

হঠাৎ এই অভিযানে নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। হুন্দাই ও এলজি এনার্জি সলিউশনের যৌথ এই প্রকল্পটি মূলত ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য তৈরি হচ্ছিল এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনেক কোরিয়ান নাগরিক আটক হয়েছেন এবং তারা এই ঘটনার কারণে উদ্বিগ্ন। তাদের একজন মুখপাত্র লি জে-উং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে আসা কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নাগরিকদের স্বার্থ যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়—এই বিষয়ে আমেরিকান কর্তৃপক্ষকে আমাদের উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে তদন্ত চলছিল এবং আইন বহির্ভূতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরতদের খুঁজে বের করতেই এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

যদিও হুন্দাই স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, আটককৃতদের কেউই তাদের সরাসরি কর্মচারী নন। তারা আরও জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সর্বত্র স্থানীয় আইন ও নিয়ম মেনে চলে। ব্যাটারি কারখানার নির্মাণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এই ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যার মধ্যে হুন্দাইয়েরই ২৬ বিলিয়ন ডলার।

ঘটনার দিন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ইউনিফর্ম পরা এক কর্মকর্তা নির্মাণশ্রমিকদের বলেন, ‘‘এই জায়গাজুড়ে আমাদের ওয়ারেন্ট আছে। এখনই সব কাজ বন্ধ করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই ‘খারাপ’ অভিবাসীদের দেশ থেকে বিতাড়নের কথা বলে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে, আইসের পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে—বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী নন এমন মানুষদেরই ধরা হচ্ছে।

শুধু জর্জিয়া নয়, নিউইয়র্কেও একই ধরনের অভিযান হয়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেন, “সকালে যখন আইস অভিযান চালায়, তখন ৪০ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ককে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে অন্তত এক ডজন শিশুর অভিভাবক রয়েছেন। সন্তানরা যখন স্কুল থেকে ফিরে আসে, তখন বাসায় কেউ থাকবে না—এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সহিংস অপরাধীদের দেশ থেকে বিতাড়নের পক্ষে। কিন্তু মুখোশধারী আইস সদস্যরা যেভাবে পরিবারের সদস্যদের আলাদা করছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

এই অভিযানের ফলে কারখানার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। আর প্রশ্ন উঠেছে—একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি বিনিয়োগ আহ্বান করছে, তখন কেন এই ধরনের আচরণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বে না?

বিগত বছরেই হুন্দাই ও এলজি ঘোষণা করেছিল, তারা ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের যৌথ উদ্যোগে ব্যাটারি তৈরি করবে, যা হুন্দাই, কিয়া এবং জেনেসিসের গাড়িগুলোতে ব্যবহার হবে।

আজ সেই উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে ভয়, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তার মাঝে।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন