Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ৮০০ নিহত, আন্তর্জাতিক সাহায্য চায় তালেবান

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ এএম

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ৮০০ নিহত, আন্তর্জাতিক সাহায্য চায় তালেবান

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে আট শতাধিক মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান প্রশাসন। রবিবার মধ্যরাতে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, আর সোমবার রাতভর জীবিতদের খোঁজে ধ্বংসস্তূপ ঘুরে বেড়ায় উদ্ধারকর্মীরা। কাদামাটি আর পাথরের তৈরি ঘরবাড়ি পাহাড়ি উপত্যকায় মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে যায়। দুর্গম পাহাড়ি পথ, ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া আর ভারী বৃষ্টির কারণে উদ্ধার পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা কুনার প্রদেশে।

গ্রামের মানুষ সাদা কাফনে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নিহতদের মুড়ে দাফন করেছেন, হেলিকপ্টারে করে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। কুনারের নুরগাল থেকে উদ্ধার হওয়া জাফর খান গুজ্জার বললেন, ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে তাঁর ছোট ভাইয়ের পা ভেঙে গেছে, কয়েকজন শিশু মারা গেছে।

তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, কুনার ও নানগারহার প্রদেশে মোট ৮১২ জন নিহত হয়েছেন। শুধু কুনারেই প্রাণ হারিয়েছে ৬১০ জন। মাজার দারা গ্রামের এক বাসিন্দা বললেন, পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে, শিশু আর বৃদ্ধরা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে, দ্রুত সাহায্য দরকার। অন্য একজন বললেন, আমাদের অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার—সবকিছুরই অভাব।

জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা দপ্তরের কর্মকর্তা কেট কেয়ারি জানান, ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, অনেক সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। পশুর মৃতদেহ দ্রুত সরানো না হলে পানির উৎস দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেনারা উদ্ধারকাজে ছড়িয়ে পড়েছে, ৪০টি ফ্লাইটে অন্তত ৪২০ জন আহত ও মৃতদেহ সরানো হয়েছে।

এটি ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানে তৃতীয় বড় ভূমিকম্প। বিদেশি সহায়তা অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দাতারা ক্ষুব্ধ। ২০২২ সালে যেখানে মানবিক সহায়তা ছিল ৩.৮ বিলিয়ন ডলার, এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৬৭ মিলিয়নে।

কাবুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, জীবন হারিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য মুখপাত্র আব্দুল মাতেন ক্বানী বলেন, আমাদের সব দলকে কাজে নামানো হয়েছে যাতে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে খাদ্য ও চিকিৎসা—সর্বাত্মক সহায়তা পৌঁছানো যায়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেন জানিয়েছে, তারা এক মিলিয়ন পাউন্ড জরুরি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে, যাতে তালেবান প্রশাসনের হাতে টাকা না যায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তারা কাবুলে এক হাজার পরিবারকে তাবু দিয়েছে এবং কুনারে ১৫ টন খাদ্য পাঠানো হচ্ছে, মঙ্গলবার থেকে আরও সাহায্য পাঠানো হবে। চীনও জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শোকবার্তা জানালেও সরাসরি সহায়তা দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি।

ভূমিকম্পের পর ভয় আর আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন মানুষ। জালালাবাদের ছাত্র জিয়াউল হক মোহাম্মদী বললেন, ঘরে বসে পড়াশোনা করার সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান, তারপর থেকে সারারাত ভয়ে কেটেছে। অনেকেই হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন, কেউ বা আহতদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই গ্রামগুলোর মানুষের আর্তি—তাদের এখনই সাহায্য দরকার।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন