আফগানিস্তানে ভূমিকম্প, নিহত অন্তত ৬২২, আহত দেড় হাজারের বেশি

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ৬২২ জন নিহত হয়েছে এবং দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সারাদিন উদ্ধারকারীরা ভেঙে পড়া ঘরের নিচে জীবিত মানুষ খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন, আর আহতদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এই দুর্যোগ এমন এক সময়ে এলো যখন দেশটি আগে থেকেই মানবিক সংকটে বিপর্যস্ত। বিদেশি সাহায্য অনেকটাই কমে গেছে, আবার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ছয়। তালেবান পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যে নিহতের সংখ্যা ৬২২ ছাড়িয়েছে, আর আহত অন্তত ১,৫০০। এর আগে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএ বলেছিল মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। রাজধানী কাবুলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্গম গ্রামগুলোতে দ্রুত পৌঁছতে চেষ্টা করছে উদ্ধার দল। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান বলেন, “কেবল কয়েকটি ক্লিনিকের হিসেবেই চারশোর বেশি আহত আর বহু নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
রয়টার্সের ছবিতে দেখা গেছে হেলিকপ্টারে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর গ্রামবাসীরা সেনা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে মিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের তুলছেন। কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, বহু গ্রামে হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। প্রাদেশিক তথ্য কর্মকর্তা নাজিবুল্লাহ হানিফ বললেন, এখন পর্যন্ত ২৫০ জন নিহত আর ৫০০ জন আহতের খবর মিলেছে, তবে এই সংখ্যা আরও পরিবর্তিত হতে পারে। এক গ্রামেই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়।
ভূমিকম্পটি আঘাত হানে মধ্যরাতে, মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। সীমান্ত ঘেঁষা খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে কাদামাটি আর পাথরের ঘরগুলো মুহূর্তেই ধসে পড়ে। আহতদের হাসপাতাল ভরে উঠছে, উদ্ধারকারীরা মরিয়া হয়ে খুঁজে চলেছেন জীবিত মানুষ।
এখনও পর্যন্ত কোনো বিদেশি দেশ উদ্ধার বা ত্রাণ কার্যক্রমে এগিয়ে আসেনি বলে জানিয়েছে আফগান পররাষ্ট্র দপ্তর।
আফগানিস্তান এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় ভারতীয় আর ইউরেশিয়ান পাতের সংঘাতে বারবার এমন দুর্যোগ ঘটে। গত বছর দেশটির পশ্চিমাংশে একাধিক ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। দারিদ্রপীড়িত এই দেশটি প্রকৃতির কাছে কতটা ভঙ্গুর, তা যেন আবারও স্পষ্ট হলো।