
রুশ বাহিনীর রাতভর বিমান হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে তিনটি শিশু—দুই বছর, চৌদ্দ বছর আর সতেরো বছরের—আছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের সরকারি কর্তৃপক্ষ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কিয়েভে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ রাতের হামলা।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এই হামলা আবারও প্রমাণ করে, যুদ্ধ থামাতে আলোচনার টেবিলে বসার কোনো ইচ্ছা রাশিয়ার নেই। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “আজকের এই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা সারা বিশ্বের সেই সব মানুষের উদ্দেশে জবাব, যারা যুদ্ধবিরতি আর শান্তিপূর্ণ আলোচনার ডাক দিয়ে আসছেন এতদিন ধরে। রাশিয়া যুদ্ধকে বেছে নিয়েছে, কূটনৈতিক সমাধানকে নয়।”
কিয়েভ শহরের কেন্দ্র থেকে ভোর তিনটার পর এবং সাড়ে পাঁচটার দিকে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। শহরের অন্তত ২০টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, একটি পাঁচতলা ভবনের অংশবিশেষ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে অন্তত তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লিমেনকো। তিনি আশঙ্কা করছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও কেউ কেউ আটকা পড়ে থাকতে পারেন।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর ত্কাচেঙ্কো জানান, নিহতদের মধ্যে এক চৌদ্দ বছরের কিশোরী ও আরও একটি শিশু রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৫ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আগস্ট মাসে বিমান হামলা কিছুটা কমে এসেছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে যুদ্ধ থামানোর একটি চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। আর এখন রাশিয়া আবারও আক্রমণ শুরু করল। কিয়েভের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, শহরটিতে একযোগে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি শাহেদ ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।
রাতের বেলায় কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, রাজধানীতে ‘মারাত্মক হামলা’ চালানো হচ্ছে। তিনি জানান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে এবং নগরবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে অনুরোধ জানান।
জেলেনস্কি এই হামলার জবাবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কামনা করেছেন। মস্কোর মিত্র চীনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি নতুন করে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা চীনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করছি। চীন বারবার বলেছে, যুদ্ধ যেন না বাড়ে এবং যেন যুদ্ধবিরতি হয়। এখন সময় চীনের অবস্থান স্পষ্ট করার।”
এর কিছু সময় আগেই চীন জানায়, আগামী সপ্তাহে বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও উপস্থিত থাকবেন।