Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

হারেৎজের রিপোর্ট

আইডিএফের দাবি, গাজায় নেই দুর্ভিক্ষ, দাবি প্রত্যাখ্যান বিশেষজ্ঞদের

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১১:১১ এএম

আইডিএফের দাবি, গাজায় নেই দুর্ভিক্ষ, দাবি প্রত্যাখ্যান বিশেষজ্ঞদের

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চেষ্টা করছে যে গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই, বরং এ বিষয়ে হামাস কেবল প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আইডিএফ এই দাবির পক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি; বরং তাদের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে গাজার ভয়াবহ খাদ্য সংকটের চিত্রই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। এই খবর প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের প্রভাবশালী অনলাইন পত্রিকা দ্য হারেৎজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইডিএফ দাবি করেছে—গাজায় ক্ষুধার কোনো বাস্তব সংকট নেই এবং হামাস পরিকল্পিতভাবে ‘ক্ষুধার কাহিনি’ ছড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে দুর্নাম করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী জানায়, জুলাই মাসে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়, যা নাকি ইসরায়েল-হামাস আলোচনার সময় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।

তবে মানবাধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, ২ মার্চ ইসরায়েলের ‘ক্ষুধানীতি’ শুরুর পর গাজায় অপুষ্টি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ওইদিন থেকে ৭৮ দিন সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখায় খাদ্য প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মে মাসের শেষ দিকে সীমিত আকারে ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়, কিন্তু আইডিএফের বিধিনিষেধের কারণে তা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে ২০ লাখ বাসিন্দার জন্য যথেষ্ট খাদ্য সরবরাহ সম্ভব হয়নি।

ত্রাণ সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, মার্চের পর থেকে গাজায় দুর্ভিক্ষের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির হার পাঁচ মাসে ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ শতাংশে পৌঁছেছে, বাজারে খাদ্যের দামও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০ জুলাই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো অপুষ্টিজনিত বড় সংখ্যক মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করে—প্রথমে ৮৬ জন, পরে আরও ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর আসে। আইডিএফ দাবি করে এই সংখ্যা অতিরঞ্জিত, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অবরোধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর এমন মৃত্যুহার বৃদ্ধি প্রত্যাশিত ছিল।

আইডিএফ তাদের দাবির পক্ষে কিছু ব্যক্তিগত উদাহরণ তুলে ধরে—যেমন ৪ বছরের আবদুল্লাহ হানু মুহাম্মদ আবু জরকা, যিনি জেনেটিক রোগে ভুগছিলেন, অথবা ২৭ বছরের করম খালেদ মুস্তাফা আল-জামাল, যিনি জন্ম থেকে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ছিলেন। সেনাবাহিনীর মতে, এদের মৃত্যু অপুষ্টিজনিত নয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন, পূর্ববর্তী অসুস্থ ব্যক্তিরাই প্রথমে খাদ্যাভাবের শিকার হয় এবং অপুষ্টি বিদ্যমান রোগকে আরও মারাত্মক করে তোলে।

ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েলের আসিল আবুরাস এবং ইসরায়েলের ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর রনি স্ত্রিয়ের উভয়েই বলেন—যদি কোনো অঞ্চল কয়েক মাস খাদ্যহীন অবস্থায় অবরুদ্ধ থাকে, মৃত্যু অনিবার্য। অপুষ্টি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

মানবিক সংস্থাগুলো গাজার বাস্তব পরিস্থিতির প্রমাণ দিচ্ছে মাঠপর্যায়ের তথ্য, শিশুদের বাহুর মাপ, খাদ্য সরবরাহের পরিসংখ্যান, হাসপাতাল ও বাজারের রিপোর্টের মাধ্যমে। বিশ্বস্বীকৃত সংস্থা যেমন আইপিসি, ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী—গাজার অধিকাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে, অনেকে ক্ষুধার চরম সীমা পেরিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাস্তবতা বোঝার জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক দলকে গাজায় সরেজমিন মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে—এটাই একমাত্র উপায়।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন