ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া, প্রধান মিত্রদের মধ্যে ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ১১ আগস্ট ২০২৫ ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন। হিলারি ওয়ার্ডহো/এএফপি/গেটি ইমেজেস
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সোমবার ঘোষণা করেছেন, তার দেশ সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স জানান, তার দেশও সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন বলেন, গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একাংশ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। যদি নিউজিল্যান্ডও যোগ দেয়, তবে ফাইভ আইস গোয়েন্দা জোটের পাঁচ দেশের মধ্যে চারটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে বিষয়টি জানিয়েছেন। রুবিও এর আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এমন স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী এবং হামাসকে সাহস জোগাতে পারে।
আলবানিজ জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে নিরস্ত্রীকরণ, সাধারণ নির্বাচন আয়োজন, বন্দি ও নিহতদের পরিবারের জন্য অর্থ প্রদান বন্ধ, শাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং সহিংসতা ও ঘৃণার উসকানি ঠেকাতে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধান। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙতে এবং গাজায় দুর্ভোগ ও ক্ষুধা শেষ করতে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই সর্বোত্তম পথ।
কানাডা ও ফ্রান্সও সেপ্টেম্বরে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য শর্ত দিয়েছে, ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হবে। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পশ্চিমা দেশগুলোর এ উদ্যোগকে লজ্জাজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ওং বলেন, বহুদিন ধরে অচলাবস্থায় থাকা শান্তি প্রক্রিয়ার শেষের অপেক্ষা করা অর্থহীন। এখনই দুই রাষ্ট্র সমাধানের গতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল শুক্রবার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে পারে। জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এ পরিকল্পনাকে আরেকটি ভয়াবহ বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছেন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের প্রধান রমেশ রাজাসিংহাম বলেছেন, গাজায় যা ঘটছে তা আর কেবল সম্ভাব্য খাদ্য সংকট নয়, বরং সরাসরি অনাহার। গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মারাত্মক অপুষ্টিতে ৯৮ শিশু মারা গেছে, এর মধ্যে জুলাই মাসের পর থেকে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের।
ইসরায়েলের গাজায় কার্যক্রম নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। লন্ডনে শনিবার বিক্ষোভে ৪৬০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত সপ্তাহে সিডনিতে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বন্দর সেতু পেরিয়ে মিছিল করেছেন, আয়োজকদের দাবি এই সংখ্যা তিন লাখের কাছাকাছি। এ মাসে আরও বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে।