ট্রাম্প বলেছেন, আগামী সপ্তাহে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি আগামী শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫ সালে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির কিছু শর্তের ইঙ্গিত দেন, যেখানে ভূমি বিনিময়ের কথাও ছিল।
ট্রাম্প শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী শুক্রবার আলাস্কায় বৈঠক করব, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভূমি হস্তান্তরের ধারণা নাকচ করে বলেছেন, ইউক্রেন সহযোগিতায় প্রস্তুত কিন্তু তারা দখলদারের কাছে জমি দেবে না।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসে সেই দিন যেদিন তিনি পুতিনকে শান্তিচুক্তির জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছিলেন, না হলে কঠোর অর্থনৈতিক শাস্তির হুমকি দিয়েছিলেন। মার্কিন ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে ট্রাম্প ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় নেতাদের জানিয়েছেন পুতিন যুদ্ধ থামানোর বিনিময়ে কিয়েভের কাছ থেকে বড় ধরনের ভূখণ্ড ছাড় চেয়েছেন।
বুধবার মস্কোয় ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে পুতিন প্রস্তাব দেন, ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল ও ২০১৪ সালে দখল হওয়া ক্রিমিয়া রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেবে। এই পরিকল্পনায় বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমা স্থির থাকবে, কিন্তু অন্যান্য বিষয় স্পষ্ট নয়।
ইউরোপের কিছু কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এটি পুতিনের কৌশল হতে পারে যাতে তিনি ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে পারেন, কিন্তু বিনিময়ে তেমন কিছু না দেন। এই প্রস্তাবের পরই ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনা করেন।
পুতিন শেষবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন ২০১৫ সালে, যখন তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন ছাড়া যে কোনো সিদ্ধান্তই শান্তির বিরুদ্ধে এবং তা কার্যকর হবে না। সবাইকে এমন একটি জীবন্ত শান্তি চাই যা মানুষ সম্মান করবে।
ক্রেমলিনের প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ আলাস্কার বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ভৌগোলিক দিক থেকে এটি যৌক্তিক কারণ রুশ প্রতিনিধিদল বেরিং প্রণালী ও সামুদ্রিক সীমান্ত পেরিয়ে সরাসরি সেখানে যেতে পারবে। তিনি জানান রাশিয়া ইতিমধ্যে ট্রাম্পকে পরবর্তী বৈঠকের জন্য রাশিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
গত দুই দিনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে অতিরিক্ত যোগাযোগ হয়েছে, যার মধ্যে উইটকফ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কথোপকথনও ছিল। উইটকফ শুক্রবার কয়েকজন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে প্রস্তাবের বিস্তারিত আলোচনা করেন।
প্রস্তাবে ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের বিষয়ে পরিষ্কার কিছু নেই, শুধু রাশিয়ার আক্রমণ থামানোর ইঙ্গিত আছে।
পুতিনের আরও দাবি, ইউক্রেন যেন কখনো ন্যাটোতে যোগ না দেয় এবং সেনাবাহিনীর আকার সীমিত রাখে। উইটকফ ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন, এই প্রস্তাব সঠিক পথে একটি পদক্ষেপ হতে পারে এবং যুদ্ধ থামলে বড় শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের এই পরিকল্পনায় রাজি করানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তা হবে কি না স্পষ্ট নয়। রাশিয়া যদি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক দখলে রাখে এমন কোনো চুক্তি হলে তা ভবিষ্যতে রাশিয়াকে আবার ইউক্রেনে আক্রমণে উৎসাহিত করতে পারে বলে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি পুতিনের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও শুক্রবার তিনি শান্তিচুক্তি নিয়ে আশাবাদী ছিলেন এবং যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ থামানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন বলে জানান। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইউরোপীয় নেতারা শান্তি চান, পুতিন শান্তি চান, জেলেনস্কিও শান্তি চান।
তিনি আরও বলেন, তার ধারণা এবার শান্তির সম্ভাবনা আছে। তবে ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়ার কাছে কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া বড় বাধা হতে পারে, কারণ সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বা গণভোট ছাড়া তা সম্ভব নয়।
ট্রাম্প এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ কমিয়ে বলেন, তিনি জেলেনস্কিকে সমঝোতার পথে এগোতে বলেছেন। তিনি বলেন, জেলেনস্কি কিছু বিষয়ে অনুমোদিত নন, কিন্তু দ্রুত সমাধান বের করতে হবে, কারণ আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।
সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, শুক্রবারের মধ্যে যুদ্ধ না থামালে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেবেন, কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি নরম সুরে বলেন সময়সীমা রাখা পুতিনের ওপর নির্ভর করবে।
সিএনএনের সাংবাদিক কাইটলান কলিন্সের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, পুতিনের জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের শর্ত নেই। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ছয়বার পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেছেন, বেশিরভাগই জি২০ ও এপেক সম্মেলনে।
তারা সর্বশেষ ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সবচেয়ে বিতর্কিত মুহূর্তগুলির একটি ছিল। পুতিন সর্বশেষ কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন ২০২১ সালের জুনে জেনেভায়, যখন তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন।