Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় ভারতের শেয়ারবাজারে বড় পতন

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় ভারতের শেয়ারবাজারে বড় পতন

ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস নেমেছে। নিফটি ৫০ এবং বিএসই সেনসেক্স শুক্রবার লাল চিহ্নে শেষ হয়েছে। দিনের মধ্যে নিফটি ৫০ নেমে যায় ২৪৪০০–এর নিচে এবং শেষে অবস্থান করে ২৪৩৬৩ দশমিক ৩০–এ, যা আগের দিনের তুলনায় ২৩৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। সেনসেক্স দিনের মধ্যে ৮০০ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে শেষ হয় ৭৯৮৫৭ দশমিক ৭৯–এ, যা ৭৬৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ কম।

টানা ছয় সপ্তাহ ধরে সূচকের পতন চলেছে। বাজারে একাধিক কারণে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব দুর্বল হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে ভারতের রপ্তানি পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করেছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ার বিক্রি করছেন। করপোরেট খাতের হতাশাজনক প্রথম প্রান্তিকের ফলাফলও চাপ বাড়িয়েছে।

গিওজিত ইনভেস্টমেন্টসের গবেষণা প্রধান বিনোদ নাইয়ার বলেন, ভারতীয় বাজার তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। মার্কিন শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নেট বিক্রেতা হিসেবে চাপ বাড়িয়েছে। রিয়েল এস্টেট ও ধাতু খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্যও প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের তেল বাণিজ্যের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর এত বড় শুল্ক বৃদ্ধির নজির নেই। রপ্তানিনির্ভর খাত যেমন বস্ত্র, রাসায়নিক, রত্ন ও গয়না, সামুদ্রিক খাদ্য এবং অটো পার্টস ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমকেই গ্লোবালের সেশাদ্রি সেন বলেন, গোকালদাস, কিটেক্স, ক্যামলিন, আরতি, আতুল, বিএইচএফসি, সুপ্রজিত এবং সোনা বিএলডব্লিউ–এর মতো সংস্থাগুলোর সরাসরি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মরগান স্ট্যানলি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক দ্বিগুণ করায় ভারতীয় সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি খাতে ২৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। প্রতিযোগী ইকুয়েডরের তুলনায় ভারত বড় অসুবিধায় পড়বে। অনেক বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারক যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার তৈরি বন্ধ করেছে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। রপ্তানি কমা, কর্মসংস্থান হারানো এবং সামগ্রিক অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি দশ দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। শুধু ৭ আগস্টই শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৪৯৯৭ দশমিক ১৯ কোটি টাকার। আগস্ট মাসে মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৫৯৫০ কোটির বেশি। জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার তুলে নেওয়া হয়েছে।

প্রথম প্রান্তিকের করপোরেট ফলাফলও বাজারকে কোনো সহায়তা দিতে পারেনি। নিফটি আইটি সূচক গত এক মাসে ১০ শতাংশ কমেছে। নিফটি ব্যাংক স্থির থেকেছে। শীর্ষ ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ঋণের চাহিদা ও অর্থনৈতিক গতি কমার ইঙ্গিত দেয়।

মার্কিন ডলারের সূচক গত সপ্তাহে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক অগ্রগতি দেখিয়েছে। এতে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো থেকে মূলধন বেরিয়ে যাওয়া ও বৈদেশিক ঋণের খরচ বেড়ে গেছে। শুক্রবার সূচক দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ১৮৮–এ, যা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে বাজারে কিছুটা সহায়তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গিওজিত ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান বাজার কৌশলবিদ আনন্দ জেমস বলেন, নিফটি মূল সমর্থন স্তরের কাছাকাছি থেমেছে, যা বাড়তির সম্ভাবনা দেখায়। স্বল্পমেয়াদে ২৪৬৭০ থেকে ২৪৭১৭ পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী গতি হতে পারে। বড় লক্ষ্যমাত্রা ২৪৮৫০ থেকে ২৫০০০ এবং নিচের সমর্থন ২৪৫৪৮–এ থাকতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া 

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন