Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

তীব্র গরম

শত বছরের রেকর্ড ভাঙল জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

শত বছরের রেকর্ড ভাঙল জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া

তীব্র গরমে টোকিও শহরে একটি হাতপাখা দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন এক নারী, ১৭ জুলাই ২০২৫। ছবি: কিম কিয়ং-হুন/রয়টার্স

জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থায় আছে। দুই দেশে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে অসুস্থ মানুষের ভিড় বেড়েছে। কর্তৃপক্ষ সবাইকে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, জুলাই মাসে একটানা ২২ রাত রাজধানী সিওলে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। একে বলা হয় ‘ট্রপিক্যাল নাইট’। আধুনিক আবহাওয়া রেকর্ড রাখা শুরু হয়েছিল ১৯০৭ সালে। এর পর থেকে এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন গরম রাত কখনো দেখা যায়নি।

সেই সঙ্গে বুধবার রাতে সিওলে জুলাই মাসের ইতিহাসে সবচেয়ে গরম রাত রেকর্ড হয়, যেখানে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি। সংবাদমাধ্যম বলছে, বৃহস্পতিবার আবার নতুন রেকর্ড হতে পারে।

সিওলে এই তীব্র গরম আগামী দিনেও থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সিওলের পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান ইউন কি হান বলেন, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় গরম বাতাস এবার স্বাভাবিকের চেয়ে আগেই কোরিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, একদিন গরম পড়লে সেটা কিছুক্ষণ থেকে কমে যায়। কিন্তু টানা কয়েকদিন ধরে গরম থাকলে সেটার প্রভাব জমে থেকে যায়, প্রতিদিন গরম আরও বাড়তে থাকে।

জাপানেও গরম রেকর্ড ভেঙেছে। বুধবার দেশটির হিয়োগো অঞ্চলের তাম্বা শহরে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। এটি জাপানের সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। মানুষকে ঘরে থাকার, প্রচুর পানি পান করার এবং শীতাতপ যন্ত্র ও ফ্যান ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দেশজুড়ে বুধবার ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ছিল ২৭১টি স্থানে। এর মধ্যে ৩৯টি স্থানে নতুন রেকর্ড হয়েছে। আগের রেকর্ড ছিল ২০২০ সালের আগস্টে শিজুওকার হামামাতসু শহরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালের জুলাইতে টোকিওর কাছের কুমাগায়ায় একই রকম তাপমাত্রা।

এই তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বৃদ্ধরা। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন যাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে গরম সন্দেহ করা হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা তিন গুণ বেশি। তথ্য দিয়েছে কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা।

জাপানে ২১ জুলাই পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১০ হাজার ৮০৪ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি বয়স ৬৪ বছরের বেশি। এই সময়ে ১৬ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।

বিগত কয়েক বছর ধরে জাপানে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু সংকটের কারণে আবহাওয়ার ধরন বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের ফলে গরমের প্রকোপ বেশি দেখা দিচ্ছে।

গত বছর জাপানে রেকর্ড সর্বোচ্চ গ্রীষ্ম ছিল, যার সঙ্গে এবছরের গ্রীষ্মের গরম পাল্লা দিচ্ছে। এরপরেই এসেছিল ১২৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ শরৎকাল।

এই গরমের প্রভাব বিদেশি পর্যটকদের ওপরও পড়ছে। বুধবার কিয়োটো শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে, যা প্রথমবারের মতো রেকর্ড হয়েছে। গত বছর এই শহরে ১ কোটি ৮৮ লাখ বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন।

বিশ্বজুড়ে মানুষের কারণে তৈরি হওয়া জলবায়ু বিপর্যয় এমন চরম আবহাওয়া তৈরি করছে। তাপপ্রবাহ, বন্যা, দাবানল—সবকিছুর প্রকোপ বাড়ছে। এর মধ্যে জাপান আর কোরিয়ার এই অস্বাভাবিক গরম বর্তমান বৈশ্বিক সংকটেরই প্রতিফলন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন