Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার উপকূলে শক্তিশালী ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প. জাপান, হাওয়াইসহ প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে সুনামি সতর্কতা

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৯ এএম

রাশিয়ার উপকূলে শক্তিশালী ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প. জাপান, হাওয়াইসহ প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে সুনামি সতর্কতা

জাপানের উপকূলে ঢেউ আছড়ে পড়ছে। বুধবার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে ৮.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর মিয়াগির শিওগামা শহরসহ জাপানের উপকূলে ৩ মিটার পর্যন্ত সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। ছবি: দ্য আসাহি শিম্বুন/গেটি ইমেজেস

রাশিয়ার দুর্লভ জনবসতিপূর্ণ পূর্ব উপকূলে একটি শক্তিশালী ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এটি আধুনিক ইতিহাসের ষষ্ঠ শক্তিশালীতম ভূমিকম্পগুলোর একটি। এই ভূমিকম্পের পরপরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাওয়াই, জাপান, রাশিয়া এবং আমেরিকার পশ্চিম উপকূলজুড়ে উপকূলবাসীদের সরে যেতে বলা হয়েছে।

হাওয়াইয়ের গভর্নর জশ গ্রিন জানান, সুনামির সম্ভাব্য ঢেউয়ের উচ্চতা ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি একক কোনো সৈকতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো দ্বীপমালা ঘিরে আঘাত হানতে পারে। তিনি উপকূলবর্তী এলাকাবাসীদের দ্রুত উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ভাষায়, "এটি কেবল এক সৈকতে নয়, দ্বীপগুলোকে ঘিরে আঘাত হানবে।"

রাশিয়ার সেভেরো-কুরিলস্ক শহরে ইতোমধ্যে তিনটি ঢেউ আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে শেষটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। ভিডিওতে দেখা গেছে, পানি শহরের বিল্ডিংয়ের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, কিছু ভবন সরেও গেছে। বন্দরের জাহাজগুলো ছিঁড়ে স্রোতের টানে ভেসে গেছে এবং বড় বড় কনটেইনার ও ধ্বংসাবশেষ বয়ে নিয়ে গেছে। সাখালিন অঞ্চলের গভর্নর ভ্যালেরি লিমারেঙ্কো জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদে উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন এবং আরও ঢেউয়ের আশঙ্কা কেটে না যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন।

জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে প্রথম ঢেউ রেকর্ড হয়েছে যা মাত্র ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার ছিল। যদিও প্রাথমিকভাবে ৩ মিটার পর্যন্ত ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ঢেউ সবসময় বড় হয় না, বরং দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউ আরও শক্তিশালী হতে পারে।

দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলো যেমন মেক্সিকো, ইকুয়েডর, চিলি ও পেরুও সতর্কতা জারি করেছে। ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপে ১.৪ মিটার ঢেউয়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। মেক্সিকো থেকে শুরু করে পানামা পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো সতর্কতার আওতায় আনা হয়েছে।

হাওয়াইয়ে ইতোমধ্যে হিলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, যাতে করে স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহজ হয়। ওহু দ্বীপের ডিজনি রিসোর্ট অতিথিদের নিচতলার কক্ষগুলো ছেড়ে উপরের তলায় উঠে যেতে বলা হয়েছে। হাওয়াইয়ের রাজধানী হনলুলুতে যানজট দেখা গেছে এবং অনেক মানুষ রাস্তায় জটলা বেঁধে অপেক্ষা করছে।

মার্কিন জাতীয় রক্ষী বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং দুটি মেডিকেল হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। হাওয়াইয়ের প্রতিটি কাউন্টিতে সৈন্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেন প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তা দেওয়া যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরে, বিশেষ করে ক্রিসেন্ট সিটি এবং সান ফ্রান্সিসকো উপকূলে ২ থেকে ৫ ফুট ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ১৯৬৪ সালের একটি সুনামিতে এই এলাকায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেই স্মৃতি এখনও সতর্ক করে রাখে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র বলছে, ঢেউয়ের শক্তি নির্ভর করে ভূমিকম্পে সাগরের নিচে কিভাবে পানি সরে গেছে তার ওপর। ভূমিকম্পের ধাক্কা পানির নিচে যে দিকে বেশি হয়েছে, সে দিকেই শক্তিশালী ঢেউ ছুটে যায়। একারণে হাওয়াই ও দক্ষিণ আমেরিকায় ঢেউ বেশি হতে পারে, যদিও তারা ভূমিকম্প কেন্দ্র থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ফরাসি পলিনেশিয়া, গুয়াম এবং অন্যান্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এখন হুমকির মুখে আছে। ইতোমধ্যে মার্কিন পশ্চিম উপকূল, আলাস্কার অ্যালিউশিয়ান দ্বীপমালা এবং হাওয়াইকে সরাসরি সতর্ক করা হয়েছে।

সুনামির ঢেউ গড়ে তিন থেকে নয় ফুট উচ্চতার হতে পারে এবং কখনও কখনও আরও বেশি হতে পারে। এ সময় উপকূলের পানি আচমকা সরে গিয়ে আবার দ্রুত ফিরে আসতে পারে। ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসা ধ্বংসাবশেষ সুনামির ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, "tsunami.gov" থেকে সর্বশেষ তথ্য নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, "জাপানও এর পথে রয়েছে। সজাগ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।"

উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য আপাতত কোনো সুনামির হুমকি নেই বলে দেশদুটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। তবে অস্বাভাবিক ঢেউ ও স্রোতের কারণে সাঁতারু, জেলে এবং উপকূলবাসীদের সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবে সতর্কতা ও প্রস্তুতির মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এখনই উপকূল ছেড়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে সকল প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দাদের।

সূত্র: সিএনএন

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন