Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তবে জাতিসংঘ বলেছে, এই সহায়তা যথেষ্ট নয়

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১১:২৫ এএম

ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তবে জাতিসংঘ বলেছে, এই সহায়তা যথেষ্ট নয়

ইসরায়েল কিছু শর্ত শিথিল করে গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করতে দিয়েছে। তবে জাতিসংঘ বলেছে, এই সহায়তা চরম ক্ষুধা ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, নতুন করে আরও ছয়জন ফিলিস্তিনি—এর মধ্যে দুই শিশু—ক্ষুধায় মারা গেছে। এতে করে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় অভুক্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৩ জনে।

এমন অবস্থায় ইসরায়েল দাবি করছে, তারা গাজায় প্রতিদিন ‘মানবিক বিরতি’ দিচ্ছে যাতে ত্রাণ প্রবেশ করতে পারে। তবু গত কয়েকদিনে তাদের হামলায় অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৩৪ জন ত্রাণ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।

ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৭৩৩ জনে, আহত হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৭ জন। অন্যদিকে হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায় মারা যায় প্রায় ১ হাজার ১৩৯ জন, এবং ২০০-র বেশি মানুষকে বন্দি করা হয়।

ইসরায়েল এখন গাজার কিছু জনবহুল এলাকায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত ‘কৌশলগত বিরতি’ দিচ্ছে বলে জানায়। এতে গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ ও মুয়াসি এলাকায় কিছু ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে। তবে এই বিরতি শুধু নির্দিষ্ট এলাকায়, অন্য অংশে যুদ্ধ চলছে পুরোদমে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, খুব সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা যেকোনো পথে যাই, ন্যূনতম পরিমাণে ত্রাণ তো দিতেই হবে।”

এই ঘোষণা নিয়ে ফিলিস্তিনিরা সতর্ক। গাজার বাসিন্দা গণিত শিক্ষক ও সাত সন্তানের বাবা আইয়াদ আল-বান্না বলেন, “মানবিক করিডোর খুলে ত্রাণ প্রবেশ করিয়ে কিছুই পাল্টাবে না। কারণ দুর্ভিক্ষ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যা কল্পনারও বাইরে।”

তিনি বলেন, বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। শুধু ময়দার দাম কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে পুষ্টিকর খাদ্যের তীব্র সংকট, কোনো নতুন ওষুধও আসেনি।

গাজার উত্তরের শিক্ষাবিদ হিকমত আল-মাসরি বলেন, “আকাশপথে ত্রাণ ফেলা আমাদের অপমান। যুদ্ধের শুরুতেই এমন ত্রাণ ফেলার কারণে অনেকে মারা গেছে।”

রবিবার এমনই এক এয়ারড্রপে ত্রাণের বাক্স পড়ে আহত হয়েছেন ১০ জন।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ৯০ হাজার নারী ও শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের চিকিৎসা এখনই শুরু না হলে অনেকের শরীর আর সাড়া দেবে না। সংস্থাটি বলেছে, তারা ২১ লাখ মানুষকে তিন মাস খাওয়ানোর মতো খাদ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছে, তবে তার জন্য যুদ্ধবিরতি জরুরি।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, ইসরায়েল কিছু নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছে এবং এক সপ্তাহের জন্য সহায়তা বাড়ানোর কথা বলেছে। তবে তিনি বলেন, “এই পরিমাণ সহায়তা এখনও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও স্বাস্থ্য সংকট ঠেকাতে যথেষ্ট নয়।”

গাজায় ঢোকার জন্য রবিবার সকালে মিশরীয় ত্রাণ ট্রাক চলতে শুরু করে, জর্ডানের পুলিশ একটি ভিডিও প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়, সাহায্যবাহী ট্রাক গাজার দিকে এগোচ্ছে।

গাজায় অভুক্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। রবিবার সকালে ১০ বছরের শিশু নূর আবু সেলাআ ক্ষুধায় মারা যায়। ফাঁপা পেট, হাড় বেরিয়ে থাকা শিশুর মৃতদেহের ছবি বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

আল-আকসা ও আল-আওদা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়ে অন্তত ১৭ জনকে হত্যা করেছে, যাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। তিনি বলেন, “খাদ্য আটকে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। মার্চ মাসে ইসরায়েল এই সিদ্ধান্ত নেয়।”

অক্সফাম বলেছে, আংশিক সহায়তা দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। পুরো গাজায় নিরবিচারে ও নিরাপদে ত্রাণ পৌঁছাতে হলে সব সীমান্ত খুলে দিতে হবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে।

রবিবার গাজার উপকূল থেকে ৬০ মাইল দূরে ‘হান্ডালা’ নামের একটি সাহায্যবাহী জাহাজকে থামিয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী এবং যাত্রীদের গ্রেপ্তার করে।

ইসরায়েল গাজায় দুর্ভিক্ষ থাকার কথা অস্বীকার করে বলছে, জাতিসংঘ যথাযথভাবে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থ। তবে জাতিসংঘ বলেছে, ত্রাণ প্রবেশের জন্য তাদের বেশিরভাগ অনুরোধই ইসরায়েল অস্বীকার করেছে।

প্রথমে আড়াই মাস ত্রাণ পুরোপুরি বন্ধ রাখার পর ইসরায়েল ধীরে ধীরে প্রবেশের অনুমতি দিতে শুরু করে। তবে গড়পড়তা দিনে ৭০টি ট্রাক প্রবেশ করছে, যেখানে প্রয়োজন ৫০০টির বেশি।

গত কয়েক সপ্তাহে শুধু সাহায্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ, যার বেশিরভাগই ইউএস নেতৃত্বাধীন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে।

ইসরায়েলের সর্বশেষ মানবিক ঘোষণার দিনই তারা আবার গাজায় বিমান হামলা চালায়, যাতে নিহত হন ৩৮ জন, এর মধ্যে ২৩ জন ত্রাণ নিতে গিয়েছিলেন। দক্ষিণ গাজায় একটি তাঁবুতে হামলায় নিহত হন ৯ জন, যাঁদের মধ্যে তিনটি শিশু ছিল।

গাজা সিটিতে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির হার তিন গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে একটি দাতব্য সংস্থা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রবিবার তাদের আরও দুই সৈন্য নিহত হয়েছে, যার ফলে এ পর্যন্ত তাদের মৃত সেনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯৮ জনে।

এই ‘মানবিক বিরতি’ ঘোষণার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত শুক্রবার কাতারে চলমান আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নিজেদের প্রতিনিধি দল ফিরিয়ে নেয়। তারা হামাসকে দায়ী করে বলছে, হামাস আলোচনায় আন্তরিক নয়। তবে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, এটি ছিল কেবল কৌশলগত পদক্ষেপ।

গাজা থেকে নির্বাসিত হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া রবিবার বলেন, “যুদ্ধ ও অবরোধ চলতে থাকলে কোনো যুদ্ধবিরতির আলোচনা অর্থহীন।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে প্রায় ২১ মাসে নিহত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি।

সূত্র: আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন