Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যুদ্ধের শঙ্কায় লাখো মানুষ সরিয়ে নিয়েছে থাইল্যান্ড

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০১:০৯ পিএম

সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যুদ্ধের শঙ্কায় লাখো মানুষ সরিয়ে নিয়েছে থাইল্যান্ড

থাই ও কম্বোডিয়ান সেনাদের সংঘর্ষের পর ঘর ছেড়ে পালানো থাই বাসিন্দারা সুরিন প্রদেশের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ছবি: সকচাই লালিত/এপি

থাইল্যান্ড জানিয়েছে, দেশটি কম্বোডিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। শুক্রবার থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ভেচায়াচাই বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ দ্রুত যুদ্ধের দিকে গড়িয়ে যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সংঘর্ষ শুক্রবার ভোর থেকেই আবার শুরু হয় বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী। দুই দেশের মধ্যে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এটি পরিণত হয়েছে।

থাই সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিতর্কিত সীমান্তজুড়ে বারোটি স্থানে লড়াই হয়েছে, যা আগের দিনের সংঘর্ষের ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে গেছে।

বাংককে সাংবাদিকদের ফুমথাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমেই আরও গুরুতর হয়ে উঠছে এবং যুদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, এখনো লড়াই চলছে, ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা কেবল আমাদের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করছি।

থাইল্যান্ড জানিয়েছে, সীমান্তের চারটি প্রদেশ থেকে এক লাখ আটত্রিশ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে আট বছরের একটি শিশুও রয়েছে।

কম্বোডিয়ার জাতীয় সরকার এখনো হতাহতের বিস্তারিত জানায়নি। তবে ওদ্দার মিনচে প্রদেশের এক স্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানে একজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে পাঁচজন এবং দেড় হাজার পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে উবোন রাতচাথানি ও সুরিন প্রদেশে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, কম্বোডিয়ার বাহিনী ভারী অস্ত্র, কামান ও রকেট ছুঁড়ছে। এর জবাবে থাই বাহিনী পরিস্থিতি অনুযায়ী পাল্টা গুলি চালাচ্ছে।

দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথম গুলি চালানোর অভিযোগ এনেছে।

কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ৮১৭ কিলোমিটার সীমান্তের কিছু অংশ নিয়ে বহু দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। উপনিবেশ আমলের মানচিত্র নিয়ে মতবিরোধ থেকেই বিরোধের সূত্রপাত।

এ বছরের মে মাসে একবার ছোট পরিসরে সংঘর্ষ হয়, যাতে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। এরপর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।

বুধবার পাঁচজন থাই সেনা ল্যান্ডমাইনে আহত হন, যা এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ঘটনা। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, সম্প্রতি ওই এলাকায় মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। কম্বোডিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ আরও বেড়ে যায়। থাইল্যান্ড বলেছে, কম্বোডিয়া রকেট ও কামান হামলা চালিয়েছে, যার কিছু বেসামরিক এলাকায় পড়েছে। পাল্টা হিসেবে থাই বিমানবাহিনী কম্বোডিয়ায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

এ বিরোধে উসকানি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী মনোভাব ও দুই দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। কম্বোডিয়ার সাবেক শাসক হুন সেন, যিনি প্রায় চার দশক দেশ চালিয়ে ২০২৩ সালে ক্ষমতা ছেড়ে ছেলে হুন মানেতকে দেন, এবং থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা, যাঁর মেয়ে পায়েতংতার্ন ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হন – তাঁদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে থাকসিন সামাজিক মাধ্যমে বলেন, যেসব দেশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি, তবে এখনই সেই উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনীকে কাজ করতে দিতে হবে, হুন সেনকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।”

এই বক্তব্যের জবাবে হুন সেন ফেসবুকে বলেন, থাকসিনের বক্তব্য যুদ্ধের ভাষায় বলা হয়েছে এবং এটি প্রমাণ করে থাইল্যান্ড কেমন আগ্রাসী মনোভাব নিয়েছে। তিনি বলেন, হুন সেনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে থাকসিন যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছেন, যার ফল ভোগ করবে সাধারণ মানুষ।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার এ বিষয়ে বৈঠকে বসার কথা। যুক্তরাষ্ট্র, যেটি দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডের মিত্র, এক বিবৃতিতে বলেছে, সংঘর্ষ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট বলেছেন, সীমান্তের সহিংসতা এবং বেসামরিক মানুষের ক্ষতির খবরে তারা গভীর উদ্বেগে আছেন। তিনি বলেন, যেন দ্রুত সংঘর্ষ বন্ধ হয়, সাধারণ মানুষ নিরাপদে থাকেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো যায়।

চীনও বলেছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং নিজেদের মতো করে শান্তি ও আলোচনার পথে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

ফুমথাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের বাইরের এলাকায় লক্ষ্যহীন ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। তিনি বলেন, “আমরা এখনো শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। আলোচনা হওয়া দরকার। কিন্তু আমরা উসকানির শিকার হয়েছি, তাই আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়েছি।”

থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন জানিয়েছেন, সুরিন প্রদেশে একটি হাসপাতালে গোলা পড়েছে, যা তাঁর মতে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের কিছু অঞ্চলে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন