Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আল জাজিরার মতামত প্রতিবেদন

হ্যাঁ, নিউ ইয়র্ক টাইমস এখন গণহত্যার পক্ষে সাংবাদিকতা করছে

Icon

বেলেন ফার্নান্দেস

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১০:২৩ এএম

হ্যাঁ, নিউ ইয়র্ক টাইমস এখন গণহত্যার পক্ষে সাংবাদিকতা করছে

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের জিকিম সীমান্ত দিয়ে সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ রবিবার (২০ জুলাই ২০২৫) গাজা সিটির শিফা হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে \[ছবি: জেহাদ আলশরাফি / এপি]

নিউ ইয়র্ক টাইমস–এ প্রকাশিত একটি মতামত লেখায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিত কলামিস্ট ব্রেট স্টিফেন্স দাবি করেছেন—“গাজায় গণহত্যা হচ্ছে না।” এমন দাবি করে তিনি যেন ইসরায়েলকে বড় এক উপকার করলেন।

লেখাটির শুরুতেই স্টিফেন্স প্রশ্ন তুলেছেন, যদি সত্যিই ইসরায়েল গাজার সব মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, তাহলে এত কম মানুষ মারা গেল কেন? কেন আরও বেশি পরিকল্পিতভাবে ও ব্যাপকভাবে মানুষ মারা হলো না?

এই প্রশ্নে অনেকেই ক্ষুব্ধ। কারণ, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ১৭ হাজার ৪০০ শিশু নিহত হয়েছে, আর পুরো মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারের কাছাকাছি। অনেক গবেষক মনে করছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি—ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

স্টিফেন্স আরও বলেন, তিনি কোনো প্রমাণ দেখেন না যে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তার কথায়, এসব বরং “ভুল জায়গায় হামলা” বা “অসাবধানতা”।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হাসপাতাল, স্কুল, অ্যাম্বুলেন্সে বারবার হামলা হলে তা আর কাকতালীয় থাকে না। ১৩ মাসে ১৭ হাজারের বেশি শিশু মারা গেলে তা "ভুলক্রমে" ঘটে না।

শুধু বোমা নয়, ক্ষুধার্ত করে মেরে ফেলা–এটিও গণহত্যারই একটি রূপ। গতকাল গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, কমপক্ষে ১৫ জন মানুষ, তার মধ্যে ৪টি শিশু, না খেয়ে মারা গেছে। মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন খাদ্য সহায়তার খোঁজ করতে গিয়ে। এই সহায়তা কেন্দ্রে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষ জড়ো হন, তারপর সেখানে চলে গুলি, চালানো হয় বোমা।

স্টিফেন্স অবশ্য স্বীকার করেন, গাজায় খাবার বিতরণ ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল। তবে তাঁর মতে, ভুল লক্ষ্যবস্তুতে বোমা পড়া, উচ্ছৃঙ্খল সেনার আচরণ, কিংবা প্রতিহিংসাপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য গণহত্যার প্রমাণ নয়।

তিনি বারবার ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহারের বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করান, যেন শব্দটি যেন “অতিরিক্ত ব্যবহারে মূল্যহীন না হয়ে যায়”।

কিন্তু ইতিহাস বলে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই গণহত্যার বীজ রোপিত হয়েছিল। সেই সময় তিন-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিনিকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। শত শত গ্রাম ধ্বংস করা হয়। হাজারো মানুষ নিহত হয়।

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেইয়ার বিখ্যাত সেই উক্তি—“প্যালেস্টাইনি বলে কিছু ছিল না”—আজও এই পরিকল্পিত মুছে ফেলার রাজনীতির প্রতীক।

সেই ইতিহাস আর বর্তমানের নিষ্ঠুর বাস্তবতা মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ইসরায়েলের এই দমননীতি কোনো বিচ্ছিন্ন সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং একটি চলমান ব্যবস্থা—যার উদ্দেশ্য একটা জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া।

ব্রেট স্টিফেন্স এমন সময় এই লেখাটি লিখলেন, যখন গাজা রক্তে ভাসছে, এবং বিশ্বব্যাপী মানুষ এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে। তাঁর লেখা শুধু বিভ্রান্তি নয়, বরং ইতিহাসকে অস্বীকার করার এক নীরব সহিংসতা।

বেলেন ফার্নান্দেস একজন সাংবাদিক ও লেখক, যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সমসাময়িক রাজনীতি, অভিবাসন এবং সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি ২০২৫ সালে প্রকাশিত The Darién Gap: A Reporter’s Journey through the Deadly Crossroads of the Americas (Rutgers University Press) বইয়ের লেখক। তিনি The New York Times, The London Review of Books blog, The Baffler, Current Affairs, এবং Middle East Eye-সহ বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার লেখায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, সাংবাদিকতার ভূমিকা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার কাঠামো সম্পর্কে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ উঠে আসে।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন