Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সাম্প্রতিক বন্যায় পাকিস্তানে অন্তত ১৮০ জনের মৃত্যু, আহত ৫০০-এর বেশি

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১১:২০ এএম

সাম্প্রতিক বন্যায় পাকিস্তানে অন্তত ১৮০ জনের মৃত্যু, আহত ৫০০-এর বেশি

লাহোরে ভারী বৃষ্টির পর জলমগ্ন রাস্তায় ঠেলাগাড়ি টেনে জীবনযুদ্ধে এক বিক্রেতা

পাকিস্তান জুড়ে  বর্ষাকাল চলছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় তা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি তীব্র হয়েছে। এই অবস্থায় জাতীয় ও প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আগামী দিনে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এনডিএমএ জানিয়েছে, জুলাই মাসের শুরুতে অস্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ শনিবার জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিন্ধু প্রদেশে আরও বৃষ্টি, দমকা হাওয়া এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে করাচি, হায়দরাবাদ, সুক্কুর, ঠাট্টা, বাদিন, লারকানা, জ্যাকোবাবাদ, নবাবশাহ ও মিরপুরখাসে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি।

এনডিএমএর জরুরি অপারেশন কেন্দ্র এনইওসি নিম্নভূমি অঞ্চলে নগর বন্যার আশঙ্কা জানিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। নাগরিকদের বলা হয়েছে প্রবল বৃষ্টির সময় ঘরে থাকতে, দুর্বল এলাকায় না যেতে এবং বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাটি পরিষ্কার রাখতে।

পাঞ্জাব প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ থেকে শুরু হচ্ছে বর্ষার চতুর্থ ধাপ। আগামী ২০ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত পাঞ্জাবের বেশিরভাগ জেলায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হবে।

রাওয়ালপিন্ডি, মুর্রি, গালিয়াত, অ্যাটক, চকওয়াল, মান্ডি বহাউদ্দিন, হাফিজাবাদ, গুজরাট, ঝেলাম, গুজরানওয়ালায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময়ে লাহোর, ফয়সালাবাদ, শিয়ালকোট, নারোয়াল, টোবা টেক সিং, ঝাং, সারগোধা, মিয়ানওয়ালি, মুলতান, ডেরা ঘাজি খান, বাহাওয়ালপুর ও বাহাওয়ালনগরেও বৃষ্টি হতে পারে।

পিডিএমএ সমস্ত প্রধান নদী ও সংযুক্ত জলধারায় উচ্চ-স্তরের বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। ২২ জুলাই থেকে একটি নতুন আবহাওয়া পদ্ধতির কারণে নদীগুলোতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ফ্লাড ফরকাস্টিং বিভাগ জানিয়েছে, চেনাব, ঝেলাম, রাভি, শতলজ ও সিন্ধু নদী এবং তাদের উপনদী ও নিম্নভূমি এলাকায় পানির প্রবাহ বাড়বে এবং তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

খাইবার পাখতুনখাওয়ায় বর্ষা এবং হিমবাহ গলনের কারণে হঠাৎ বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে কাবুল, সোয়াত, পাঞ্জকোরা, বারা এবং কালপানি নালার এলাকায়। এনডিএমএ জানিয়েছে, পার্বত্য এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

ইসলামাবাদ ও মধ্য পাঞ্জাবে বর্ষার তীব্র স্রোতের কারণে আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যার ফলে নগর বন্যার ঝুঁকি থাকবে।

সম্প্রতি বৃষ্টির ফলে পানি বেড়ে যাওয়ায় রাওয়াল বাঁধ তার সর্বোচ্চ ১,৭৪৮ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। রোববার সকাল ছয়টায় বাঁধের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে স্তর ১,৭৪৬ ফুটে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আশপাশের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

অ্যাটকে বৃষ্টিজনিত তিনটি মৃত্যুর খবর এসেছে। ছয় বছরের ফাতিমা আমানপুরে একটি পানির খালে পড়ে ডুবে যায়। ভাট্টারে বারো বছরের মোহাম্মদ সুলেমানের বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়। ঘোরঘুশতিতে পাঁচ বছরের উমর আয়ুব বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়।

এদিকে বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন একটি ঘটনায়, মিরজা গ্রামে ইনায়াত রহমান নামে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি মসজিদে যাওয়ার পথে এক রেস্তোরাঁয় লুকিয়ে থাকা দুজন তার ওপর গুলি চালায়।

পাঞ্জাবে ২৫ জুন থেকে এখন পর্যন্ত রেসকিউ ১১২২ সংস্থা ১,৫৯৪ জনকে উদ্ধার করেছে। জরুরি সেবাবিষয়ক সচিব ড. রিজওয়ান নাসের জানিয়েছেন, এদের মধ্যে ৪৪৯ জন গুরুতর আহত ছিলেন, যাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার অধিকাংশই পুরনো ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার কারণে।

উদ্ধার অভিযানে ৪৪৪ জনকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ১০০টির বেশি নৌকা ও ৩১২ জন উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে লাহোরে, ২৭ জন। এরপর ফয়সালাবাদে ১৫ জন, শেখুপুরায় ১১ জন এবং রাওয়ালপিন্ডিতে ১০ জন মারা গেছেন।

২৫ জুন থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬৯টি বাড়ি ভাঙার ঘটনা, ২৩টি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু, ৬২টি বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনা ও আরও অনেক জরুরি পরিস্থিতি ঘটেছে বলে জানান ড. নাসের। তিনি জনগণকে ছাদ পরীক্ষা করতে, বৃষ্টির সময় বৈদ্যুতিক খুঁটির সংস্পর্শ এড়াতে এবং ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিতে আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবিলম্বে মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুনরায় চালু করা হয়েছে পিন্ড দাদন খান-ঝেলাম রোড, মাট্টা খুরদ রোড, এবং চকওয়াল-কাল্লার কাহার সড়ক। রাওয়ালপিন্ডিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্রলি ধোক ব্রিজ ও ধোক পরওয়ানা রোডও খুলে দেওয়া হয়েছে।

চকওয়ালে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে যান। তিনি পাঁচটি মৃত্যুর জন্য পরিবারপ্রতি ৫০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। জেলায় গত সপ্তাহে রেকর্ড ৪৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। জেলা কমপ্লেক্সে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সারাদিন-রাত পরিশ্রম করা কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি ক্ষয়প্রাপ্ত বাড়ি থেকে পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং চকওয়াল-সোহাওয়া রোডে দুম্মানে ক্ষয়প্রাপ্ত স্থানে একটি স্টিলের সেতু স্থাপন করতে বলেন। একইসঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নির্মিত ছোট ছোট বাঁধগুলোর প্রতিবেদন চেয়েছেন, যেগুলো চকওয়াল ও তালাগংয়ে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।

পাঞ্জাব সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বেসরকারি আবাসিক এলাকাগুলোর নালা পরিষ্কার রাখতে হবে, রাওয়ালপিন্ডির নাল্লা লেই এলাকায় আধুনিক সতর্ক সংকেত ব্যবস্থা বসাতে হবে এবং রাভি, শতলজ ও বিয়াস নদীর পাশে থাকা মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে।

এনডিএমএর চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইনাম হায়দার মালিক জানিয়েছেন, এবারকার বর্ষাকাল অস্বাভাবিকভাবে এক মাস আগেই জুলাইয়ে শুরু হয়েছে এবং এটি গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি তীব্র। তিনি বলেন, এনডিএমএ চার মাস আগেই এর পূর্বাভাস দিয়েছিল। পিটিভি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একত্রে কাজ করছে এনডিএমএ, পিডিএমএ, এনজিও ও শিল্প খাত।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগের ঝুঁকি মূলত জলবায়ু পরিবর্তন ও হিমবাহ গলে যাওয়ার ফল। সূত্র: ডন


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন