ইইউ-মেক্সিকোর পণ্যে ৩০% শুল্ক বসালেন ট্রাম্প, বাণিজ্য যুদ্ধে উত্তেজনা চরমে

ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকো থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ শতাংশ শুল্ক বসাবে। এ ঘোষণা আসে এমন সময়, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন প্রতিনিধিরা কয়েক মাস ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছিলেন।
তারা যে চুক্তির খসড়া ট্রাম্পের টেবিলে পাঠিয়েছিল, তাতে ছিল ১০ শতাংশ শুল্কের প্রস্তাব, যা আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। তারপরও ট্রাম্প তার নিজের মতো করে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, যা ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিস্মিত করেছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার ঠেকাতে মেক্সিকো কিছু পদক্ষেপ নিলেও, তা যথেষ্ট নয়। তিনি অভিযোগ করেন, পুরো উত্তর আমেরিকা “নার্কো-ট্র্যাফিকিং প্লে গ্রাউন্ডে” পরিণত হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, এই অঞ্চলের শুল্কনীতি ও বাণিজ্য বাধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি বেড়েছে। সেজন্যই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এরপর থেকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন বলেন, এই সিদ্ধান্ত দুই পাশের ব্যবসা, ভোক্তা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহে বিপর্যয় ঘটাবে। তিনি বলেন, এখনো চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে, তবে প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পরামর্শ দেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি চুক্তি না মানে, তাহলে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী কাথেরিনা রাইখ বলেন, বাস্তবভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে হবে। জার্মান শিল্প সমিতিও সতর্ক করেছে, এই ধরণের সংঘাতে উদ্ভাবন ও আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, একটি ন্যায্য চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা ঐক্যকে আরও জোরদার করতে হবে। দুই পাশে উত্তেজনা নয়, সমঝোতার মনোভাব দরকার।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাণিজ্য কমিটির প্রধান বার্ন্ড ল্যাং বলেন, ইউরোপকে দেরি না করে এখনই পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে তার একচেটিয়া শাসনের আরেকটি নিদর্শন বলে দেখছেন। চুক্তির কথা বললেও তিনি নিজের সিদ্ধান্তই চাপিয়ে দিয়েছেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাম অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, আগস্টের আগেই সমঝোতা হতে পারে, তবে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস হবে না।
এদিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা জানান, ট্রাম্প যে শুল্ক বসাবেন বলে ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছেন, তা আসলে অসম্মানজনক।
বাণিজ্য বিশ্লেষক ডগলাস হোল্টজ-ইকিন বলেন, ট্রাম্প এসব চিঠি দিয়ে আসলে নিজের দেশের জনগণের ওপরই কর চাপাচ্ছেন। অন্য দেশগুলো এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে, কীভাবে তারা মার্কিন চাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করবে।
ট্রাম্পের আগের ঘোষণাগুলো ও বর্তমান অবস্থান থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এতে ইউরোপের বহু পণ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।