Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফাঁস হওয়া তথ্য: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এক অন্ধকার অধ্যায়

স্টেটসম্যানের সম্পাদকীয়

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:০০ এএম

শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফাঁস হওয়া তথ্য: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এক অন্ধকার অধ্যায়

সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ঘিরে যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। যিনি একসময় গণতন্ত্রের রক্ষক এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন, আজ তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে— শান্তিকালীন সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস দমন-পীড়নের সরাসরি আদেশ দেওয়ার জন্য। এই অভিযোগগুলো কেবল কথার কথা নয়, এতে আছে যাচাই করা অডিও রেকর্ডিং ও ফরেনসিক বিশ্লেষণের শক্ত প্রমাণ। প্রমাণ মিলেছে, শেখ হাসিনা নিজে গত বছরের ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের সময় তাদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সিভিল সার্ভিস কোটার বিরুদ্ধে ছাত্রদের অসন্তোষ দিয়ে, কিন্তু তা দ্রুতই জাতীয় গণআন্দোলনের রূপ নেয়। স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার ভিতরে থাকা ফাটল। এরপর যা ঘটেছিল, তা কোনো পুলিশের ভুল হিসাব বা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ছিল না, বরং একেবারে উপর থেকে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সহিংসতা। অনেকে বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত হন সেদিন। এই অবনতির পথ নতুন নয়।

গত এক দশকে শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে সব ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষয়ে গেছে, ভিন্নমতকে দমন করা হয়েছে নজরদারি, সেন্সরশিপ ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন, যে দিনটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছিল না— এটি ছিল বছরের পর বছর ধরে জমে ওঠা স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। সেই দিনের রক্তাক্ত স্মৃতি এখনো বাংলাদেশের তরুণদের মনে দগদগে ঘা হয়ে আছে। অনেকেই তাদের বন্ধুকে দিনের আলোয় গুলিতে মরতে দেখেছে, কারণ তারা চেয়েছিল ন্যায্যতা, সম্মান ও জবাবদিহি।

এখন এই অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করছে। অথচ শেখ হাসিনার দল এখনো অস্বীকার করছে। তারা বলছে, যা করা হয়েছে, তা নাকি পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযথ ও সদিচ্ছার প্রকাশ ছিল। কিন্তু যেসব প্রমাণ এসেছে, সেগুলো বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আধা সামরিক মানের অস্ত্র নিয়ে পুলিশ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর টানা আধা ঘণ্টা গুলি চালিয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় শেখ হাসিনার কণ্ঠ শনাক্ত হয়েছে। সরকারের নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিরোধী কণ্ঠ দমন করা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রভাব শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রশ্ন তোলে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে যখন এমনভাবে সাধারণ মানুষকে দমন করা হয় একটি শক্তিশালী ক্ষমতাধর সরকারের হাতে। বাংলাদেশের এই সংকট একদিকে সতর্কবার্তা, আবার অন্যদিকে সচেতনতার ডাক।

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনো দেশের মানুষকে আশার আলো দেখাতে পারেনি। তবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের পথ শুধু একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই নয়, বরং সেই নৃশংসতা ও অপরাধের জবাবদিহির মধ্য দিয়েও গড়ে উঠবে। বিচার করতে হবে প্রতিশোধের জন্য নয়, বরং যেন আর কোনো নেতা— যতই জনপ্রিয় বা বংশগত হোন না কেন— অবারিত ক্ষমতা নিয়ে দেশ চালাতে না পারেন।

ঢাকায় ইতিহাস লেখা হচ্ছে। গোটা অঞ্চলকে এখন সতর্ক দৃষ্টিতে তা দেখতে হবে। উন্নয়ন আর স্থিতিশীলতার যতই বুলি হোক, একটি সরকারের সত্যিকার মূল্যায়ন হয় তখনই, যখন সে দেখায়— তার জনগণ প্রতিবাদ করলে সে কেমন আচরণ করে। সেই পরীক্ষায় শেখ হাসিনা ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন