Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

হামাস জানিয়েছে, ‘ইতিবাচক মনোভাবে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে প্রস্তুত

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩২ এএম

হামাস জানিয়েছে, ‘ইতিবাচক মনোভাবে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে প্রস্তুত

হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে এবং এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনায় প্রবেশ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুক্রবার সন্ধ্যায় হামাস তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানায়, "ভ্রাতৃপ্রতিম মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমাদের উত্তর পৌঁছে দিয়েছি। এই কাঠামো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে ও আন্তরিকভাবে প্রস্তুত।"

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, প্রায় ২১ মাস ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে উভয় পক্ষের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সময়ে একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করা হবে।

একটি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানায়, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, তবে তারা চায় যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ করার বিষয়ে আরও দৃঢ় নিশ্চয়তা। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামাসের প্রতিক্রিয়া তারা পেয়েছে এবং তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

হামাসের সামরিক শাখা গত কয়েক মাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি হামাস ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় হামাসের ভেতরে কঠোরপন্থীরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির দরকার মেনে নিয়েছে, যাতে সংগঠনটি পুনরায় সংগঠিত হয়ে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারে।

মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর থেকে গাজায় ৬০০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চিকিৎসা ও বেসামরিক সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে ইসরায়েল গাজা জুড়ে যে বিমান হামলা চালিয়েছে, তাতে ২৫০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও ছিল।

এই মুহূর্তে নতুন যুদ্ধবিরতির আলোচনা গতি পেয়েছে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘর্ষ থামাতে সমর্থ হয়। মঙ্গলবার ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ মেনে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, "হামাস রাজি হয়েছে কি না, তা আমরা শিগগিরই জানব। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব বোঝা যাবে।"

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রবিবার আমেরিকায় যাচ্ছেন ট্রাম্পের সঙ্গে গাজা যুদ্ধ, ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও অন্যান্য আঞ্চলিক ইস্যুতে আলোচনা করতে। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে রাজি হননি, কারণ এতে তাঁর সরকারে কট্টর ডানপন্থী জোটসঙ্গীদের সমর্থন হারানোর ঝুঁকি ছিল। কিন্তু ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে সাফল্য পাওয়ায় তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে এবং দেশজুড়ে সমীক্ষা বলছে, ইসরায়েলিরা এখন একটি চুক্তি চায়।

ইসরায়েলের এক সিনিয়র কর্মকর্তা চ্যানেল ১২-কে বলেন, "হামাস থেকে যে বার্তা পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে আমরা অচিরেই পার্শ্ববর্তী আলোচনা শুরু করতে পারব। যদি তারা সম্মত হয়, তবে চুক্তিও হবে।" অন্য ইসরায়েলি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চুক্তির জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং একটি প্রতিনিধিদল কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ আলোচনায় যোগ দিতে তৈরি রয়েছে।

চূড়ান্ত প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে থাকা ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা হবে, এবং আরও ১৮ জনের মৃতদেহ ফেরত দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৫০ জন এখনও গাজায় অবস্থান করছে বলে মনে করা হয় এবং এদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জীবিত আছে বলে অনুমান।

এই চুক্তি অনুযায়ী সাহায্য গাজায় ঢুকতে পারবে এবং ইসরায়েল ধাপে ধাপে কিছু অংশ থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেন, "আমরা চাই এটা এখানেই শেষ হোক। প্রেসিডেন্ট চান যুদ্ধ শেষ হোক। প্রধানমন্ত্রীও তাই চান। আমেরিকান জনগণ, ইসরায়েলি জনগণ, সবাই চায় যুদ্ধ শেষ হোক।"

হামাস দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় মানবিক সাহায্যের প্রবেশের দাবি করে আসছে। মার্চে ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ আরোপ করে, যা মে মাসে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সামান্য শিথিল হয়। খাদ্যাভাব এতটাই তীব্র ছিল যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন