ইসরায়েলের দাবি তারা ইরানের ড্রোন ইউনিটের প্রধানকে হত্যা করেছে

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করেছে যে, তারা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের এয়ার ও ইউএভি (ড্রোন) শাখার প্রধানকে হত্যায় সফল হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও একই ধরনের অভিযানে হত্যা করে তেলআবিব। আইডিএফের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নিহত সামরিক কর্মকর্তা ইসরায়েলের ওপর শতাধিক ড্রোন হামলার ছক কষা ও তা বাস্তবায়নের মূল কারিগর ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড ইরানের প্রতিরক্ষা কাঠামোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই তথ্য প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইসরায়েল নামের এক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম।
অন্যদিকে, ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসফাহান শহরে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এই শহরে অবস্থিত রয়েছে ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। যদিও বিস্ফোরণের প্রকৃত উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি সম্ভাব্য ইসরায়েলি ড্রোন বা যুদ্ধবিমানের আক্রমণ হতে পারে।
লেবানন সীমান্তে সতর্কতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটনার প্রেক্ষাপট:
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থিত ঘাজার শহরে একটি অনুপ্রবেশকারী ড্রোনের আশঙ্কায় সাইরেন বাজানো হয়। আইডিএফ-এর হোম ফ্রন্ট ইউনিট স্থানীয় জনগণকে সম্ভাব্য আকাশপথে হামলার জন্য সাবধান করে দেয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচিত ফিলিস্তিনপন্থি মানবাধিকারকর্মী মাহমুদ খালিলকে তিন মাসের আটকাদেশের পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত। খালিল অভিযোগ করেন, তার গ্রেপ্তার অযৌক্তিক ছিল এবং তিনি কোনো অপরাধে জড়িত নন— বরং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদই তার কাজ। যদিও তাকে এখনো দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, এবং মার্কিন অভ্যন্তরে চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তার মুক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে বিচারকের রায়ের বিরোধিতা করেছে।
ইরানের অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা:
ইসরায়েল জানায়, তারা ইরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র গুদাম ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে একাধিক বিমান অভিযান চালিয়েছে। এই আক্রমণগুলো ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দুর্বল করার লক্ষ্যেই পরিকল্পিত ছিল বলে দাবি করা হয়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জেনেভায় ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত কূটনীতিকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে ইসরায়েলের এই হামলার অনুমোদন দিয়েছে। তিনি জানান, এই বিশ্বাসঘাতকতা ইরানকে চরমভাবে হতাশ করেছে এবং এর ফলে আর আলোচনার পরিবেশ অবশিষ্ট নেই। তবে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না। বারবার মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে জানানো হয়েছে যে, এটি পুরোপুরি থামানো বাস্তবসম্মত নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল ও আমেরিকার সমন্বিত কৌশল এবং এর জবাবে ইরানের ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সমাধানের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ইরান নিজেকে প্রতারিত এক পক্ষ হিসেবে তুলে ধরছে এবং সরাসরি পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যার ফলে পুরো অঞ্চলে সংঘর্ষের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।