Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়ি ভাঙচুর

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলতে মোদিকে চিঠি মমতার

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১০:২৬ পিএম

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলতে মোদিকে চিঠি মমতার

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) মোদিকে চিঠিটি লিখেন মমতা। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, জীবদ্দশায় সিরাজগঞ্জের ওই বাড়িতে বহু বার গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই বাড়িতে বসে বহু সাহিত্যরচনা করেছেন। যা ভাঙা হয়েছে, তা শুধু বাড়ি নয়, ‘সৃজনশীলতার ঝর্ণা’। এই নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানানো হয়।

কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা চিঠিতে জানিয়েছেন, এই ভাঙচুরের ঘটনা শুধু ‘বিস্ময়কর নয়, দুর্ভাগ্যজনক’-ও। ভারতের গর্ব, সংস্কৃতির জন্য এই ভাঙুচুর ‘দুর্ভাগ্যজনক’। 

চিঠিতে তিনি বলেন, আমাদের ‘সংবেদনশীলতা, সম্পদ, নস্টালজিয়া’-য় আঘাত করা হয়েছে। স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে এই কবিই বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বাংলার মানুষের কাছে এই ঘটনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উত্তরসূরির উপর হামলা। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য রবীন্দ্রনাথের কাছে চিরঋণী। সেই কবির শিকড়ে আঘাত হানা হয়েছে।

মমতা এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশী দেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তিনি লিখেন, প্রতিবেশী দেশের সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কঠোরভাবে কথা বলার জন্য আমি আপনাকে আর্জি জানাচ্ছি। যাতে এই জঘন্য কাজ যারা করেছেন, তাদের বিচার হয়। ইতোমধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ না হয়, সে জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবাদ হওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলায় নয়, গোটা পৃথিবীতে বিখ্যাত।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (৮ জুন) রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে এক দর্শনার্থীকে আটকে মারধর করা হয়। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মারধরের শিকার দর্শনার্থীর নাম মো. শাহনেওয়াজ। বাড়ি পৌর শহরের রূপপুর মহল্লায়।

স্থানীয়দের বরাতে দৈনিক প্রথম আলোর এক সংবাদে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে ওইদিন বিকালে স্ত্রী ও ভাতিজাকে নিয়ে কাছারিবাড়িতে ঘুরতে যান শাহনেওয়াজ। তখন দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য নিয়ে টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য টাকা নিলেও টোকেন দেওয়া হয়নি। পরে কাছারিবাড়ি দেখা শেষে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের টিকিট দেখতে চান ফটকের দায়িত্বরত কর্মচারী। দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহনেওয়াজের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান ওই কর্মচারী। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে কাস্টোডিয়ানসহ অন্যরা এসে শাহনেওয়াজকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। এরপর সেখানে আটকে তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। খবর পেয়ে শাহনেওয়াজের অভিভাবক ও বিএনপির স্থানীয় নেতারা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় শাহনেওয়াজ কাস্টোডিয়ানসহ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় ওই দিন রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

এদিকে, ওই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে ‘শাহজাদপুরের সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল শাহজাদপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ানের কার্যালয়সহ মিলনায়তনের দরজা-জানালা ও আসবাব ভাঙচুর করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুশফিকুর রহমান ও থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর হামলার ঘটনার পর বুধবার থেকে কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বুধবার সকালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর মামলার সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর দুপুরের দিকে কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন