ভারতে চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ, অভিযোগ পাকিস্তানি প্রপাগান্ডা ছড়ানোর

ভারত বুধবার কিছু চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, এই চীনা মিডিয়াগুলো পাকিস্তানের হয়ে ভুল তথ্য ও প্রচারণা ছড়াচ্ছিল। এর আগে, চীন ভারতের বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলের কিছু জায়গার নাম বদলে নতুন নাম দেওয়ায় ভারত কড়া প্রতিবাদ জানায়।
চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এবং সরকার-সমর্থিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস-এর X (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট ভারতে বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে তুরস্কের আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম TRT World-এর অ্যাকাউন্টও ব্লক হয়। উল্লেখ্য, চীন ও তুরস্ক — উভয়ই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, এবং চীনই পাকিস্তানের অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী। তবে বৃহস্পতিবার গ্লোবাল টাইমস-এর অ্যাকাউন্টটি আবার চালু হয়, আইনি অনুরোধের পর।
গত সপ্তাহে ভারত কয়েক হাজার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে, যার মধ্যে অনেক সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমও ছিল। এতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। তবে গ্লোবাল টাইমস, সিনহুয়া এবং TRT World-এর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা সেই একই অভিযানের অংশ কি না, তা স্পষ্ট নয়।
চীন নিজ দেশে X (টুইটার) ব্যবহার করতে দেয় না, তবে তাদের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অন্য দেশে সক্রিয় থাকে।
গত সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষ হয়, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে বিপরীত দাবিনির্ভর খবর প্রকাশ করেছে। অনেক অপ্রমাণিত তথ্য এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
চীনের সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর পর ভারতীয় দূতাবাস চীনে গ্লোবাল টাইমস-এর বিরুদ্ধে “ভুল তথ্য ছড়ানোর” অভিযোগ তোলে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও তারা কিছু জানায়নি।
চীন আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় পক্ষকে সংযত থাকতে বললেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে সমর্থন করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন, যা ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলিতে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
গত রোববার চীন আবারো ভারতের অরুণাচল প্রদেশের কিছু জায়গার নাম পরিবর্তন করে ‘চীনা নাম’ ঘোষণা করে। চীন ওই এলাকাকে ‘জাংনান’ নামে দাবি করে।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল বলেন: “এভাবে নাম বদলালেই বাস্তব বদলায় না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অংশ ছিল, আছে, এবং চিরকাল থাকবে।”
পরে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, “এই নামকরণ চীনের সার্বভৌম অধিকারের মধ্যে পড়ে।”
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই দেশ ভারত ও চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েনপূর্ণ। প্রায় ৩,৮০০ কিমি দীর্ঘ হিমালয় সীমান্তে নানা জায়গা নিয়ে তাদের বিরোধ রয়েছে। ২০২০ সালে এমন এক সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় ও অন্তত ৪ জন চীনা সেনা নিহত হয়।