Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করল

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১১:৫৫ এএম

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করল

ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রিয়াদে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে করমর্দন করছেন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব ইতিহাসের "সর্ববৃহৎ প্রতিরক্ষা বিক্রয় চুক্তি" স্বাক্ষর করেছে, যার মূল্য ১৪২ বিলিয়ন ডলার। এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার দিনের উপসাগরীয় সফরের প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষরিত হয়। হোয়াইট হাউস বলেছে, এটি ট্রাম্পের "লেনদেন-ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির" সফল উদাহরণ।

এই সফরে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে যে ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি একজন প্রাক্তন বিদ্রোহী কমান্ডার যাঁর বাহিনী ২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করে। এটি হবে ২০০০ সালের পর প্রথমবার কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সিরিয়ার নেতার সরাসরি বৈঠক।

একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনার পর সিরিয়ার উপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। “সিরিয়াকে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ দিতে আমি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।

সিরিয়ার নতুন প্রশাসন ট্রাম্পের মন জয় করতে তাকে তেল খাত, পুনর্গঠন চুক্তি এবং দামেস্কে একটি 'ট্রাম্প টাওয়ার' নির্মাণের প্রস্তাব দেয়, যার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

যদিও নিষেধাজ্ঞা তোলার বিস্তারিত এখনও পরিষ্কার নয়, দামেস্কে শারার দল উদযাপন শুরু করেছে। সিরীয় লেখক রাদওয়ান জিয়াদেহ বলেন, “অবিশ্বাস্য, এটা কাজ করেছে!” তিনি একটি ট্রাম্প টাওয়ার দামেস্কের মক-আপ ছবিও শেয়ার করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শারা এটি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পকে দেখাবেন।

এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল বড় বড় বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করা। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ট্রাম্পকে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন, যার মধ্যে রয়েছে:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টারে ২০ বিলিয়ন ডলার

গ্যাস টারবাইন ও শক্তি সরঞ্জাম ক্রয়ে ১৪.২ বিলিয়ন ডলার

বোয়িং ৭৩৭-৮ বিমান কেনায় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।

তবে হোয়াইট হাউসের দেওয়া পরিসংখ্যান মোট ৬০০ বিলিয়নের সমান হয়নি, এবং অনেক চুক্তিই আগে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে শুরু হয়েছিল।

চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রতিরক্ষা সংস্থা সৌদি আরবে বিমান, মহাকাশ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা খাতে সরঞ্জাম ও পরিষেবা বিক্রি করবে।

রিয়াদে পৌঁছানোর সময় ট্রাম্পকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়। সৌদি এয়ারফোর্সের F-15 বিমানগুলো ট্রাম্পের এয়ারফোর্স ওয়ানকে এস্কর্ট করে। পরে তিনি সৌদি রাজপ্রাসাদে সৌদি ও মার্কিন ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। উপস্থিত ছিলেন এলন মাস্ক, স্যাম অল্টম্যান, আইবিএম, সিটিগ্রুপ, ব্ল্যাকরক, প্যালান্টিয়ার ও এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহীরা।

যুবরাজ সালমান বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলে ট্রাম্প রসিকতা করে বলেন, “এটা এক ট্রিলিয়ন ডলার হওয়া উচিত!”

এই সফর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির এক নতুন ধারার পরিচায়ক — যেখানে আন্তর্জাতিক আইন নয়, বরং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এই ধারা ট্রাম্প ও তাঁর ব্যবসায়ী ঘনিষ্ঠদের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলছে, এবং ট্রাম্প পরিবারের মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে।

এই ধারার সবচেয়ে বিতর্কিত উদাহরণ হলো কাতার সরকারের দেওয়া বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান উপহার। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এটি সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্ট প্লেন হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং পরে ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির জন্য রাখা হবে।

এটি ডেমোক্রেটদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ একে "আকাশে ভাসমান প্রাসাদ" বলেও অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প বলেন, এটি “পুরনো এয়ারফোর্স ওয়ানকে বদলাবে” এবং যারা এই নিয়ে তদন্ত চায়, তাদের “ওয়ার্ল্ড ক্লাস লুজার” বলে কটাক্ষ করেন।

যখন ট্রাম্প ও সালমান হাস্যোজ্জ্বল আলোচনায় ব্যস্ত, তখন ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সালমানের ভূমিকাকে অনেকেই মনে রেখেছেন।

ইসরায়েলের কূটনৈতিক স্বীকৃতির বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “সৌদি আরব যখন আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হবে, সেদিনটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বিশেষ দিন,” তবে তিনি স্বীকার করেন, গাজার যুদ্ধের কারণে এটি বিলম্বিত হচ্ছে।

ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং পরে কাতার সফরে যাবেন। সিরিয়া নিয়ে তাঁর নীতির পরিবর্তনে অঞ্চলটির বড় বিনিয়োগ চুক্তিগুলোর ভূমিকা ছিল বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।

শারার পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে সিরিয়ায় একটি ট্রাম্প টাওয়ার, গোলান হাইটসের কাছে একটি নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি এবং খনিজ সম্পদের মুনাফা ভাগাভাগির মতো কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তাঁর এই ইসরায়েল সফর বাতিল করা হয়েছে গাজার যুদ্ধে নেতানিয়াহুর ভূমিকার কারণে। হামাস ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ঠিক আগের রাতে আমেরিকান জিম্মি এদান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেয়, যেন ট্রাম্প নেতানিয়াহুর উপর যুদ্ধ থামাতে চাপ সৃষ্টি করেন।

তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, “যুদ্ধ বন্ধ হবে না। আমাদের বাহিনী এখনই অভিযান চালাচ্ছে, এবং এটি সম্পূর্ণ হবে।”

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন