Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গাজায় আটক থাকা শেষ জীবিত মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিল হামাস, ‘সদিচ্ছার পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য ট্রাম্পের

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ০৯:১৮ এএম

গাজায় আটক থাকা শেষ জীবিত মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিল হামাস, ‘সদিচ্ছার পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য ট্রাম্পের

তেলআবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে আলেকজান্ডারের মুক্তিকে স্বাগতম ও অন্যদের ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ

গাজা থেকে শেষ জীবিত মার্কিন বন্দি, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ২০ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। রোববার বিকেলে এই একতরফা পদক্ষেপকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প “সদিচ্ছার পদক্ষেপ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা যুদ্ধ বন্ধ এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তির পথে ইতিবাচক বার্তা দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার একটি সেনাঘাঁটি থেকে অপহৃত হওয়ার পর আলেকজান্ডার ৫৮৪ দিন বন্দি ছিলেন। তার মুক্তিতে ইসরায়েলের ভূমিকা ছিল খুব সীমিত।

যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি ছাড়াই আলেকজান্ডারকে হস্তান্তর করা হয়। শুধু হস্তান্তরের সময় দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য লড়াই বন্ধ রাখা হয়। এই সময় জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলি অবরোধের ফলে গাজায় পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বেসামরিক পোশাকে মুখোশধারী হামাস যোদ্ধারা তাকে রেড ক্রস কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। পরে তাকে ইসরায়েল সীমান্তে আনা হয়, যেখানে তার পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছিলেন।

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, "যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে সংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি, সীমান্ত খুলে দেওয়া ও গাজাবাসীর জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।" তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতি যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, "এডান আলেকজান্ডার, শেষ জীবিত মার্কিন বন্দি, মুক্তি পেয়েছে। অভিনন্দন তার পরিবার ও প্রিয়জনদের!"

মুক্তির আগে আলেকজান্ডার জানিয়েছিলেন, তাকে অন্য জিম্মিদের সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে একটি টানেলের খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছিল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই মুক্তিকে একদিকে ট্রাম্পের কূটনৈতিক চাপ ও অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক চাপের যৌথ ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই মুক্তির পর ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন। তবে তার সফরে ইসরায়েল অন্তর্ভুক্ত নেই—এটি নেতানিয়াহুর প্রতি একপ্রকার কূটনৈতিক বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

তবে ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি। তিনি বলেন, “সবাই একই পৃষ্ঠায় আছি।”

হামাসের পক্ষ থেকে এই মুক্তিকে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির দিকে পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে নেতানিয়াহু কাতারে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে নেতানিয়াহু এখন চাপের মধ্যে রয়েছেন—একদিকে ট্রাম্প শান্তিচুক্তি চান, অন্যদিকে তার কট্টর ডানপন্থী জোট যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ঘোষণা দিয়েছেন, “গাজা সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে” এবং “ফিলিস্তিনিরা বিপুল সংখ্যায় দেশ ছাড়বে।”

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নে এক সময় ট্রাম্পও সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।

এদিকে তেলআবিবের Hostages Square-এ আলেকজান্ডারের মুক্তির ভিডিও দেখে সাধারণ মানুষ এবং আত্মীয়রা অন্যদের ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ করে। ট্রাম্প জানান, এখনো ২০ জন জীবিত জিম্মি রয়েছে। তবে ইসরায়েলি সরকার সেই সংখ্যা নিশ্চিত করেনি।

জিম্মি মাতান জাঙ্গাউকার-এর মা আইনাভ জাঙ্গাউকার, যিনি কিছু সময় আলেকজান্ডারের সঙ্গে বন্দি ছিলেন, নেতানিয়াহুকে "মৃত্যুর দেবদূত" আখ্যা দিয়ে বলেন, “যুদ্ধ বন্ধ করে সবাইকে ফিরিয়ে আনার বদলে তিনি নতুন হামলার পরিকল্পনা করছেন।”

তার ভাষায়, “তিনি আমাদের প্রিয় মানুষদের মৃতদেহে পরিণত করতে চান। জীবন রক্ষা করতে নয়।”

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন