ভারত তিনটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে: পাকিস্তান

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আজ শনিবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ভারত তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে রাজধানী ইসলামাবাদের নিকটবর্তী রাওয়ালপিন্ডিতে, যেটি নূর খান বিমানঘাঁটি নামে পরিচিত—বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আগমন ও বহির্গমনের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন এক কৌশলগত ঘাঁটি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী একটি সরাসরি সম্প্রচারে বলেন, “ভারত তিনটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনো উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।” তবে শুক্রবার রাতজুড়ে ইসলামাবাদ ও আশপাশের এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
এই উত্তেজনার সূত্রপাত গত ২২ এপ্রিল, যখন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। ভারত ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, এ ধরনের হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে এরপর থেকেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক উত্তেজনা পাল্টাপাল্টি হামলার রূপ নেয়। শুরু হয় সীমান্তজুড়ে গোলাবর্ষণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
সাম্প্রতিক এই সংঘাতকে বলা হচ্ছে গত তিন দশকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ও বিপজ্জনক সামরিক সংকট। ইতোমধ্যেই দুই পক্ষের বিমান ও ড্রোন হামলায় শিশুসহ ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “দিল্লির আগ্রাসী ও উন্মত্ত আচরণ দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে এক ভয়াবহ সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।” এই বিবৃতির পেছনে মূলত রয়েছে ভারতের বিমান হামলার আগে ও পরে বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হানার ঘটনা।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের জবাব এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুখপাত্র বলেন, “এখন শুধু অপেক্ষা করুন—আমাদের জবাব আসবে।”
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার নিজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক ভারতীয় সামরিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার গতি ও গভীরতা উদ্বেগজনক। এটি শুধুমাত্র দুই দেশের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দুই দেশের জনগণ যেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ এখন এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের ওপর নিবদ্ধ।
এই পরিস্থিতিতে সংযম ও কূটনৈতিক সংলাপের বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে—ক্ষোভ, পাল্টা আক্রমণ ও জাতীয় গর্বের রাজনীতির মধ্যে সেই সংযমের জায়গাটি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।