ভারত-পাকিস্তান: অতীতের যুদ্ধ, বর্তমান উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ সালে, আর তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের শুরু।
১. ১৯৪৭–৪৮ সালের কাশ্মীর যুদ্ধ
স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যেই কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তান-সমর্থিত উপজাতীয় বাহিনী কাশ্মীরে হামলা চালায়, ভারতের সেনা হস্তক্ষেপ করে। যুদ্ধ শেষে কাশ্মীর দুই দেশে বিভক্ত হয় — লাইন অব কন্ট্রোল (LoC) প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ
আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে উভয় দেশই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়।
৩. ১৯৭১ সালের যুদ্ধ
এই যুদ্ধ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতা নিয়ে। ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের পর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গভীর এবং পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় পরাজয়।
৪. ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ
কাশ্মীরের কারগিল অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনারা অনুপ্রবেশ করলে যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতের জবাবে পাকিস্তান পিছু হটে। এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার পরও সরাসরি সংঘর্ষের প্রথম ঘটনা।
বর্তমান সংঘাত: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
২০২৪ সালে কাশ্মীরের পহেলগাম অঞ্চলে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান পাল্টা হামলার ঘোষণা দেয়।
উভয় পক্ষই বলছে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছে, কিন্তু বাস্তবে সীমান্তে বেসামরিক মৃত্যু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, যা পরিস্থিতিকে প্রকৃত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিমান চলাচল বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ এবং জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক—সবই পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
সম্ভাব্য পরিণতি: যুদ্ধের ঝুঁকি কতটা ভয়াবহ?
১. পারমাণবিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা
ভারত ও পাকিস্তান—উভয়েরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, গোটা বিশ্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২. অর্থনৈতিক বিপর্যয়
যুদ্ধ হলে উভয় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
ইতিমধ্যেই ফ্লাইট বন্ধ, বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত।
৩. যুদ্ধ মানে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি ও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক আঘাত। ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালের অভিজ্ঞতা বলছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ।
৪. এই যুদ্ধ চীন, আফগানিস্তান, ইরান, উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। ইসলামাবাদ ও দিল্লির উত্তপ্ত সম্পর্ক অন্যান্য আঞ্চলিক উদ্যোগেও ছায়া ফেলবে।
সমাধানের পথ কী?
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা জরুরি।
কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করা দরকার, যেমন আগের সময়গুলোতে ট্র্যাক-টু কূটনীতি হয়েছিল।
উভয় দেশকেই আন্তর্জাতিক আইন ও শান্তিচুক্তির আওতায় আসতে হবে।
ভারত-পাকিস্তান একাধিকবার যুদ্ধ করেছে, কিন্তু ফলাফল ছিল রক্ত, অর্থনৈতিক ধ্বংস, ও মানবিক সংকট। আজ যখন পারমাণবিক অস্ত্র ও জাতিগত উত্তেজনা উভয়ই উঁচু পর্যায়ে, তখন আরও একটি যুদ্ধ শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হবে অপরিণামদর্শী বিপর্যয়।