ভারতের হামলায় পাকিস্তানে ২৬ জন বেসামরিক নিহত: পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি ইসলামাবাদের

ভারতের সামরিক হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান। এর আগে পাকিস্তান সরকার নিহতের সংখ্যা ৮ বলে জানালেও রাতভর হামলার পর হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
বুধবার ভোররাতে ভারত পাকিস্তানের নয়টি স্থানে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে জানায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বলেন, “ভারতের এই আগ্রাসনের জবাব আমরা আমাদের পছন্দের সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে দেব।”
বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগ পাকিস্তানের
পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরে একটি মসজিদে আঘাত হানায় এক শিশু নিহত এবং একজন নারী ও পুরুষ আহত হন। এছাড়া মুরিদকে, শিয়ালকোট, শকরগড় ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদ ও কোটলি এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
মুজফফরাবাদ শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং শহর ছেড়ে পালাচ্ছে সাধারণ মানুষ, জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে "যুদ্ধ ঘোষণার শামিল" বলে উল্লেখ করেছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জানানো হয়েছে যে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা হবে।
ভারতের দাবি: শুধু সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু
ভারতের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা শুধুমাত্র সন্ত্রাসী অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করেছি, কোনো সামরিক স্থাপনায় হামলা করা হয়নি। আমাদের পদক্ষেপ ছিল পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং উত্তেজনা না বাড়ানোর মতো।”
তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “ভারতের লক্ষ্যবস্তু ছিল বেসামরিক এলাকা, কোনো সামরিক ঘাঁটি নয়। পাকিস্তান এর জবাব দেবে এবং সকালের আগেই তা দেখা যাবে।”
দুই পারমাণবিক রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
এই হামলা এমন এক সময় হলো যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, "ভারতের পানি আর বাইরের দিকে যাবে না"—যা ইঙ্গিত করে ইন্দাস জলচুক্তি নিয়ে নতুন উত্তেজনার দিকে।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত কাশ্মীরের পাহেলগামে ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায়, যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপর থেকেই সীমান্তে রাতভর গুলি বিনিময় চলছে।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান: সামরিক সংযম বজায় রাখুন
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই অবস্থাকে "খুবই উদ্বেগজনক" বলে অভিহিত করেছেন এবং দুই দেশের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলে তা পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি।”