স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত-পাকিস্তানকে আহ্বান রুবিওর

যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত ও পাকিস্তানকে উত্তেজনা পরিহারে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পৃথক ফোনালাপে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন রুবিও। ওই হামলায় দুই ডজনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। রুবিও পাকিস্তান সরকারকে তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই হামলা অযৌক্তিক এবং এর পেছনের জড়িতদের জবাবদিহি করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, রুবিও দুই দেশকে সরাসরি যোগাযোগ পুনঃস্থাপন, সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশ গঠনে কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে আলোচনায় রুবিও দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দেশের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, এ পর্যন্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৯০ হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে, এবং দেশটি ১৫২ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি ভারতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে “উত্তেজক ও উসকানিমূলক” বলে আখ্যা দেন এবং সতর্ক করেন, এই ধরণের পদক্ষেপ পাকিস্তানের অগ্রাধিকারভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইকে বিভ্রান্ত করতে পারে—বিশেষ করে আফগান সীমান্ত থেকে পরিচালিত দায়েশ, টিটিপি ও বিএলএ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে।
শেহবাজ আরও বলেন, পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করার ভারতের প্রচেষ্টা “অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য”। তিনি একটি স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া, ভারতের পানি ব্যবস্থাপনাকে "একতরফা এবং অমানবিক" উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সিন্ধু পানি চুক্তি কোনো দেশকে একতরফাভাবে চুক্তি ভঙ্গের অনুমতি দেয় না। পানি অস্ত্র নয়।"
প্রধানমন্ত্রী জানান, কাশ্মীর ইস্যুর শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধানই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাথেও ফোনালাপে রুবিও পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে থাকবে।
রুবিও ভারতকেও দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা প্রশমনে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা ও সহযোগিতার পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি শান্তি রক্ষায় কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর জোর দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগকে বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। মার্কো রুবিওর এই আহ্বান এমন এক সময়ে এসেছে যখন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।