ট্রাম্পের সন্দেহ: পুতিন কি সত্যিই যুদ্ধ থামাতে চান?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকের পর, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তির সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে রোমে অনুষ্ঠিত হয় ট্রাম্প-জেলেনস্কির এই আলোচনাসভা।
রোম ছাড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, চলতি সপ্তাহে কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তার মনে হয়েছে, পুতিন হয়তো তাকে "ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছেন"। তিনি লেখেন, "না হলে বেসামরিক এলাকায় হামলার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না।"
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরুর আগে ট্রাম্প ও জেলেনস্কিকে গভীর আলাপে মগ্ন দেখা যায়।
হোয়াইট হাউজ ১৫ মিনিটের এই বৈঠককে 'অত্যন্ত ফলপ্রসূ' বলে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে জেলেনস্কি একে ‘ঐতিহাসিক সম্ভাবনাময়’ আখ্যা দিয়েছেন।
এটি ছিল ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর ট্রাম্প ও জেলেনস্কির প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
ট্রাম্প পরবর্তীতে বলেন, ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার হামলা দেখে তার মনে হয়েছে, "পুতিন হয়তো আসলে যুদ্ধ বন্ধ চান না—তিনি কেবল আমাকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। বিষয়টি ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে হবে—ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চাপ বাড়ানো কিংবা নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে?"
এর আগে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে বৈঠক করেছিলেন, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তির সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা হয়। ক্রেমলিন পরে জানায়, ইউক্রেনের সাথে বিনা পূর্বশর্তে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা।
প্রসঙ্গত, হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্প একসময় জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, "আপনার হাতে কোনো শক্তি নেই" এবং সরাসরি মন্তব্য করেন, "আপনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন না।"
পূর্বে ট্রাম্প ইউক্রেনকেই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেছেন এবং বারবার জেলেনস্কিকে শান্তি আলোচনায় প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে শনিবারের বৈঠকের পর হোয়াইট হাউজ থেকে ইতিবাচক সুরে বিবৃতি এসেছে। জেলেনস্কিও বলেছেন, যৌথভাবে ফলপ্রসূ আলোচনা হলে এটি একটি ‘ঐতিহাসিক বৈঠকে’ রূপ নিতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হওয়া ছবি ও বিবরণ থেকে জানা গেছে, বৈঠকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সাথে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। মনে হচ্ছে, দুই ইউরোপীয় নেতা এই বৈঠকের পরিবেশ সহায়ক করতে ভূমিকা রেখেছেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পরে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি নির্ধারিত আসনে বসেন এবং অনুষ্ঠানের সময় একে অপরের কাছাকাছি অবস্থান করেন। অনেকেই জেলেনস্কির উপস্থিতিতে হাততালি দেন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক ছবির ক্যাপশনে লেখেন, “ঐতিহাসিক এ বৈঠকের গুরুত্ব প্রকাশে কোনো শব্দের প্রয়োজন নেই।”
যদিও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠকের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, তবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই ট্রাম্প রোম ত্যাগ করেন। জেলেনস্কি পরে ফরাসি দূতাবাসে ম্যাঁক্রের সাথে এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে কিয়ের স্টারমারের সাথে বৈঠক করেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনের সাথেও আলাদা বৈঠক হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্র সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে লেখেন, "ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান আমাদের যৌথ লক্ষ্য, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথেও আমরা ভাগাভাগি করি। ইউক্রেন এখন নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।"
ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র জানান, ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে স্টারমার এবং জেলেনস্কি আলোচনা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও এ আলোচনা চলবে।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসের বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেনের ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। পরবর্তীতে কিয়েভ ক্রেমলিনের সাথে আলোচনায় ক্রাইমিয়াসহ কিছু অংশ ছাড় দেয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে, যদিও জেলেনস্কি এতদিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, "একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি সবকিছু নিয়ে আলোচনার পথ খুলে দেবে।"