সার্বিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের চূড়ান্ত পর্ব: ভুচিচের সরকার চাপের মুখে

আরো পড়ুন
সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে দুর্নীতিবিরোধী এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিক্ষোভকে প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচের শাসনের বিরুদ্ধে মাসব্যাপী চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে, কারণ প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে পার্কে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। ভুচিচ সতর্ক করেছেন যে, শনিবারের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী এবং ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে সার্বিয়ার রাজনীতিতে কর্তৃত্ব ধরে রাখা ভুচিচ বলেন, "আপনারা আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইলে আমাকে হত্যা করতে হবে।"
গত নভেম্বর থেকে দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে, যার সূত্রপাত হয় নোভি সাদ শহরের একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৪ জনের মৃত্যুর পর। জনগণ দুর্নীতিকে এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করে, কারণ ভুচিচ ২০২২ সালে এই স্টেশনের সংস্কার উদ্বোধন করেছিলেন।
এই বিক্ষোভ সাধারণত শান্তিপূর্ণ হলেও ভুচিচ দাবি করেছেন যে, "প্রদর্শনকারীরা সহিংসতার মাধ্যমে কিছু অর্জনের চেষ্টা করলে সেটাই তাদের শেষ হবে" এবং অনেককে শনিবারের সমাবেশের পর কারাগারে যেতে হবে। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা ট্রাক্টরসহ রাজধানীর সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে।
ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের সমর্থক দলে কট্টর জাতীয়তাবাদী ও ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জোরান জিনজিচ হত্যার সঙ্গে জড়িত মিলিশিয়াদের সদস্যদেরও দেখা গেছে। জিনজিচ ২০০০ সালে স্লোবোদান মিলোসেভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ২২ বছর আগে একটি আধাসামরিক বাহিনী তাকে হত্যা করে।
বিরোধী দল ‘ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির’ নেতা দ্রাগান জিলাস অভিযোগ করেছেন যে, ভুচিচ "অপরাধী ও কট্টরপন্থীদের" একত্রিত করে রাজধানীর প্রধান এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন, যেখানে শনিবারের বিক্ষোভে লাখো মানুষ জড়ো হওয়ার কথা।
ছাত্রদের নেতৃত্বে থাকা এই আন্দোলন সরকারের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নোভি সাদ ট্রাজেডির জন্য জবাবদিহিতা, আইনের শাসনের ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক সংস্কার দাবি করছে। ইতোমধ্যে ছাদ ধসের ঘটনায় এক ডজনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিচ, যিনি সংস্কারের সময় নোভি সাদের মেয়র ছিলেন, তিনি জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেছেন।
ভুচিচ ট্রানজিশনাল সরকার গঠনের বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন এবং এই আন্দোলনকে পশ্চিমা শক্তির ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।
বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দুশান স্পাসোয়েভিচ মনে করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে জনগণকে সমাবেশ থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সরকার চাইছে কোনোভাবে সহিংসতা উসকে দেওয়া হোক, যাতে পুলিশ হস্তক্ষেপের সুযোগ পায় এবং জনগণ প্রতিবাদ থেকে সরে আসে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ সম্প্রতি গাড়ি হামলায় কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েনকে এক চিঠিতে লিখেছেন, "সার্বিয়ার জন্য এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।"
সার্বিয়া ২০১২ সাল থেকে ইইউ সদস্যপদপ্রার্থী দেশ হলেও ভুচিচের শাসনে দেশটির অগ্রগতি থমকে গেছে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার সরকার রাশিয়াপন্থী অবস্থান নিয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিভিন্ন মতাদর্শের আইনপ্রণেতারা মনে করেন, ইইউ সার্বিয়ার প্রতি অনেক বেশি শিথিল মনোভাব দেখিয়েছে। তারা ইইউকে অনুরোধ করেছেন, কোনো তহবিল ছাড় দেওয়ার আগে দেশটিতে অবাধ নির্বাচন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, গণমাধ্যমের বহুমুখিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে সার্বিয়া ইইউর "গ্রোথ প্ল্যান" এর আওতায় ১.৫ বিলিয়ন ইউরো অনুদান ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে।
বিক্ষোভ আয়োজকরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, শনিবারের পরেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। "এটি কোনো শেষ পদক্ষেপ নয়, বরং একটি বিশাল পরিবর্তনের সূচনা। আমাদের দাবি পূরণ না হলে, আমরা রাস্তায় থাকব, অবরোধ চালিয়ে যাব, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করব," তারা ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন।