দুবাইয়ে আগামী বছরই চালু হচ্ছে উড়ন্ত ট্যাক্সি, যা পৃথিবীর প্রথম

মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচারের দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করতেই দর্শনার্থীরা দেখেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ফ্লাইং ট্যাক্সির মডেল, যা আগামী বছরের শুরুর দিকে দুবাইয়ের আকাশে উড়তে প্রস্তুত।
প্রায় একটি হেলিকপ্টারের সমান আকৃতির এ ফ্লাইং ট্যাক্সিতে সর্বোচ্চ চারজন যাত্রী বহন করা যাবে। এতে ছয়টি রোটর এবং তিনটি গোলাকার ল্যান্ডিং স্কিড রয়েছে, যা প্রচলিত হেলিকপ্টারের তুলনায় দেখতে বেশ আলাদা।
এই প্রোটোটাইপ ট্যাক্সির প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা গেছে। অনেকেই এয়ার ট্যাক্সিতে উড়ে বেড়ানোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
দুবাইয়ের বাসিন্দারা বলেছেন, এয়ার ট্যাক্সি চালু হলে অনেকে তা ব্যবহার করতে আগ্রহী। দুবাইয়ের বাসিন্দা দীপ শাহ জানিয়েছেন, তিনি এর জন্য সর্বোচ্চ ১৫০ দিরহাম খরচ করতে প্রস্তুত। তাঁর যুক্তি, “যদি আল গারহৌদ থেকে মেরিনায় মাত্র ১০ মিনিটে পৌঁছানো যায়, তবে ১৫০ দিরহাম সঠিক দাম।”
কর্তৃপক্ষ এখনো জবি এস৪ (Joby S4) মডেলের এই পরিবেশবান্ধব এয়ার ট্যাক্সির ভাড়া ঘোষণা করেনি। পুরোপুরি বৈদ্যুতিক ও শূন্য নিঃসরণযুক্ত এ যানটিতে ছয়টি রোটর, চারটি ব্যাটারি প্যাক এবং একজন পাইলটসহ চারজন যাত্রী বহনের ব্যবস্থা রয়েছে। ১৬১ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারা এই এয়ার ট্যাক্সির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩২২ কিলোমিটার।
আনুমানিক হিসাব বলছে, দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ডিএক্সবি) থেকে পাম জুমেইরায় পৌঁছাতে এয়ার ট্যাক্সিতে মাত্র ১২ মিনিট লাগবে, যেখানে গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। শাহ জানিয়েছেন, তিনি আট বছর আগে ফ্লাইং ট্যাক্সির কথা শুনেছেন এবং এটি দুবাইয়ের পরিবহন ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনবে, সেটি দেখার জন্য আগ্রহী।
অনেকের কাছে আবার প্রধান আকর্ষণ শহরের যানজট এড়ানো। দুবাইভিত্তিক দম্পতি হাসান কাজেমখানি ও মারিয়াম হোসেইনি মনে করেন, প্রতিদিনের যাতায়াতে এয়ার ট্যাক্সি ব্যবহার বেশ কার্যকর হবে। হাসান জানিয়েছেন, তিনি জুমেইরা থেকে ডেইরা পর্যন্ত যাত্রায় সর্বোচ্চ ৫০ দিরহাম খরচ করতে রাজি।
মারিয়াম স্বীকার করেন, এ সেবা বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে, তবে জরুরি কাজে বা সময়মতো পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এর মূল্য দেওয়া যুক্তিযুক্ত হতে পারে। তার কথায়, “খরচ বেশি হতে পারে, কিন্তু যদি সময় বাঁচানো যায় আর যানজট এড়ানো যায়, কখনো কখনো মূল্যটা দিয়েও লাভবান হওয়া যায়।”
তবে সবার আগ্রহ একরকম নয়। গত ১১ বছর ধরে দুবাইতে বসবাসকারী গৃহিণী এলেন কোর্টেজ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি হয়তো এয়ার ট্যাক্সিতে উঠবেন না। ঘণ্টায় ৩২২ কিলোমিটার গতিবেগ ও কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড থাকা সত্ত্বেও উচ্চতাভীতি তার সবচেয়ে বড় দ্বিধার কারণ। তবু কৌতূহল মেটাতে একবার হলেও উঠতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দুবাই আগামী ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফ্লাইং ট্যাক্সি চালু করতে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক এই এয়ার ট্যাক্সি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবহন খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ ট্রিপ স্বয়ংক্রিয় বা স্বচালিত ব্যবস্থায় নিয়ে আসার লক্ষ্য রয়েছে। সূত্র: খালিজ টাইমস