প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট চলছে শ্রীলঙ্কায়
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার মানুষ। আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে দেশটিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দেশটির সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতিরগতি পথ নির্ধারণ করবে এই ভোট।
৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই নির্বাচনে। প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মার্কসবাদী মনোভাবাপন্ন আইনপ্রণেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এবং বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
দেশটি ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আগামী রবিবার চূড়ান্ত ফলাফল আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে খেলাপি হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচির আওতায় ঋণ পুনর্গঠনসহ দেশের ভঙ্গুর পুনরুদ্ধারে শ্রীলঙ্কানরা বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বকে পুনরায় গ্রহণ করে কিনা তা এই ফলাফলে দেখা যাবে।
সরকার বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করেছে যে তারা বেসরকারি বন্ড হোল্ডারদের সঙ্গে নীতিগতভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছে ঋণ পুনর্গঠনের চূড়ান্ত বাধা অতিক্রম করেছে।
খেলাপি হওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার স্থানীয় ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং সরকার বলছে যে এটি এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পুনর্গঠন করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সত্ত্বেও, শ্রীলঙ্কানরা উচ্চ কর এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে লড়াই করছে।
প্রেমাদাসা এবং দিসানায়েক উভয়ই বলেছেন, তারা কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপগুলো আরও সহনীয় করতে আইএমএফের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করবেন। বিক্রমাসিংহে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তনের যেকোনো পদক্ষেপ আইএমএফের প্রতিশ্রুত প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সহায়তার চতুর্থ কিস্তি ছাড়তে বিলম্ব করতে পারে, যা স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাজস্ব আয় বাড়ায় না এমন অনুৎপাদনশীল প্রকল্পগুলোতে অত্যধিক ঋণ গ্রহণের ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং মুদ্রা রুপিকে চাঙ্গা করতে দুর্লভ বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবহার করার জন্য সরকারের জেদ অর্থনীতির দ্রুত পতনে ভূমিকা রেখেছিল।
অর্থনৈতিক পতন ওষুধ, খাদ্য, রান্নার গ্যাস এবং জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মারাত্মক ঘাটতির সৃষ্টি করে। মানুষ এই নিত্যপণ্যগুলো পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন লাইনে অপেক্ষা করে। এতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন, তার কার্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো দখল করে নেয়। এর ফলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিক্রমাসিংহে রাজাপাকসের পাঁচ বছরের মেয়াদের অবশিষ্ট অংশ কভার করার জন্য ২০২২ সালের জুলাইয়ে সংসদীয় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এখন বিক্রমাসিংহে তার অর্জনকে ধরে রাখতে আরও একটি মেয়াদ প্রত্যাশা করছেন।
তবে অনেকে তার বিরুদ্ধে রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার অভিযোগ করেছেন। অর্থনৈতিক সংকটের জন্য যাদেরকে তারা দায়ী করে থাকেন।
পার্লামেন্টে তার দলের একমাত্র সদস্য বিক্রমাসিংহে মূলত রাজাপাকসের অনুগতদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা তাকে তার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে করে এবং তার প্রস্তাবিত সংস্কারের পক্ষে ভোট দেয়।