রাসেলস ভাইপার সত্যিই কি এতো ভয়ঙ্কর, এতো উদ্বেগের?
রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে সম্প্রতি দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলায় চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত সাপটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানামুখী আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। অনেকেই বলছেন, সাপটি অত্যন্ত বিষধর; ছোবল দিলে আর বাঁচার উপায় নেই! এরই সূত্র ধরে চলছে এই জাতের সাপ নিধনের প্রচার। এ সাপ মারতে পুরস্কার ঘোষণার খবরও এসেছে। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের এক নেতা রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া নিয়ে যে মাত্রায় আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে তা কতটা আসলে যৌক্তিক? গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রজাতির সাপ কামড়ালে চিকিৎসা নেই কথাটা একেবারে ভুল। এরও চিকিৎসা আছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারলে বাঁচানো সম্ভব।
বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে, রাসেলস ভাইপার মোটেও দেশের সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়। বরং দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে যত লোক মারা যায়, তার অর্ধেকই মারা যায় পাতি কেউটে সাপের ছোবলে। তবে সময়মত চিকিৎসা না নিলে রাসেলস ভাইপারের দংশনেও মৃত্যু হতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিভেনম (সাপের বিষের প্রতিষেধক ইনজেকশন) আছে। সারা দেশের সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, এর অ্যান্টিবডি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।
সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় রাসেলস ভাইপারের ছোবলে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজন মারা গেছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপর ভোলাসহ আরো কয়েকটি জেলায় এ ধরনের সাপ হত্যার খবর এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০২৩ সালে ৪ লাখ সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার। এর বেশির ভাগই কোবরা ও কেউটে প্রজাতি সাপের ছোবলে।
একজন চিকিৎসক বলেন, বিষাক্ত সাপ ছোবল দিলে এবং এতে শরীরে বিষ প্রবেশ করলে যদি যথাসময়ে চিকিৎসা দেওয়া না হয়, তবে মৃত্যুর ঝুঁকি বলতে গেলে শতভাগ। তবে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিষধর সাপ দংশন করলেও শরীরে বিষ প্রবেশ করাতে পারে না। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিও নেই। এ ধরণের দংশনকে ‘ড্রাই বাইট’ বলা হয়। বাকি ৫০ শতাংশ অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।