Logo
Logo
×

রাজনীতি

জামায়াতের ‘জাতীয় সমাবেশ’: সারা দেশ থেকে সোহ্‌রাওয়ার্দীতে জড়ে হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ এএম

জামায়াতের ‘জাতীয় সমাবেশ’: সারা দেশ থেকে সোহ্‌রাওয়ার্দীতে জড়ে হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো আয়োজন করছে ‘জাতীয় সমাবেশ’। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে দলটির নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা এবং স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে উদ্যানের আশপাশ।

সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মেট্রোরেল স্টেশন, কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও ও শিশুমেলা সংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট মিছিলের মাধ্যমে উদ্যানে আসতে থাকেন অংশগ্রহণকারীরা। যাত্রাপথে স্লোগানে তারা সমাবেশের সফলতা কামনা করেন। রাজধানীমুখী যানবাহনে ভিড় ও মহাসড়কে অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা গেছে।

জামায়াত নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, মৌলিক সংস্কার এবং অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনের দাবিকে সামনে আনা হবে। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বিকেল ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

যাতায়াত ও সংগঠনিক প্রস্তুতি

সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ট্রেন, বাস ও নৌযান ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের জন্য রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। এসব ট্রেনের যাত্রাসূচী নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে অংশগ্রহণকারীরা সময়মতো রাজধানীতে পৌঁছাতে পারেন এবং সমাবেশ শেষে নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন।

রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের বিশেষ ট্রেন পরিচালনা পূর্বেও ঘটেছে। জামায়াত কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩২ লাখ টাকা আগাম পরিশোধ করে ট্রেনগুলো ভাড়া নিয়েছে, যা রেলের আয় বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। এ সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক নয়, বরং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত বলেই উল্লেখ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা

দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমাবেশ নির্বিঘ্ন করতে সারা দেশ থেকে আগত যানবাহনের জন্য ১৫টি পার্কিং স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্যান ও তার আশেপাশে ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন, যারা শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়াও, ১৫টি মেডিকেল বুথ স্থাপন করা হয়েছে জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য। আটটি উপ-কমিটির মাধ্যমে সমাবেশ বাস্তবায়ন তদারকি করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্য

এই সমাবেশের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে "সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন"। নেতারা আরও বলেন, 'সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর' দাবি তোলা হবে। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধী দলগুলোর উপর দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে সমাবেশটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা

সমাবেশ উপলক্ষে ট্রেন ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়। কেউ কেউ ট্রেন ভাড়ার খরচ ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করলেও রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চূড়ান্ত অঙ্ক ৩২ লাখ টাকা এবং তা পুরোটাই আগাম পরিশোধ করা হয়েছে। বিশেষ ট্রেন পরিচালনায় কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করেছে।

এই জাতীয় সমাবেশ, রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়চিহ্ন হয়ে উঠতে পারে, যেখানে একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল ঢাকায় বৃহৎ জনসমাগম ঘটিয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও জনভিত্তি প্রদর্শন করতে যাচ্ছে। সমাবেশের ধারাবাহিকতা এবং তার প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলেই বিশ্লেষকদের মত।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন