Logo
Logo
×

রাজনীতি

সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নাই

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নাই

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদসহ বিএনপি নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় রাতে নগরীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

এদিকে খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি সেখানে দীর্ঘক্ষণ ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সাথে কথা বলেন।

এনসিপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইমরান আহামেদ ও ইমতিয়াজ আহামেদ ইমতির ওপর জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের হামলা ও আহত করার ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে প্রধান আসামি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমানসহ ১৮ জনের নামে শনিবার রাতে লিখিত অভিযোগ করে থানা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

একপর্যায়ে সেনাবাহিনী রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শমসুজ্জামান শামু, সদস্যসচিব মাহফুজুন্নবী ডন, জেলা সদস্যসচিব আনিসুর রহমান লাকুকেও সেখানে ডেকে জি এম কাদেরের বাসায় হামলায় অংশগ্রহণকারীদের ভিডিও দেখান। এ সময় বলা হয়, এ ঘটনায় তাদের দলের লোকজন জড়িত ছিল কি না। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে অপরাধীদের ধরতে সহায়তা চায় সেনাবাহিনী।

এ সময় ঘটনাস্থলে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ তাদের ফোন দিয়ে কোথায় আছি জানতে চাওয়া হয়। তারা পায়রা চত্বরে আছেন জানালে সেনাবাহিনী সদস্যরা সেখানে চলে আসেন। হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন সেনাবাহিনী।

অপরদিকে বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক শামসুজ্জামান শামুও বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদেরও এখানে ডাকা হয়েছে। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাস ভবনে হামলার ঘটনায় তাদের দলের কারা কারা জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী ওই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও তাদের দেখিয়েছে। আমরা ওই ভিডিও দেখে একজনকে শনাক্ত করেছি। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে- এমন সংবাদ জানতে পেরে রাত ১টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। পোস্ট তিনি লেখেন, ‘রংপুরে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের গ্রেফতার না করে অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের বিব্রত করলে আগামীকাল রংপুরের রাজপথে আবার দেখা হবে। আর আমরা সেখানে সামনের সারিতে থাকবো।’

এর কিছু সময় পর রাত দেড়টার দিকে বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থল পায়রা চত্বরে এসে উপস্থিত হন সারজিস আলম। সেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় পার্টি বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হতে সমর্থন দিয়েছে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের বি টিম। তারা রংপুরে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নিচ্ছে। জি এম কাদের রংপুরে এসে গোপন বৈঠক করে জাতীয় পার্টির আড়ালে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ষড়যন্ত্র করছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর প্রতিবাদ করলে জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করেতে হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলবো। জাতীয় পার্টির নেতা অবৈধ ভোটে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এখন মেয়র পদ ফিরে পেতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা আল্টিমেটাম দেয়, বিক্ষোভ করে। তাদের সঙ্গে কারা কারা আছে এদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি রংপুর নগরীর আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সারজিস আলম বলেন, তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির যে কাউকে হোক জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি রাত ১ টা,২ টা, ওই সময়টাই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমরা প্রত্যাশা করি, তাদের যেকোনও টাইমে দিনের বেলা অফিস আওয়ারে ডেকে নেওয়া হয়। সবাই প্রস্তুত থাকবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য।

সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, ‘শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবকিছু করতে প্রস্তুত, সেটাই আমরা রংপুরে করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যেটা যাবে, সেটা দলমত নির্বিশেষে যে খারাপ কাজ করবে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান খুবই কঠোর। কোনোভাবেই মানুষের ক্ষতি হয়, কোনও কিছু ভেঙে ফেলা– এই জিনিসগুলো করার অবকাশ আমাদের অবস্থানে নেই। এটাই আমাদের বার্তা। 

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন