Logo
Logo
×

অন্যান্য সংবাদ

মুখোমুখি ‘ইসলামপন্থী’ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ এএম

মুখোমুখি ‘ইসলামপন্থী’ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় লালন আনন্দধামে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় লালন ফকিরের ছবি, বেশকিছু গ্রন্থ ও জার্নাল, একতারা, দোতারা, বায়া, জুড়ি, গিটারসহ বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্র। ভাঙচুর করা হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্যও।

নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলাম ও স্থানীয় মুসল্লিদের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে গেছে ‘মহতী সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’ নামের একটি অনুষ্ঠান। ২২ নভেম্বর ও ২৩ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় এই মেলা বন্ধ হয়ে যায়।

মেলায় অংশ নিতে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লালন ভক্তরা এই মেলায় অংশ নিতে আসলেও শেষ পর্যন্ত সবাইকে ফিরে যেতে হয়েছে।

গত প্রায় দশ বছর ধরে নিয়মিত এই মেলা ও অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে আসছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান আয়োজক ফকির শাহজালাল।

সিলেটের শাহ পরানের মাজারে ওরশ উপলক্ষে গত অগাস্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।

গত ছয়ই সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় অবস্থিত দেওয়ানবাগ মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত ২৫শে অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে আয়নাল শাহ দরগা নামে পুরোনো একটি মাজারও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো।

সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে সিলেটের শাহপরাণ মাজারে তিন দিন ধরে ওরশ অনুষ্ঠানে গান বাজনা বন্ধের নির্দেশ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

সেখানেও কিছু মাদকের অভিযোগ এনে কিছু স্থানীয় ‘মুসল্লিদের’ অভিযোগে গান বাজনা বন্ধ করে দেয়া হয়।

দীর্ঘ দিনের এসব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক ফারহানা মানিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যদি মেলায় মাদক ও অনৈতিক কোন কাজ হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসনের উচিত ছিল সেদিকে নজর দেয়া। কিন্তু সেটি না করে মেলাই বন্ধ করে দেয়া হলো। এটা তো কোনো সমাধান না”।

আয়োজক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের অনুষ্ঠানে অনুমতি না দিয়ে প্রশাসন হেফাজতে ইসলামের কাছে নতি স্বীকার করেছে।

আয়োজক ফকির শাহজালাল বলেন, “শুধু অনুষ্ঠান বন্ধ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। এখন আমাকে নাস্তিক বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে”।

তিনি জানান, সেখানে কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা এসেছিলো তাদেরকে পুলিশ এসে চলে যেতে বাধ্য করেছে।

সাংস্কৃতিক কর্মী রাফিউর রাব্বী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বর্তমানে এই ধরনের কর্মকাণ্ড খুব সুদুর প্রসারী খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটিই আমাদের কাছে উদ্বেগের বিষয়”।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসন বলছে একটা পক্ষ এর বিরুদ্ধে এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে কারণে তারাও এটি নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, “এখানে পাঁচশোর ওপরে মাদ্রাসা আছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছিলো। যদি তারা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান করতো এখানে রক্তপাতের শঙ্কা ছিল। এই হামলায় যদি রক্তপাতের ঘটনা ঘটতো এই মুহুর্তে সেটি সামাল দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো। সে কারণে এ বছরের জন্য আয়োজন বন্ধ করা হয়েছে”।

“মিনিমাম ক্ষতিতে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করেছি”, যোগ করেন জেলা প্রশাসক।

কেন বাড়ছে মাজার ভাঙা ও গান-বাজনা বন্ধের ঘটনা?

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিরাজগঞ্জের আলী পাগলার মাজার ও ইসমাইল পাগলার মাজারেও হামলার ঘটনা ঘটে।

সাংস্কৃতিক সংগঠক রাফিউর রাব্বী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একের পর এক এই ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে গান বাজনা বন্ধ হচ্ছে ইদানীং”।

এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে এটি কোন ভাল ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করেন মি. রাব্বী।

পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

হেফাজতে ইসলামের নেতা আব্দুল আউয়ালের অভিযোগ, মেলাকে কেন্দ্র করে মাদক ও অপসংস্কৃতির চর্চার কারণে স্থানীয় মুসল্লিদের দাবির প্রেক্ষিতে তারা মেলা আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি বলেন, “মেলার নামে তারা এখানে গান-বাদ্য ও মেয়েদের দিয়ে নাচানাচি করে। মদ হিরোইন নিয়ে গান বাদ্য বাজিয়ে মানুষকে ডিস্টার্ব করে।” তিনি বলেন, সে কারণে তারা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে মেলা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক ফারহানা মানিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যদি মেলায় মাদক ও অনৈতিক কোন কাজ হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসনের উচিত ছিল সেদিকে নজর দেয়া। কিন্তু সেটি না করে মেলাই বন্ধ করে দেয়া হলো। এটা তো কোনো সমাধান না।” সূত্র: বিবিসি

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন