
বিশ্বে এখন বছর বছরই মানুষের আয়ু বাড়ছে। বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে মানুষ ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড়ে ছয় বছর বেশি বেঁচেছে। বাংলাদেশের মানুষেরও গড় আয়ু ১৩ বছরের বেশি বেড়েছে গত ৩০ বছরে। অন্যান্য দেশেরও কম-বেশি বেড়েছে। গবেষকদের ভাষ্য, ২০২০ সালে করোনা মহামারি না মানুষের গড় আয়ু আরও বাড়তে পারত।
গবেষণার তথ্যমতে , গত তিন দশকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মধ্যে ভুটানের মানুষের আয়ু বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৩.৬ বছর। বাংলাদেশের মানুষের বেড়েছে ১৩.৩ বছর। এছাড়া নেপাল ১০.৪ বছর, ভারত ৮ বছর এবং পাকিস্তান ২.৫ বছর। গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলে ১৯৯০ ও ২০২১ সালের মধ্যে আয়ু সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এসব অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, স্ট্রোক ও ক্যানসার কমেছে। তাই গড় আয়ু বাড়ছে।
ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। গবেষণা দলেল প্রধান বিজ্ঞানী বলেন, আমাদের গবেষণাটির মাধ্যমে বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সূক্ষ্ম চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। একদিকে আমরা ডায়রিয়া এবং স্ট্রোক থেকে মৃত্যু প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখতে পাচ্ছি। একই সময়ে, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে করোনা মহামারী আমাদের কতটা পিছিয়ে দিয়েছে।
কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গবেষকরা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোতে বড় রদবদল দেখতে পেয়েছেন। সেই কারণ করোনা ভাইরাস।
গড় আয়ু বৃদ্ধির নেপথ্যে
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, অন্ত্রের রোগ ডায়রিয়া ও টাইফয়েড কমার কারণে ১৯৯০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে ১.১ বছর। এই সময়ের মধ্যে নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হ্রাসের ফলে বিশ্বব্যাপী আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৯ বছর। এছাড়া স্ট্রোক, শিশুরোগ, হৃদরোগ, ক্যানসারসহ নানা রোগ প্রতিরোধে অগ্রগতি সারা বিশ্বে আয়ু বৃদ্ধি করেছে।
শিশুদের অন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গবেষণার লেখক জানিয়েছেন যে অন্ত্রের সংক্রমণ থেকে শিশুদের মারা যাওয়া কমানো যায় এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। তাই এখন, আমাদের এই রোগগুলি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার দিকে নজর দেওয়া দরকার, টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা এবং সম্প্রসারণ করা দরকার এবং ই. কোলি, নরোভাইরাস এবং শিগেলার বিরুদ্ধে একেবারে নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করা দরকার। এছাড়াও করোনা সম্পর্কে তথ্য প্রদানের পাশাপাশি, গবেষণায় অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিগুলিও প্রকাশ করা হয়েছে, যা প্রতিটি দেশেই বাড়ছে।
গবেষকরা ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ও ক্যানসারের মতো রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ চিত্রের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, অনেক ধরনের অসংক্রামক রোগে মৃত্যু উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে হ্রাস পেলেও নিম্ন আয়ের দেশে তা হয়নি।