Logo
Logo
×

অভিমত

ডনের সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: উত্তেজনা থেকে নতুন সম্ভাবনায়

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:০২ এএম

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: উত্তেজনা থেকে নতুন সম্ভাবনায়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক একসময় খুব খারাপ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছিল। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছিল অনেক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, ঢাকায় যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে রয়েছে, তাদের সময়ে সম্পর্ক কিছুটা নরম হয়েছে, আবারও যোগাযোগ বাড়ছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষ করেছেন। এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেরো বছর পর ঢাকায় এলেন। তাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে। সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি সই হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে নানা খাতে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টাও জানিয়েছেন, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চান।

দুই দেশই সার্ককে আবার সক্রিয় করার বিষয়ে কথা বলেছে। তবে ১৯৭১ সালের ঘটনাকে ঘিরে দুই দেশের অবস্থান এখনো এক নয়। ঢাকা এখনো পাকিস্তানের কাছ থেকে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণ চায়, সেই ভয়াবহ সময়ের জন্য। আর ইসলামাবাদ মনে করে, এই বিষয়গুলো অনেক আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনার সরকার ১৯৭১ সালের যুদ্ধকে পাকিস্তানের প্রতি শত্রুতার কারণ হিসেবে ব্যবহার করত এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করত। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এখন অনেক কিছু বদলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর দেশের ভেতরেই শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ও তার নাম যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি যাকে এক সময় জাতির পিতা হিসেবে মুদ্রায় পর্যন্ত রাখা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার সেই ছবি সরিয়ে ফেলেছে।

এই প্রতিক্রিয়াগুলো মূলত এসেছে কারণ শেখ হাসিনার সরকার শেখ মুজিবকে ঘিরে একধরনের ব্যক্তিপূজা গড়ে তুলেছিল এবং বিরোধীদের দমন করেছিল অনেক কঠোরভাবে। তাই ১৯৭১ সালের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হতেই পারে, তবে সেটা দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। বরং বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জায়গা অনেক আছে।

পাকিস্তান যুক্তি দিচ্ছে যে, ১৯৭৪ সালে তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আর ২০০২ সালে জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ১৯৭১ সালের ঘটনাগুলোর জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছিলেন। সেই হিসেবে অতীত নিয়ে নতুন করে বিরোধ তৈরি না করে, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর বন্ধুত্বের পথে আগানো উচিত।

একই সঙ্গে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করার প্রস্তাব ভালো হলেও, ভারতের অনমনীয় অবস্থার কারণে সেটি এখনই বাস্তবসম্মত নয়। তবে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশ একত্রে যে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা গড়ে তুলেছে, সেটিকে আরও বিস্তৃত করা যেতে পারে। এ অঞ্চলের আরও যেসব দেশ উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে চায়, তাদেরও আহ্বান জানানো যেতে পারে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক ব্যথা থাকলেও, তারা একই সাংস্কৃতিক শেকড় থেকে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষের আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক আবার নতুন করে গড়া সম্ভব। আশা করা যায়, ঢাকায় আগামীতে নির্বাচিত সরকারও এই বন্ধুত্বের পথে এগিয়ে যাবে।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন