Logo
Logo
×

অভিমত

আল জাজিরার মতামত প্রতিবেদন

চুক্তি ভেস্তে গেলেও শেষ হয়নি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই

Icon

এলিজাবেথ রাইজনার

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৩ এএম

চুক্তি ভেস্তে গেলেও শেষ হয়নি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ কমাতে আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় সমঝোতা না হলেও, লড়াই থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কংগ্রেসে আনা হয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক সেফটি অ্যাক্ট, যেখানে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরকে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে গবেষণার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, আর দুই দলের সমর্থনও মিলছে।

তবে প্রতিবছরই প্লাস্টিক উৎপাদন, ব্যবহার এবং মানুষের এর সংস্পর্শ বাড়ছে। তাই শুধু নতুন রিপোর্টের অপেক্ষায় বসে থাকলে হবে না। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত তথ্য আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্কৃতি, ব্যবসা আর নীতিনির্ধারণ—এই তিন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনলেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব কমানো সম্ভব।

মানুষের জীবনযাপনের ধরণেই পরিবর্তন দরকার। কেউ যদি নিয়মিত নিজের ধাতব বা কাঠের চামচকাঁটা নিয়ে বের হন, বাজার থেকে প্লাস্টিক মোড়ানো ফল না নিয়ে পুরো ফল কেনেন, কিংবা স্কুল-অফিসে সবাই নিজের পানির বোতল ও কফির মগ নিয়ে যান, তাহলে এগুলো স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হবে। এমন আচরণ যত বেশি দেখা যাবে, তত বেশি ছড়াবে। হলিউডও চাইলে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ফিলাডেলফিয়ায় দুই বছর আগে একটি চলচ্চিত্র প্রথমবারের মতো শূন্য-অপচয়ের নীতিতে তৈরি হয়, যা একটি দারুণ উদ্যোগ। সিনেমা, টেলিভিশন কিংবা বিজ্ঞাপনেও যদি বারবার পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার দেখানো যায়, তবে তা দর্শকের মাঝেও প্রভাব ফেলবে।

ব্যবসার ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দোকান ইতিমধ্যে প্লাস্টিক ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছে। অনেক দোকানে দানা জাতীয় খাবার বা বাদাম বাল্কে পাওয়া যায়, যেখানে ক্রেতারা নিজেদের পাত্র নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু এমন ব্যবস্থা এখনও খুব সীমিত, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। এমনকি হাই-এন্ড দোকানেও প্লাস্টিকের বিকল্প দেওয়া হয় না। অথচ দুধ এখনও অনেক জায়গায় কাচের বোতলে পাওয়া যায়, যদিও ডিপোজিট ফি বেশি। এই ব্যবস্থা দইসহ অন্যান্য পণ্যেও চালু করা যেতে পারে। ফ্রান্সে একটি নতুন সুপারমার্কেট ইতিমধ্যে সব পণ্য প্লাস্টিক ছাড়াই দিচ্ছে।

রেস্টুরেন্টেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরে এখন রিটার্নেবল কন্টেইনার ব্যবহারের সুযোগ মিলছে। ওয়াশিংটন ডিসি’র মতো শহরগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং বাদ দিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। ফলে মানুষ এখন চাইলে নিজের কন্টেইনার আনতে পারে, অথবা দোকানের দেওয়া পুনর্ব্যবহারযোগ্য কন্টেইনার ব্যবহার করতে পারে। এতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ঝুঁকি কমে।

নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রটি সবচেয়ে কঠিন। সংস্কৃতি ও ব্যবসা দ্রুত বদলালেও নীতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তেল-রাসায়নিক শিল্পের লবি। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধের দাবিতে আইন হচ্ছে, ব্যাগ নিষিদ্ধ হচ্ছে, আর রাজ্য পর্যায়ে প্রস্তাব উঠছে যাতে প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা এর পুরো জীবনচক্রের দায় নেয়। কিন্তু গত ১২ বছরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন প্লাস্টিক কারখানার জন্য ৯ বিলিয়ন ডলারের কর-সুবিধা দিয়েছে।

নীতিনির্ধারকদের মতে, প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো উৎপাদকদের দায়ী করা। স্থানীয়ভাবে যেমন পেনসিলভানিয়ার বিবার ক্রিক এলাকায় ইথেন প্ল্যান্ট চালু হওয়ার পর অর্থনীতি ধসে পড়ে, সেসব জায়গার দায় নিতে হবে তাদের। বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও দায় নিতে হবে, কারণ বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণের কারণে সরকারগুলোকে বছরে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার খরচ বহন করতে হচ্ছে, আর মানুষ ভুগছে প্লাস্টিক থেকে নির্গত হরমোন-বিধ্বংসী রাসায়নিকের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

অন্যদিকে প্লাস্টিক শিল্প একদিকে নিজেদের ক্ষতিকর পণ্য চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে যেন রিসাইক্লিং-ই সমস্যার সমাধান। অথচ বাস্তবে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কার্যকর কোনো সমাধান নয়। এ কারণেই ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য এক্সন মোবিলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছে। এর পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো জাতিসংঘের বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তি নিয়েও বাধা সৃষ্টি করছে।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন