Logo
Logo
×

অভিমত

সফ্টকোর ফ্যাসিস্ট ও সুকুমার রায়ের ষোল আনাই মিছে

কাকন রেজা

কাকন রেজা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম

সফ্টকোর ফ্যাসিস্ট ও সুকুমার রায়ের ষোল আনাই মিছে

ছবি: সংগৃহীত

শুরু করি সুকুমার রায় এর ‘ষোল আনাই মিছে’র শেষ চার লাইন দিয়ে।

মাঝি শুধায়, ''সাঁতার জানো?''- মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, ''মশাই, এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে।”

এক বাম তাত্ত্বিককে দেখলাম ‘ক্রিটিকাল অ্যানালাইসিস’ বিষয়ে আলাপ তুলতে, তখনই সুকুমার রায় এর ‘ষোল আনাই মিছে’ এর কথা মনে পড়ল। প্যারালাইসিস আক্রান্ত বুদ্ধি দিয়ে যারা অ্যানালাইসিস করতে যায় তাদের রাজনৈতিক জীবন মূলত ষোল আনাই মিছে। যদি মিছে না হতো, তাহলে এসব অ্যানালাইসিসওয়ালারাই আমজনতার নেতা হয়ে থাকতেন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। কিছু ডগমাটিক, বুদ্ধিভ্রষ্ট লোকের মাথা হয়ে বসে আছেন তারা।

তারা কেন সাধারণ মানুষের নেতা হতে পারেননি, তা-কি তারা অ্যানালাইসিস করতে পেরেছেন? নিজেদের ব্যর্থতা যারা অ্যানালাইজ করতে পারেন না, তারা কীভাবে ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস করবেন তা আমার বোধে আসে না। কাটমোল্লারা যত না র‌্যাডিকেল তার চেয়ে অনেক বেশি র‌্যাডিকেল এই বাম তাত্ত্বিকরা। কাটমোল্লাদের অনেক সময় বোঝানো সম্ভব হয় কিন্তু সেই পুরানো বাম তত্ত্ব যা বর্তমান দুনিয়ায় সঙ্গতই অপ্রাসঙ্গিক, তা থেকে তাদের বের করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যারা মনে করেন ১৮৫৮ এর তত্ত্ব আলাপ ২০২৫ এর সাথে যাবে, তারা মূলত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ধর্মও যেখানে সময়ের সাথে আপোস করে। সময় বুঝে, ন্যায়-অন্যায় বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে বলে। ইসলামেও যে কারণে ইজমা কিয়াস এর কথা বলা হয়। বাম তত্ত্বে কি কোনো ইজমা-কিয়াস আছে?

কলকাতার বাবু যেমন মাঝি’র জীবনের কতআনা মিছে তার হিসাব করছিলেন, যখন ঝড় উঠলো, তখন দেখা গেল সকল তত্ত্ব তালাশ মিথ্যে, সাঁতারটাই সত্য। জান বাঁচানোর তত্ত্ব জানাটাই তখন বড় কথা। জুলাই চব্বিশের কথা বলি, এই বিপ্লব কোনো তত্ত্ব-তালাশের উপর ভর করে হয়নি। কিছু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও মানুষের ক্ষোভ দুয়ে মিলে এই বিপ্লব হয়েছে। এই বিপ্লবে কোনো মার্ক্সিয় তত্ত্ব কাজ করেনিমাওবাদের আলাপ খাটেনিমেটিকুলাস ডিজাইনও ভুয়াএসব যারা বলেন, তারা মূলত মাঠে ছিলেন নামূল যুদ্ধে ছিলেন নাছিলেন না যাত্রাবাড়ীতে, ছিলেন না উত্তরায়ছিলেন না ব্র্যাক আর নর্থসাউথসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিরোধে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রলেতারিয়েতরা পড়েন না, বাম তত্ত্বের দাঁতভাঙা বাত তাদের জানা নেই। শুধু জানা ছিল, তাদের ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে, সেই জীবনের বিনিময়ে নৃশংস রেজিমের পতন ঘটাতে হবে। এরমধ্যে যারা বাম তত্ত্বের কচকচানি খোঁজেন তারা ইউটোপিয়ান।

বাম তাত্ত্বিকের বেশিরভাগই সফ্টকোর ফ্যাসিস্ট। তারা ফ্যাসিজমের আইকনকে ধরে রাখতে চায়। সেই আইকনের মাধ্যমে তারা মনেপ্রাণে পুনর্বার ফ্যাসিজমের প্রত্যাবর্তন চায়। এদের সাথে মূলত মাজার ব্যবসায়ীদের কোনো পার্থক্য নেই। ধর্ম যাদের কাছে বাণিজ্য। আর সেই বাণিজ্যের পুঁজি হলো মাজার নামের আইকন। একই ভাবে বামদের কাছে আইকন হলো মূর্তি। সেটা হতে পারে শেখ মুজিব কিংবা অন্যকারো। তাদের কাছে সব খারাপ হলেও, সেই মূর্তি পুত-পবিত্র। যেমন হাসিনা আমলে বলা হতো, সব খারাপ কিন্তু হাসিনা ভালো। একই ভাবে এখন সব খারাপ, এমনকি হাসিনাও, শুধু ভালো সেই মূর্তি। কী অদ্ভুত ন্যারেটিভ। এই ন্যারেটিভ দিয়েই পুনর্বার ফ্যাসিজমের প্রত্যাবর্তন সম্ভব। এবং এটা তারা জানে। এই জন্যই বেশিরভাগ বাম তাত্ত্বিককে আমি সফ্টকোর ফ্যাসিস্ট বলি। এরা রাজনীতির নামে বুকের ভেতর ফ্যাসিজমের চারা রোপণ করে রাখে।

আজ মধ্য আগস্টে যখন লিখছি, তখন সামাজিকমাধ্যমে এই সফ্টকোর ফ্যাসিস্টদের গর্ত থেকে মাথা উঁচু করতে দেখা যাচ্ছে। ড. জাফর ইকবালের মতন ফ্যাসিজমের অন্ধ অনুসারীও আজ বচন দেওয়া শুরু করেছেন। অথচ এই জাফর ইকবাল বিপ্লব পরবর্তীতে গ্রেপ্তার হওয়ার কথা। হাজারো তরুণদের হত্যাকাণ্ডে তারও ভয়াবহ রকম প্ররোচনা ছিল। আত্মহত্যার প্ররোচনায় যদি শাস্তি হতে পারে, তবে হত্যার প্ররোচনায় শাস্তির বাইরে থাকা কি উচিত, না সম্ভব? কিন্তু হত্যার প্ররোচনাকারীরা আজ বাইরে। এই ব্যর্থতার দায়ভার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলের। আজকে উল্টো বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। চলছে বিপ্লবীদের চরিত্রহননের কাজ। আর এই কাজে এগিয়ে রয়েছেন সফ্টকোর ফ্যাসিস্টরা। যারা নিজেদের হন্তারক মুখ বিপ্লবের মুখোশে ঢেকে রেখেছেন। এই হন্তারকদের আজ আমরা বিপ্লবী ভেবে প্রকৃত বিপ্লবীদের অসম্মান করার প্রয়াস চালাচ্ছিআমাদের উপর লানত

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন