Logo
Logo
×

অভিমত

বাংলাদেশি নয়, চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচারণা চালাচ্ছে ড ইউনূসের প্রেস উইং

মুক্তাদির রশীদ

মুক্তাদির রশীদ

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

বাংলাদেশি নয়, চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচারণা চালাচ্ছে ড ইউনূসের প্রেস উইং

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সরকারের প্রচারণা তেমন শোনা না গেলেও, বাংলাদেশ থেকে চীনে গিয়ে কী ধরনের চিকিৎসা নেওয়া যাবে তা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রেস উইং।

সম্প্রতি চীন সরকারের খরচে ২৩ জনের একটি দলের প্রধান হিসেবে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ চীন সফরে যান। সেখান থেকেই শুরু হয় চীনের বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচারণা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তরুণ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য অধিকারকর্মী নাভিদ মুস্তাক বাংলা আউটলুককে বলেন, “চীনের চিকিৎসা নিয়ে প্রচারণার দায়িত্ব প্রেস উইং-এর হতে পারে না।” তিনি বলেন, কোন দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন এবং কী কী সুবিধা আছে সে বিষয়ে প্রচারণা করার দায়িত্ব প্রেস উইং-এর নয়। আমরা জানি চীনের অনেক চিকিৎসা ভালো, পাকিস্তানের চিকিৎসাও ভালো, তবে সেরা কোনটি, কে কোথায় কোন চিকিৎসা পাবে, সেটা নিশ্চিত করা বা সে বিষয়ে কথা বলা উচিত চিকিৎসক বা অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। শনিবার সরবরাহকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা এখন চীনের বিভিন্ন হাসপাতালে সহজলভ্য। ইউনান প্রদেশের কুনমিং টংরেন হাসপাতাল এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

হাসপাতালটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেন লিং জানান, সম্প্রতি এক বাংলাদেশি পরিবার তাদের কিশোর পুত্রের চিকিৎসা করাতে এখানে এসেছিলেন। তিন দিনের কুনমিং সফরে থাকা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি রোগীর পরিবারের পাঠানো একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন।

ভিডিও বার্তায় রোগীর বাবা জানান, প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ—ভারতসহ—প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে এবং অন্য কিছু দেশে ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি চীন আসেন। এখানে তিনি সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসা পান। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা শুরুর আগে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা পুরো প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেন এবং পরিবার বিষয়টি বুঝে সম্মতি দেয়।

শেন লিং জানান, কুনমিং টংরেন হাসপাতালে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মী রয়েছেন। ভাষাগত সমস্যার সমাধানে হাসপাতালটি দোভাষী সেবাও প্রদান করে।

৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের বাংলাদেশি সংবাদকর্মী দল কুনমিং সফর করে। শনিবার তারা দেশে ফেরেন।

চীনের চিকিৎসা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এ ধরনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে কোনোভাবেই একটি ভিন্ন দেশের ব্যবস্থার প্রশংসা করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পেশাদারিত্বের মধ্যে পড়ে না।

তিনি বলেন, সরকার চাইলে গত এক বছরে স্বাস্থ্যখাতে কী কী উন্নয়ন করেছে তা উপস্থাপন করতে পারে, কিন্তু যখন ভিন্ন দেশের চিকিৎসা নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত হয় তখন দুটি সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক, বাংলাদেশের হয়ে ভিন্ন একটি রাষ্ট্রের প্রচারণা করে “স্বার্থের দ্বন্দ্বে” জড়ানো, আর দুই, এ ধরনের প্রচারণায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আরও বেড়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, আজকে যখন চীনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সরকার এরকম প্রচারণা চালাচ্ছে, দুদিন পরে দেখা যাবে সেখানকার খাবার বা অন্য কোনো পণ্যের প্রচারণায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুরুজ্জামান খান খসরু বাংলা আউটলুককে বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভারতমুখী চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে চীনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। “আমি মনে করি এ ধরনের উদ্যোগ দেশের স্বার্থবিরোধী।”

বাংলাদেশের উচিত দেশের মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথায় সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। 

এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যাতে বাংলাদেশের চিকিৎসাপ্রার্থী ধীরে ধীরে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। দরকার বাংলাদেশেই আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে দেশের টাকা দেশেই থাকে এবং চিকিৎসার মানোন্নয়নে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে। 

তিনি মনে করেন, সরকারকে এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে কিভাবে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন