আমাগো শুরু কবে পলাশীর প্রান্তরে, সাতচল্লিশ না একাত্তরে?

ছবি: সংগৃহীত
আইজকা প্রমিত না খাস বাংলায় লেখলাম। আমাগো রাজনীতির আলাপ আমাগোর ভাষাতেই কই, কলিকাতার চালায়া দেয়া ঘটি বাংলায় না কই। আমাগো একজাতের তাত্ত্বিক গজাইছে, যাগো আলাপ শুরু হয় একাত্তর থাইকা, যেন এর আগে আমাগো পূর্বপুরুষগণের কুনো জাতিসত্তা আছিল না, ভাষা আছিল না, ধর্ম আছিল না, সংস্কৃতি আছিল না, সব শুরু হইছে একাত্তর থাইকা তাও কলিকাতার আলাপে, ভাষায়, বয়ানে।
স্বীকার করি আর না করি, আমাগো প্রথম আজাদি হইলো ৪৭-এ। যখন রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক আছিল মুসলিম লীগ আর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। হ্যারা প্রাসঙ্গিক আছিল বইলাই শেখ মুজিব’রা স্লোগান দিছিল ‘চিড়কে ছাতি সিনা টান, লড়কে ল্যাঙ্গে পাকিস্তান’। ৪৭ এর পাকিস্তান না হইলে এবং আমরা পাকিস্তানের অংশ না হইলে কী হইতো? হইতো, আমার ভারতাধীন থাকতাম। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ‘সং’ হিসাবে পূর্ববঙ্গ হইয়া। আইজকা আমাগো গাওন লাগতো ‘জনগণ মন জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা’। হ, এইডাই আর আমাগো স্বাধীনতা-পতাকা-ভূখণ্ড এইসবের আলাপই তোলা যাইতো না। হ্যার উপর দিয়া ‘ইয়ে’ স্যাররা তো আছেনই জাতিবাদী চিন্তার ধ্বজা লইয়া।
যাউকগা কথা হ্যাইডা না। পাকিস্তান না হইলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পারতাম না, দেখতে দেয়া হইতো না। ৪৭ এর পাকিস্তান অর্জন পর্যন্ত মুসলিম লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আমাগো বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক আছিল। জিন্নাহও প্রাসঙ্গিক নেতা হিসেবে। কিন্তু দিন যাইতো লাগলো আর আমাগো উপর শোষণ-নির্যাতন বাড়তে লাগলো পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর। ৬৯ এ আইসা আমাদের কাছে মুসলিম লীগের রাজনীতি পুরা অপ্রাসঙ্গিক হইয়া দাঁড়াইলো। জিন্নাহ সেও। আর একাত্তরে তো মুসলিম লীগ পুরাই বাতিল মাল।
৬৯ থিকা আওয়ামী লীগ আমাগো রাজনীতিতে হইয়া উঠলো প্রাসঙ্গিক। নেতা হিসেবে শেখ মুজিব। কিন্তু একাত্তর থিকা ৭৫ এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগও সেই মুসলিম লীগের পথ ধরলো, ক্রমেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হওয়া শুরু করলো দলটা। নেতা হিসেবে শেখ মুজিবও। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার সবই ভুলুণ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ৭৫ এর আগস্টের আগ পর্যন্ত। এককথায় আওয়ামী লীগ সে সময়েই অপ্রাসঙ্গিক হইয়া উঠে দেশের রাজনীতিতে। মুসলিম লীগ যেইভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করছিল এই ভূখণ্ডের মানুষের লগে, একই ভাবে আওয়ামী লীগ একই কাম করছে একই মানুষের লগে।
যার ফলেই ৭৫ এর ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে সংঘটিত হয় প্রথম বিপ্লব, সিপাহী-জনতার বিপ্লব। সেই বিপ্লবও বেহাত হইয়া যায় ৮১ তে জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরণের মধ্যে দিয়া। এরপর রাজনীতিকরা আর রিস্ক লইতে চায় নাই। একধরনের কম্প্রোমাইজের রাজনীতি চালু করে। কইতে পারেন কম্প্রোমাইজের রাজনীতিটা কিমুন। কম্প্রোমাইজ হইল ভারতরে দাদা মাইনা লইয়া, তার সঙ্গে বুইঝা-সুইঝা চলন আর কী। জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর বিএনপি খুব বেশি দিন টিকতে পারে নাই, কম্প্রোমাইজ না করনের লাইগা। তারপর তো এরশাদের যুগ। ভারতের অন্ধ আনুগত্যের যুগের শুরুয়াত করেন এরশাদ সাব। শুরু করে এটমিক রিঅ্যাক্টর ভাইঙ্গা। ভারতের ভয় আছিল জিয়া এইডা বানাইছিলেন মূলত এটম বোমা তৈরি জইন্যে। তারপর ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান, মনে লইয়েন, ওইডা গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব না। যার ফলেই কম্প্রোমাইজের পলিটিক্স থাইকা বাইর হওনের খুব একটা আশা করে নাই বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ। তয় নিরেট আনুগত্যের জায়গা থাইকা রাজনীতি অনেকটাই বাইর হইয়া আসছিল। সেই ধারাই চইলা আইতাছিল এক-এগারোর আগ পর্যন্ত। তারপর ফখরুদ্দিন আর মঈনুদ্দিন মিলা তো দেশটা ভারতের কোলে তুইলা দিল। শুরু হইলো এক ভয়াবহ আনুগত্যবাদী রাজনীতির অনুশীলন। দাদা হইয়া গেল স্বামী। দিদি হইয়া গেল রক্ষিতা। সেই অনুশীলনে আওয়ামী লীগ হইলো প্রধান অংশীজন, আর সিপিবি ঘরানার দুই-চারটা বামদল হইলো এক-আনা দুই আনার পার্টনার। অবশ্য এরা এখন নিজেদের বিপ্লবী কয়। এগো কথা ধরি না। ধরলেই এগো কপাল খুলে। চব্বিশের জুলাই পর্যন্ত চললো সেই আনুগত্যের অনুশীলন।
কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেই আনুগত্য মানে নাই। দিল্লির আনুগত্য তো এই ভূখণ্ড মনেপ্রাণে কখনোই মানে নাই, মানবো না আগামীতেও এইডা নিশ্চিত। রাস্তায় যখন স্লোগান ওঠে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, তখন বোঝা যায়, মানুষের স্পিরিটটা কী। চব্বিশের জুলাইয়ে দ্বিতীয়বারের মতন বাংলাদেশে সংঘটিত হইলো দ্বিতীয় বিপ্লব। ৩৬ জুলাই। দিল্লির আনুগত্যবাদী, বাংলাদেশের জন্য অপ্রাসঙ্গিক রাজনীতির পতনের দিন। মুশকিল হইলো আমরা ৭৫ এর সিপাহী-জনতার বিপ্লবকে ধইরা রাখতে পারি নাই। পারি নাই আমাদের রাজনীতিবিদগো লোভের জইন্যে। অসততার লাইগা। বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। আমাগো সিরাজ যেমন আছে মীরজাফরও তো আছে।
আইজ ৫ আগস্ট শেষ, ৬ আগস্ট চলে। বিপ্লব ২.০ যেমন বাংলাদেশ ২.০ দিছে আমাগো, তেমনি আজ রাইত থাইকাই নয়া আশঙ্কার শুরু হইছে। করছে সেই বাংলাদেশ বিরোধী ভারতীয় আনুগত্যবাদী রাজনীতির বি টিমেরা। মানিক মিয়া অ্যাভিনু’তে যখন লাখো মানুষের ঢল। মানুষ যখন উদযাপানে ব্যস্ত দ্বিতীয় স্বাধীনতা, তখন অন্যদিকে বি টিম ব্যস্ত কাইজা সৃষ্টিতে। যাতে মানুষের দৃষ্টি চইলা যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনু থাইকা সেই কাইজার দিকে। সকালে এনসিপির পাঁচ নেতারে লইয়া প্যাঁচ লাগাইলো। পিটার হাস আছে অ্যামেরিকায় জ্বিন চালান দিয়া কয়টা উজবুক সাংবাদিক নামের সাংঘাতিক কইলো পিটার হাসের লগে বৈঠক করতে তারা আইছে কক্সবাজার। ছাগলামির একটা মাত্রা থাকা উচিত। তারপর কেউ কেউ কইতে শুরু করলো, পাঁচ নেতা জাতীয় অনুষ্ঠান থুইয়া কক্সবাজার আইলো কেন, এমুন কথা। যারা কইলো তাগো গত দিনগুলার সামাজিকমাধ্যমের পোস্ট দেখেন হ্যারা এনসিপিরে দল আর এগো নেতা বইলা মানে কিনা। মানলো শুধু ক্যাওয়াজ লাগানের লাইগা। তয় ব্যাপারটা এনসিপির জইন্যে খারাপ হয় নাই। নেগেটিভ প্রচারও কুনো সময় পজিটিভ ফল দেয়। এনসিপিরে আনুগত্যবাদীদের বি টিমরাই টিকায়া রাখবো এমুন আলাপ তুইলা।
এনসিপি’র প্যাচাল বাদ দেই। রাজনীতিরি প্যাচাল শুরু করলে পরে সবের লেজ ধইরা টান পড়বো। কারো লেঞ্জাই লুকানোর অবস্থায় নাই। তা না থাক, রাজনীতিতে ল্যাঞ্জা থাকেই, তয় ল্যাঞ্জাটা ছোট হইলেই ভালো। এখন আসি ড. ইউনূস কইছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। কথা বলতে গেলে ফাইনাল, অন্তত ইউনূসের দিক থাইকা। কিন্তু যারা নির্বাচন করবেন, তাদের ঘর কী ঠিক আছে, নাকি ‘খোদা রক্ষা কর অবস্থা’, ভাইবা লইয়েন। আপনেগো নিজেগো ক্যাচালের লেঞ্জা ধইরা যেন আবার এক-এগারো ঢুইকা পড়ে।