Logo
Logo
×

অভিমত

জুলাই বিপ্লব যাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে পারেনি তারা রাজনীতিতে পরিত্যাজ্য

কাকন রেজা

কাকন রেজা

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম

জুলাই বিপ্লব যাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে পারেনি তারা রাজনীতিতে পরিত্যাজ্য

কদিন আগেই লিখেছিলাম জুলাই বিপ্লব যাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে পারেনি তারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে পরিত্যাজ্য। জুলাই বিপ্লব মানুষের চিন্তায় পরিবর্তন এনেছে। মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করতে শিখেছে। তারা শুধু প্রতিবাদ নয় প্রতিরোধ করতেও শিখে গেছে। মিটফোর্ডের ঘটনা তার প্রমাণ। মানুষ অন্যায়কে আর বরদাশত করতে রাজি নয়। জেনারেশন জেড জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ চলবে এবার নতুন পথে। পুরানো রাজনীতির পচা গলিতে নয়। 

সম্ভাব্য ক্ষমতাসীনদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলাম বিগত সময়ে আমার বিভিন্ন লেখায়। অনেকে বিরক্ত হয়েছেন, কেউ কেউ দেখে নেয়ার কথাও বলেছেন। যেমন বলতেন ফ্যাসিস্ট রেজিমের বরকন্দাজরা। কিন্তু দেখে নেয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে সেই ভুল শুধরে নিলে হয়তো আজ এদিন দেখতে হতো না। আজ রাতে যখন লিখছি, তখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মিছিল হচ্ছে। মানুষ পথে নেমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, ঢাকা কলেজ, ইডেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সাথে। যেন জুলাই আবার জেগে উঠেছে। 

আমার এক লেখায় বলেছিলাম, যে নেতা স্মার্টফোন চালাতে পারে না, তার পক্ষে বর্তমান বাংলাদেশ চালানো অসম্ভব। এমন নেতা অনেক আছেন বাংলাদেশে। যারা এখনো প্রযুক্তি ও মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে। সে কারণেই চব্বিশের ৩৬ জুলাই দুপুরেও তারা বুঝতে পারেননি ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন ঘটেছে। তারা সময় থেকে পিছিয়ে আছেন, তারা ভবিষ্যৎ দেখতে অক্ষম। তারা ৩৬ জুলাইয়ের পর মনে করেছিলেন, আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। সেই ফ্যাসিস্ট রেজিমের ‘বিকল্প দেখান’ কথাটার মতন। কথাটা অবশ্য মিথ্যে ছিল না, তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। কিন্তু তারা মানুষের সেই বিশ্বাস ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ক্রমাগত। সেই ব্যর্থতারই নজির মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। না, শুধু একটা ঘটনাতেই বিস্ফোরণ ঘটেনি। বিগত কিছুদিন ধরেই নানান ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছিল। গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে শোনা যাচ্ছিল নানান অঘটনের কথা। সম্ভাব্য ক্ষমতাশীন দলটি এসব অঘটন সামলাতে পারছিল না। যার ফলে ক্রমেই বিতর্কিত হচ্ছিল, মানুষ সমালোচনা করছিল বিভিন্ন বিষয়ে। তারপরও মানুষের আশা ছিল দলটি নিজেদের সামলে নেবে। মিটফোর্ডের ঘটনা মানুষকে আশাহত করেছে। 

এখন প্রশ্ন থাকে, যে দলটি গত দেড় দশক ধরে চরম নির্যাতিত। বলতে গেলে, মজলুমের দল। সে দলটি কেন জালিমে পরিণত হতে যাচ্ছে। যাচ্ছে তাদের সেই আনস্মার্ট নেতাদের ব্যর্থতায়। যারা জেনারেশন জেডকে বুঝতে অক্ষম, যারা বর্তমান সময়কে বুঝতে ব্যর্থ। যারা ধরতে পারেনি সাধারণ মানুষের পালস। মানুষের আকাঙ্ক্ষার সাথে তারা নিজেদের টিউন করতে অসফল হয়েছে। তাদের মন ও মননে সেই আগের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির রাজনীতিই বাসা বেঁধে আছে। 

অবশ্য সম্প্রতি দলটির মহাসচিব বলেছেন, তারা জেনারেশন জেড-কে বুঝতে সক্ষম নন। জেনারেশন জেড যে তাদের চেয়ে এগিয়ে একথাটিও কায়ক্লেশে তার মুখ দিয়ে বের হয়ে এসেছে। তিনি বলেছেন, ‘জেনারেশন জেড তথা জেন-জি’দের সাথে তাদের পরিচয়টা বাড়ানো দরকার। আমাদের তরুণরা আমাদের চেয়েও অনেক বেশি যোগ্য হয়ে উঠছে এবং তারা এ দেশে ভবিষ্যতে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’ 

কেন যেন মনে হচ্ছে এই কথাগুলো, সরল স্বীকারোক্তিগুলো আগে করা গেলে আরো ভালো হতো। এখন সময় এমন একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যেখানে জেনারেশন জেড আর জেনারেশন জেড-কে বুঝতে না পারা নেতারা মুখোমুখি। প্রশ্ন হলো, সম্ভাব্য ক্ষমতাশীন দলকে এমন মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় হতে হলো কেন! তবে কি এটা কোনও ষড়যন্ত্র? সম্ভাব্য ক্ষমতাসীনদের যদি জুলাই বিপ্লবের মূল ফোর্স থেকে আলাদা করা যায়, তাহলে দলটি ভীষণ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়বে। মিটফোর্ডের ঘটনায় তারই আলামত দেখা যাচ্ছে। কারা সম্ভাব্য ক্ষমতাশীন দলটির ভেতর থেকে প্রতিনিয়ত জুলাই বিপ্লবের তরুণদের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করে চলেছে। কারা দলটিকে  ক্রমান্বয়ে বন্ধুহীন করে তুলছে, যাতে দলটি বাধ্য হয়েই ফ্যাসিস্টদের মতন পার্শ্ববর্তী একটি দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যাতে তারা আবার নতুন ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে। 

নতুন করে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠলে, অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমকে প্রহরা দিয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর একটি অশুভ অংশ। এরা পুরো বাহিনীকেই জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। মূলত ফ্যাসিস্টরা হয়ে উঠেছিল বাহিনী নির্ভর। সিভিল প্রশাসনের ক্ষেত্রেও একই কথা। বাহিনী ও প্রশাসন ফ্যাসিস্টদের টিকিয়ে রেখেছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু সম্ভাব্য ক্ষমতাশীন দলটি যদি নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে, তবে কি বাহিনী ও প্রশাসনের তেমন সহযোগিতা পাবে? পাবে না। কারণ জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে বাহিনী ও প্রশাসন বুঝতে পেরেছে জনগণের বিপক্ষে গিয়ে টিকে থাকা যায় না। বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং সম্ভাব্য ক্ষমতাশীন দলটির নব্য ফ্যাসিস্ট হওয়া বলা যায় অসম্ভব। বাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া দলটির ক্ষমতায় টিকে থাকাও সম্ভব নয়, যদি তারা বর্তমানের মতন ভুল করে এবং ভুলের কারণে ক্রমাগত বন্ধু হারাতে থাকে। 

এদিকে গণমাধ্যমও সম্ভাব্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেই। কারণ তাদের বেশিরভাগই বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের পোষ্য। তারা চাইবে সম্ভাব্য ক্ষমতাশীন দলটি যেন মিটফোর্ড ঘটনার মতন ক্রমাগত ভুল করতে থাকে। আর সেই সব ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা চালাবে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন। একটা সত্য ঘটনার সাথে দশটা মিথ্যের মিশেল দিয়ে দলটির ভাবমর্যাদার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। উল্টো দিকে দলটি ঘটনাসমূহের সাথে যে তারা জড়িত নয় কিংবা ঘটনাগুলোর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই এমন ব্যর্থ বয়ান তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, ফলে দূরত্ব আরো বাড়বে জেনারেশন জেড ও সাধারণ মানুষের সাথে। ফলে দলটি ক্ষমতায় গেলেও দ্রুত ক্ষমতা হারানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।  

তাই বলছি, এখনো সময় আছে। যারা তরুণদের সাথে দলটির বিরোধ করতে চাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে তাদের যারা দলটিকে বন্ধুহীন করে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের উপর নির্ভরশীল করতে চাচ্ছে। যাতে নির্বাচন করতে সেই দেশের পররাষ্ট্র সচিবকে পাঠাতে হয়। অতীত যার সাক্ষী। নির্বাচন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সব যেন সেই দেশের ইশারাতেই চলে। যেমন, আগে চলতো। দলটির এই ক্ষতিকর অংশটিকে দ্রুত চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করতে হবে, না হলে উপরে যা বললাম শেষমেশ তাই হবে। তাদের বিকল্প থাকলেও পরিণতির কোনো বিকল্প থাকবে না। -

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন