Logo
Logo
×

অভিমত

চিরায়ত সংঘাতের অংশ ইজরাইলের ইরান আক্রমণ

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম

চিরায়ত সংঘাতের অংশ ইজরাইলের ইরান আক্রমণ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের গ্রাম কিংবা মফস্বলের রাজনীতিতে প্রায়ই দেখা যায় নেতারা কারও উপর প্রতিশোধ নিতে কিংবা ক্ষোভ ঝাড়তে তাদের চ্যালাচামুণ্ডা, কিশোর গ্যাং কিংবা টোকাইদের ব্যবহার করে থাকে। জেলা ও বিভাগীয় শহরের রাজনীতিতে একটু সামান্য পার্থক্য থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি তথৈবচ। গ্রামের রাজনীতে এক প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি কিংবা এক বোতল সেভেন আপের জন্য যেমন অনেক নিরীহ মানুষের কল্লা ফাটানো হয়, তেমনি ঘটনা শহরেও ঘটে। তবে পরিস্থিতি একটু আলাদা। 

ধরা যাক, কোনো শহরের একজন বড় নেতা কিংবা পাতি নেতার কারও উপর চরম ক্ষোভ। কিংবা কোনো পাতি নেতা এক এলাকা থেকে চাঁদা নিতে চাচ্ছে কিংবা কোনো বাড়ি বা দোকান দখল করতে চাচ্ছে। বিশেষ কোনো ব্যক্তি কিংবা পরিবারের প্রভাবে তারা সেটা করতে পারছে না। তখন এই পাতিনেতা সরাসরি তার বুদ্ধি খাটায় কিংবা বড় নেতার পরামর্শ নেয়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে সরাসরি গণ্ডগোলে না জড়িয়ে স্থানীয় কোনো ডান্ডিখোরকে কাজে নামায়। 

বড় নেতা কিংবা পাতি নেতার নির্দেশক্রমে মহান ডান্ডিখোর তখন মাঠে নামে। সে একটা পলিথিনের ব্যাগ ভর্তি করে জুতার আঠা নেয়। তারপর আয়েশী ভঙ্গিতে পলিথিনের একপাশের ছিদ্রপথে মুখ লাগিয়ে সেই গ্যাস টানতে টানতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির উপর চড়াও হয়। তখন মুখভর্তি থুতু নিয়ে ঐ ভদ্রলোকের গায়ে মেরে দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে ডান্ডিখোর বেশি উত্তেজিত হলে বড় বাঁশ নিয়ে গিয়ে ভিক্টিমের মাথায় ধড়াম করে একটা বাড়ি মেরে আসতেও দ্বিধা করে না। তারপর ঐ ভদ্রলোক মাটিতে রক্তাক্ত হয়ে কাতরালেও দেখার কেউ থাকে না। কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখলে মনে করে টোকাই-ডান্ডিখোর ডান্ডা দিয়ে মাথায় বাড়ি দিয়েছে, এটা কোনো বড় ঘটনা নয়। 

মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতায় ইজরাইল হচ্ছে ঐ ডান্ডিখোর তথা টোকাই যাকে মাঠে নামিয়েছে পশ্চিমারা। তারা চাইছে এই এলাকায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করতে। নানা শান্তি চুক্তি আর সভ্যতার মুখোশে তারা সরাসরি হামলা করে ইরানকে গুঁড়িয়ে দিতে পারছে না। তাই তারা তাদের পক্ষ থেকে ডান্ডিখোর টোকাই হিসেবে ইজরাইলকে মাঠে নামিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে দুর্বিনীত এই নোংরা কাজটা ইজরাইল করে দিচ্ছে দেখে কমবেশি তারা সবাই খুশি। 

অনেকে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বললেও জার্মান চ্যান্সেলর সম্প্রতি যে বিবৃতি দিয়েছেন তা অনেকেটা ‘হাউন আঙ্কেলের প্যান্টের চেইন খুলে ইয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো’। তার এই খোলামেলা বক্তব্য বাস্তবতার নিরীখে  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি সরাসরি বলেই ফেললেন—“ইসরায়েল আমাদের হয়ে যেই ল্যাংটা কাজটি করে দিচ্ছে, সেটা আমাদের সকলের জন্যই করছে।” এখানে কোনো কূটনৈতিক ভণিতা নেই, বরং সরাসরি স্বীকারোক্তি। এই বক্তব্য আসলে ইসরায়েলের প্রতি কেবল একক সমর্থনের প্রকাশ নয়—এটা গোটা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ, ইসরায়েল যা করছে, তা আসলে ওয়েস্টার্ন ইন্টারেস্টেরই প্রতিনিধিত্ব করছে।

ইসরায়েলকে নিছক একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে দেখা ঠিক নয়। এটি মূলত ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাদের একটি সম্প্রসারণ—আরো নির্দিষ্ট করে বললে, আমেরিকার একটি কার্যকর অঙ্গরাজ্য বা সামরিক ফ্রন্টলাইন। তাই ইসরায়েল ঠিক কী চায়, সেটা বোঝার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ওয়েস্ট কী চায় এবং আমেরিকা কী চায়, সেটা বোঝা। 

মধ্যপ্রাচ্যকে পশ্চিম যেভাবে দেখতে চায়, তার সবচেয়ে পরিষ্কার রূপ আমরা দেখি আমিরাত, কাতার বা সাম্প্রতিক সৌদি আরবের মতো রাজতান্ত্রিক দেশে। প্রভুভক্ত কুকুর যেমন এক টুকরা রুটি কিংবা বিস্কুটের জন্য তার প্রভুর পা চেটে দেয় সারাদিন। তেমনি এই দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের অনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাদের জিহ্বা সবসময় মার্কিনীদের জুতার শুকতালুর নিচে দিয়ে রাখে। আর এজন্যই হয়তো এখানে গণতন্ত্র নেই, তবুও এই দেশগুলো পশ্চিমাদের জিগরি দোস্ত। কারণ তাদের এই ঘৃন্য মানবতাবিরোধী রাজতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা তাদের জন্য তুলনামূলক সহজ।

পক্ষান্তরে যেসব দেশে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, সেখানে ইসলামিক পরিচয় ও ধর্মীয় অনুভূতি রাজনৈতিক চাহিদার সঙ্গে মিশে গিয়ে পশ্চিমের কাছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে ওঠে। আমরা জানি যে, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরান—এই দেশগুলোতে নানা ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কিছুটা হলেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সেখানে আর যাই হোক সৌদি আরব, কাতার, জর্দান কিংবা আমিরাতের মতো নির্লজ্জ্ব রাজতন্ত্র ছিল না। তাদের দেশে সামান্য হলেও মানবাধিকারের অস্তিত্ব ছিল।

এই দেশগুলোর উপরেই নানা অযুহাতে হামলে পড়েছে পশ্চিমা শক্তি। তারা এই দেশগুলোকেই বিভিন্ন অজুহাতে ধ্বংস করেছে। তাদের নানা অযুহাতে কারণে অকারণে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা। অথচ রাজতান্ত্রিক কোন রাষ্ট্রে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ দেখা যায় না। কারণ সেসব দেশ খেয়াল খুশি মতো তাদের জন্য পরিচালনাযোগ্য। আর এই দেশগুলোর কথিত রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে পশ্চিমাদের পদলেহন করার জন্য। ওদিকে ইসলামিক বিশ্বের যে অংশে কিছুটা হলেও রাজনৈতিক সচেতনতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ছোঁয়া আছে, সেটাই পশ্চিমের আসল শঙ্কার উৎস। আর তাদের সেই শঙ্কা থেকে ধ্বংস করা হয়েছিল লিবিয়া, মিসর, ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানকে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইরানের নামটিও। 

সভ্যতার সংঘাতের প্রাচীনতম সূত্র মেনে সেই ক্রুসেড এখনও চলমান। বাস্তবে ইজরাইলের ইরান আক্রমণ মূলত এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের নিছক সংঘাত নয়। বরং এটি ইসলামি সভ্যতার সঙ্গে পশ্চিমা জুদিও বাইব্লিক্যাল সভ্যতার চিরন্তন সংঘাতে বর্তমান রূপ। তবে আজকের জুদিও-বাইব্লিক্যাল আক্রমণকারীরা তাদের সভ্যতাকে চিরচেনা ধর্মীয় অনুশাসনের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখেতে পারে নাই। তারা বাস্তবে তাদের ধর্মকে তারা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে রূপান্তর করেছে। তাদের এই সংস্কৃতির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হিংসা, জিঘাংসা আর সীমাহীন রক্তপাত। 

তাহলে তারা যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা এই বুলি ফেরি করে বেড়াচ্ছে তার বাস্তব উৎস কোথায়? বাস্তবে এগুলো অনেকটা প্রতিষ্ঠিত গালগল্পের মতো যা মূলত তাদের ধর্ম তথা রূপান্তরিত ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত। আর তাদের চিরচেনা সংঘাতময়, রক্তাক্ত দখলের সংস্কৃতির আধুনিক ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এভাবেই। বাস্তবে সুন্দর এই ব্যাখ্যা নিয়েই তারা আজকের বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করছে। আর ফলাফল হিসেবে দখল করছে একের পর এক দেশ। 

নানা কারনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো এখন এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে। কারণ এদের অধিকাংশের আইন ও রাষ্ট্র কাঠামোতে ইসলামের অস্তিত্ব নাই। তারা যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে নামে ইসলামী, কাজে-কর্মে-আইনে-বিচারে এখনও পোস্ট-কলোনিয়াল ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্কের অধীন। নবগঠিত এই রাষ্ট্রকাঠামো একদিকে যেমন পুরোপুরি পশ্চিমের প্রতিনিধিত্ব করে না অন্যদিকে তারা ইসলামি চিন্তা ও চর্চাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারে না। ফলে এই দেশগুলোর অবস্থা সেই ক্ষিপ্ত কুকুরের মতো যে দৌড়ে পার হতে দিয়ে কোনো বেড়ার ফাটা বাঁশের চিপায় তার অন্ডকোষ আটকে ফেলে মরণচিৎকার দিচ্ছে। 

ইসলামী রাষ্ট্রগুলো না পারছে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পুরোপুরি আলাদা করে দিতে, না পারছে আইনি কাঠামো ও রাজনীতি ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্গঠন করতে। প্রথম পথটি ধীরে ধীরে গ্রহণ করছে কিছু দেশ। তারা পশ্চিমের পুরোপুরি ভৃত্য হিসেবে বেশ নন্দিত হয়েছে। তারা হাজারও অপকর্ম করলে কেউ তাদের টিকিস্পর্শ করতে পারছে না। যার ফলে এক ধরনের হাইব্রিড সিস্টেম দেখা যাচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের নামে আর তার বেনিফিট পুরোটাই যাচ্ছে পশ্চিমাদের ঘরে। 

পুরাতন এই দ্বন্দ্ব আরও জটিল হয়ে ওঠে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। এ যুদ্ধকে শুধু মুসলিম বনাম ইহুদি রাষ্ট্রের লড়াই হিসেবে দেখলে তা ভুল হবে। এটি পশ্চিমা ব্লকের একটি পরিকল্পিত ও কাঠামোগত অভিযানের অংশ। জি-৭ তাদের বৈঠকের পর কোনোরকম ভিন্নমত পোষণ না করে ইজরাইলের হিংস্রতার পক্ষেই একপেশে বিবৃতি দিচ্ছে। এই যে তাদের অন্ধ সমর্থন, অনৈতিকভাবে খুনীদের পাশে থাকা, তা আসলে তাদের এই দীর্ঘমেয়াদি সভ্যতাগত অবস্থানেরই অংশ।

আমরা তর্কের প্রয়োজনে মেনে নিচ্চি, ইরান নিখুঁত রাষ্ট্র নয়—তবুও আন্তর্জাতিক আইনের বিচারে তার আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ইরানের যেসব মিত্র আছে—রাশিয়া, চীন বা কিছু আরব রাষ্ট্র—তারা প্রকাশ্যে ইরানের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। কারণ এদের সম্পর্ক আদর্শগত নয়, বরং কেবল স্বার্থনির্ভর। চীন, রাশিয়া ও ইরানের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বিভাজন আজও স্পষ্ট। ইরান পারসিয়ান—আরব নয়, আবার পশ্চিমাও নয়। এই বিভাজনের মুখে দাঁড়িয়ে ইরান সাংস্কৃতিক দিক থেকে পুরোপুরি একা এক নিঃসঙ্গ শেরপা। 

ইজরাইলের সাম্প্রাতিক হামলার মূল কারণ ইরান সম্ভবত একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যাকে এখনো পশ্চিম ও আমেরিকা রাজনৈতিক ইসলাম বিষয়ে অবস্থানের সূত্র ধরে চরম মাথা ব্যথার কারণ মনে করে। তাদের হিসেবে তাই ইরানকে যদি সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যায়, ইরানকে যদি পুরোপুরি বোমা মেরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া যায়; তাহলে আর কিছু না হোক পশ্চিমা সভ্যতার এক নিরঙ্কুশ জয় বলে তারা মনে করে।

অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার নিযুক্ত ইজরাইলের খুনে বাহিনীর আক্রমণে ইরান ভূলুণ্ঠিত হলেই কী তাদের হাজার বছরের সভ্যতার সংঘাত শেষ হবে? ওদিকে ইরান যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কি এতে ইসলামিক বিশ্ব নীরব থাকবে? শিয়া-সুন্নি মতবাদ সামনে এনে পেট্রোডলার খাওয়া সারমেয়েতুল্য মুফতিরা আনন্দে হাততালি দেবে? নাকি তখন হয়তো নতুন নতুন মোড়কে, নতুন নতুন ইনসার্জেন্সির জন্ম হবে। কারণটা আমি আগেই বলে দিয়েছি যে, নব্য ক্রুসেডের এই যুদ্ধ রাষ্ট্রের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়—এটা আদর্শ, সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের মধ্যে লড়াই।

আমি মনে করি, হান্টিংটনকে ভুল প্রমাণ করে এই যুদ্ধ এতো সহজে শেষ হবে না। আমরা সবাই চেয়ে দেখব সবার চোখের সামনেই এই সংঘর্ষ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠবে। এতোদিন ইজরাইল একা মেরে এসেছে। নতুন করে বিশ্ব দেখবে তাদেরকেও মার খেতে হচ্ছে। আর আঘাত পাল্টা আঘাতে জন্ম নেবে নিত্য নতুন হিংস্রতা। তবে ইসরাইলের লাগাতার হামলার ও হত্যাযজ্ঞের বিপরীতে পাল্টা আঘাত কিংবা আত্মরক্ষার গল্প পুরোটাই হাস্যকর। কারণ তাদের হিংস্রতার বিপরীতে প্রতিপক্ষের জবাব এতোটাই ঠুনকো যে ধর্তব্যের মধ্যে নয়। 

অনন্ত যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে হুট করে মন্তব্যের দিকে না গিয়ে একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। ---

ঘটনাস্থল কুষ্টিয়া। সেখানে ক্ষিপ্ত হলে একজন প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর বাড়িতে মানুষের গু নিক্ষেপ করে আসে কিংবা মেথরদের টাকা-পয়সা নিয়ে শত্রু প্রতিবেশীর বাড়িতে মানুষের টাটকা গু ঢালায়। তাদের এই গু ঢালার প্রক্রিয়া নিউক্লিয়ার চেইন রিয়্যাকশনের মতো চলতে থাকে। এক বাড়িতে গু ঢালার পর সেটা পরিষ্কার করে মেথররা প্রচুর টাকা পায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনেকের বাড়িতে গু ঢেলে আসে। কারণ পরের দিন সেই গু সাফ করতে গেলেই প্রচুর টাকা। ওদিকে টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনেক মানুষ তাদের বাড়িতে ঢালা গু নিজেরাই ঝাঁটা হাতে সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলে। তখন ঐ বাড়িগুলো থেকে মেথরদের টাকা পয়সা আয়ের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। 

তাদের আয় বন্ধ হতে দেখে ক্ষিপ্ত মেথরকূল নতুন বুদ্ধি বের করে। তারা গরম পানিতে আইকা আঠা দিয়ে তাতে মানুষের টাটকা গু আর তেঁতুল-সজনা-ইপিল ইপিলের পাতা ঢালে। ভয়াবহ এই মিশ্রণ তারা টাইলসওয়ালা কোনো বাড়িতে গিয়ে মেরে আসার পর তারের ব্রাশ দিয়ে ডলেও তা পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। ফলাফল হিসেবে তাদেরও মেথরকেই ডাকতে হয়। 

গান্ধি বলেছিলেন ‘‘An eye for an eye makes the whole world blind.” এই যুক্তির সূত্র ধরে যে পাল্টা গু ঢালার চেইন রিয়্যাকশন চলতে থাকে সেখান থেকে মুক্ত থাকে না কোনো বাড়ি। আজ ইজরাইল যেভাবে ইরানে আক্রমণ করে তাদের গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। পাল্টা হামলায় কিছুটা হলেও আক্রান্ত হয়েছে তারা। এরপর সংঘাত ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। হয়তো প্রতিবেশীর বাড়িতে গু ঢালার ঐ ভ্রষ্ট সংস্কৃতির মতো হামলার সংস্কৃতিতে ইরানের মতো অনেকেই অভ্যস্থ হবে। তারপর সেটাতে আক্রান্ত হবে ইজরাইল এবং তার চিরচেনা মিত্ররাও। 

[বানান ও ভাষারীতি লেখকের নিজস্ব]

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন