Logo
Logo
×

অভিমত

নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকার কেন জরুরি?

Icon

প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়হান

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম

নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকার কেন জরুরি?

ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ৫৪ বছরের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বোধ করি এদেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর, পশ্চিম পাকিস্তানের অপশাসন,  স্বৈরতন্ত্র ও অনাচার থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম এবং আত্মমর্যাদাশীল জাতি  হিসেবে বাংলাদেশকে পাবে এই ছিল গণমানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী দিনগুলোতে বাংলাদেশ আরেকটি স্বৈরতন্ত্র খুঁজে পায়। শুরু হয় ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট, অপশাসন এবং সর্বেশষ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয় এবং গণতন্ত্রকে একেবারে হিমাগারে পাঠিয়ে দেন শেখ মুজিবুর রহমান। এটা ছিল অবিশ্বাস্য যে, যিনি গণতন্ত্রের কথা বলতেন, গণমানুষের অধিকারের কথা বলতেন, তিনি মানুষের অধিকারকে হরণ করে, মাত্র চারটি সংবাদপত্রের সার্কুলেশন জারি রেখে, বাকী সব পত্রিকা বন্ধ করে,  সংবিধান সংশোধন করে নিজের মনের মতো করে একটি সংশোধনী করলেন, গণতন্ত্রকে হিমায়িত করলেন।

কিন্তু বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সবসময়ই গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য লড়াই করেছে, শহীদ হয়েছে, নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।  আর তাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর যখন অভ্যুত্থান,  পাল্টা অভ্যুত্থান হচ্ছিল, একদল বিপথগামী সেনা সদস্যরা যখন মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে বন্দি করেছিল; ঠিক তখনই ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবের অভ্যুত্থান ঘটে। জিয়াউর রহমানের মুক্তির সাথে সাথে বাংলাদেশ যেন এক নতুন গতিপথ খুঁজে পায়। জনগণের তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি, চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে গণমানুষের ইচ্ছায়। জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ উন্মোচন করে দেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সবার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে লিপিবদ্ধ করেন, ইসলামি মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করেন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে জিয়াউর রহমান নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানুষের বাকস্বাধীনতা থাকার কারণে দেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত হতে থাকে। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর দেশ এক সংকটে পড়ে এবং গণতন্ত্র হীন হয়ে পড়ে। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ অগণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন এবং বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য এহেন চেষ্টা নাই যা করেননি। ফলশ্রুতিতে বিএনপির বেশ কিছু নেতা এইচ এম এরশাদের উপঢৌকন গ্রহণ করলেও, বেগম খালেদা জিয়া যখন ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তখন দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতগতভাবেই গণতান্ত্রিক। তাই কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের জন্য তারা সবসময়ই আন্দোলন করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে। 

১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং  ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি নিরলস পরিশ্রম করে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তিনি এইচ এম এরশাদের পাতানো নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করেননি, যেমনটা এদেশের মানুষও করেনি। তাই ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। বিচারপতি শাহাবুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৯ বছর নিরলস সংগ্রাম করার পর মানুষ একটি জনবান্ধব ও গণমানুষ দ্বারা নির্বাচিত সরকার পায়। এর ফলে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতির সুষম উন্নয়ন ঘটতে থাকে। খালেদা জিয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় উপবৃত্তি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে গ্রামীণ পরিবারগুলোকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। শিশুদের টিকা দেওয়ার সঠিক ব্যবস্থাপনার  মাধ্যমে পোলিও,  হাম এই জাতীয় রোগের প্রকোপ কমতে থাকে। FDI এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। সুষম উন্নয়নের ব্যবস্থা হয়। 

এটাই হচ্ছে নির্বাচনের সুফল এবং নির্বাচিত সরকারের সুফল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার থাকে, বিরোধী দলের কথা বলার অধিকার থাকে, মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে, দুর্নীতি কমে ও সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা সুসংহত হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে, বিএনপি সংসদে বিরোধী দলে। একটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পথ উন্মোচিত হয়। একইভাবে ২০০১ সালে বিএনপি নির্বাচিত হয়ে আসে। এভাবেই চেক এন্ড ব্যালেন্সের মাধ্যমে সরকার কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছিল। দেশের মানুষের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব, ভোট উৎসবও হচ্ছিল নির্বাচনগুলোতে। সকাল থেকে রাত অব্দি ক্যাম্পেইন, যুক্তি পাল্টা যুক্তি, মিছিল ইত্যাদি পরিক্রমার মাধ্যমে দেশ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছিল।

বিপত্তি বাঁধল বা বাঁধাল আআওয়ামী লীগ। একটি খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করাল,  বিচারপতি কে এম হাসানকে নিয়ে। তারা এই বলে আন্দোলন শুরু করল, বিচারপতি কে এম হাসান কোনো এককালে বিএনপি করতেন আর তাই বিএনপি তাকে প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোর সংশোধনী করেছে। এই নিয়ে তারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন এবং সাংবাধানিক ভাবেই অন্য অপশনগুলো ফেইল করার পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন দায়িত্ব নেন।

শুরু হয়ে যায় আওয়ামী লীগের ধ্বংসলীলা। তারা ২৮ অক্টোবর ২০০৬, লগি বৈঠার তান্ডবের মাধ্যমে বায়তুল মোকাররমের সামনে মানুষ হত্যা করে নৃত্য করে, হরতালের পর হরতাল, দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নিজেদের তথাকথিত আন্দোলনের ফসল মঈনউদ্দিন,  ফখরুদ্দীনকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আনে। দেশে আবার গণতন্ত্র হত্যা করে, যেটা তারা শুরু করেছিল বাকশাল কায়েম করে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। ২ বছর ধরে দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়, জরুরি অবস্থার মধ্যে দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ ও দেশে বিনিয়োগ কর্মসংস্থান  শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাথে যোগসাজশে ২০০৮ সালে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। 

বাংলাদেশের গণমানুষের একটি চরম দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখনই এদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই এদেশে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে, বিরোধী দলের উপর নির্যাতন,  নিপীড়ন বেড়েছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সীমিত করা হয়েছে। 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ এই স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় এসে,  নিজেদের দিন বদল করেছে, এক এক মন্ত্রী এমপি ফুলে ফেঁপে পরিপুষ্ট হয়েছে আর বিরোধী দলগুলোকে নিষ্পেষিত করেছে।

সংবিধানকে নিজেদের পারিবারিক সংবিধান বানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অপব্যাখ্যা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এভাবেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে। বেগম খালেদা জিয়া ও জোট খুব যৌক্তিকভাবেই সেই নির্বাচন বর্জন করে। কারণ গণতন্ত্রের নেত্রী জানতেন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন কোনদিনই সম্ভব না। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতেও আওয়ামী লীগ একটি বিতর্কিত ও জনগণহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বিএনপিকে, দেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় দলকে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অন্য নেতা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে মামলা দেওয়া ও বিচার শুরু করে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে নিয়ে যায়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রে শেষ পেরেক ঠুকে।

অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়, মেগা দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। এক একটা প্রজেক্ট এর মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে, কারণ তাদের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। সংসদ হয়ে গিয়েছিল সাংসদদের রঙ্গশালা। কোনো ধরনের যুক্তিতর্ক ছাড়া চলত হাসিনা বন্দনা, মমতাজের গান।

২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে করল। প্রশাসন, নিজেদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সমস্ত পোলিং বুথ, কেন্দ্র দখল করে। নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে, নিজেদের বশংবদ নির্বাচন কমিশন দিয়ে নিজেদেরকে (আওয়ামী লীগ) নির্বাচিত ঘোষণা করল।

বাংলাদেশের মানুষের একটি নূন্যতম অধিকার ছিল ভোট দেওয়া, সেই নূন্যতম অধিকারটাও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে বার বার কেড়ে নিয়েছে। উন্নয়নের মিথ্যা কথা বলে দেশকে, দেশের মানুষকে এক অসীম ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। প্রকৃত নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকার না থাকলে দেশের পরিস্থিতি কি হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে দেশের মানুষ।

শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলন করে আসছিল। ফ্যাসিস্ট ও অনির্বাচিত হাসিনা সরকার তাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে বিদেশি চুক্তিগুলোতে পর্যন্ত নিজেদের ন্যায্যতা আদায় করতে পারত না। শেখ হাসিনার একমাত্র কাজ ছিল বিরোধী দলকে দমন করা, সুশীল সমাজের উপর বিষোদগার করা ও গুম, হত্যা করা।

বিরোধী দলগুলো প্রতিনিয়ত নানাবিধ গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দেশ এবং দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে আসছিল। তারপরও আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের ৭ ই জানুয়ারি ঠিক একই কায়দায়, চতুরতার সাথে আমি এবং ডামি নির্বাচন করে এবং অবৈধ সরকার গঠন করে।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট এক স্বতঃস্ফূর্ত, সম্মিলিত ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রীপরিষদ দেশ থেকে পালিয়ে যায়। এ ছিল এক অবিস্মরণীয় পলায়ণপরতা যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম।

এই অভ্যুত্থানের পর একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে এবং তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং এই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় সহযোগী  হিসেবে বিএনপি এই সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।

কী ছিল এই সরকারের কর্মপরিধি? 

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের একগুয়েমি এবং ছাত্রদের উপর গুলি চালানো ও নিপীড়নের কারণে, গণমানুষ শেখ হাসিনার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করে। কয়েক হাজার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ শেখ হাসিনাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। শেখ হাসিনা তার নিজের দলের কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যান তার সেইফ জোন, ভারতে।

নতুন সরকারের প্রথম ও প্রধানতম দায়িত্ব ছিল অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই ঐক্যবদ্ধ জাতিকে একটি সাধারণ নির্বাচন উপহার দেওয়া। কিন্তু সংস্কার নিয়ে কালক্ষেপণ, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সুসংগঠিত হওয়ার জন্য সময় দেওয়া ইত্যাদি নানাবিধ খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে এই সরকারও একইভাবে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলেছে।

বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় আমরা দেখতে পেয়েছি, একটি সঠিক নির্বাচন কেন প্রয়োজন এবং নির্বাচিত সরকার কেন প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকার দ্বারা কি ধরনের জনবান্ধব কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব। অনির্বাচিত সরকারের চরম কুফলগুলোও আমরা দেখেছি।

বাংলাদেশে এখন অতিঅবশ্য একটি জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। এর কারণগুলো:

১. বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনা।

২. দেশের চলমান নানান ধরনের অস্থিরতার অবসান ঘটানো।

৩. মানুষের দীর্ঘ ১৭ বছরের ন্যায্য পাওনা, তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, ভোট উৎসবে শামিল হওয়ার সুযোগ দেওয়া।

৪. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো।

৫. FDI বাড়ানো।

৬. রুগ্ন অর্থনীতিকে সুস্থ করে তোলা।

৭. ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান বাড়ানো।

৮. বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো ও রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা সঠিক করা।

৯. কৃষি ব্যবস্থাপনা ও কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা।

১০. আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও যথাযথ প্রয়োগ। শিক্ষা নিয়ে এক্সপিরিমেন্টের হাত থেকে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিস্তার দেওয়া।

১১.ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের আধুনিকায়ন।

১২. অবহেলিত স্বাস্থ্যখাতকে বিশ্বমানে উন্নীত করা।

১৩. ফ্রিল্যান্সারদেরকে সবধরনের সহযোগিতার জন্য ফ্রেমওয়ার্ক করা। 

১৪. কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র ঋণ, বৃহৎ শিল্প ঋণ সহজলভ্য করা।

১৫. পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজিয়ে বিদগ্ধ পেশাদার কূটনীতিক নিয়োগ করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের বিলুপ্ত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা।

১৬. ব্যাংক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করা।

১৭. সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

১৮. মানব সম্পদ উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।

১৯. সুষম ও সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যবস্থাপনা করা।

২০. মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি কমানো। 

২১. সমস্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ালিটি শিক্ষক নিয়োগ করা এবং তারা যেন পূর্ণসময় কোয়ালিটি এডুকেশন প্রোভাইড করতে পারে, সেই জন্য তাদের যথোপযুক্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করা।

এই ধরনের অগণিত জনবান্ধব কর্মসূচি শুধুমাত্র বাস্তবায়ন সম্ভব একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের দ্বারা। যাদের থাকবে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা, অন্য কোনো রাষ্ট্রের কাছে নয়।

[email protected]

Facebook@ Salahuddin Ahmed Raihan

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন