Logo
Logo
×

অভিমত

শাসনের দায়, গণআকাঙ্ক্ষার চাপ

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১০:০২ এএম

শাসনের দায়, গণআকাঙ্ক্ষার চাপ

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করে চাকরি প্রত্যাশীরা

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তঝরা অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে শুরুতে জনগণের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। ধারণা করা হচ্ছিল, এই প্রশাসন হবে সুশাসনের প্রতীক, দুর্নীতিমুক্ত এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে মুক্ত। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই আশার আলো এখন অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঢাকা পড়েছে।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১০ মাসে গড়িয়েছে, আর ঠিক তখনই শোনা যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরাসরি যমুনা ভবনে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব এবং উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক সরকার পরিচালনায় জটিলতা বাড়িয়েছে।

সরকারের শরিক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখন বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন। বিএনপি প্রকাশ্যেই মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ও খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছে। অন্যদিকে এনসিপি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, তাদের সংস্কার সুপারিশ মানা না হলে সরকারের তিন প্রভাবশালী উপদেষ্টাকে অপসারণের জন্য চাপ দেবে।

সবচেয়ে বড় বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও নির্বাচনের টাইমলাইন নিয়ে। বিএনপি ও তাদের সমর্থিত দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামপন্থি দল চায় আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা ঘোষণা করে এনসিপি তার পুনর্গঠন দাবি করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে রাজধানীতে টানা ৯ দিনের আন্দোলন হয়েছে, যার কারণে নগর ভবনে সেবা বন্ধ এবং রাস্তায় যানজট ও জলাবদ্ধতায় ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে রিট খারিজ হওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত হলেও ইশরাক জানিয়েছেন, সরকার যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আবারও মাঠে নামবে বিএনপি।

সরকারি উপদেষ্টাদের বিতর্কিত বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের প্রকাশ্য দুঃখপ্রকাশ এবং ঐক্যের আহ্বান কিছুটা শান্তি বার্তা দিয়েছে। ফেসবুকজুড়ে এনসিপি নেতারা ঐক্যের বার্তা ছড়িয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান মন্তব্য করেছেন, “গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে হলে সরকার ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যমত্য ছাড়া পথ নেই। নির্বাচন, সংস্কার ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য এখনই সমঝোতা দরকার।”

বর্তমানে বাংলাদেশ এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের আশঙ্কা, বিভাজিত উপদেষ্টা পরিষদ, নির্বাচনী অনিশ্চয়তা, রাজপথ উত্তপ্ত থাকা এবং জনগণের আস্থার সংকট—সব মিলিয়ে জাতীয় ঐক্যই হতে পারে একমাত্র মুক্তির পথ।

 ড. ইউনূসের সরকার টিকে থাকবে কি না, ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন হবে কি না, নাকি পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে—তা এখন রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা, দূরদৃষ্টি ও ঐক্যনির্ভর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন