BETA VERSION শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
Logo
ইউনিকোড কনভার্টার
Logo
  • হোম
  • সর্বশেষ
  • সংবাদ
  • অনুসন্ধান
  • রাজনীতি
  • অর্থনীতি
  • কূটনীতি
  • সারাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • অভিমত
  • বিশ্লেষণ
English

সব বিভাগ ছবি ভিডিও আর্কাইভ ইউনিকোড কনভার্টার English Version

অভিমত

রবীন্দ্রনাথ ফ্যাসিজম বলশেভিজম

সেলিম রেজা নিউটন

সেলিম রেজা নিউটন

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম

রবীন্দ্রনাথ ফ্যাসিজম বলশেভিজম

আরো পড়ুন

এক। অবতরণের উপলক্ষ

এখানে যে লেখাটা পেশ করছি সেটার মূল অংশটা বেশ আগের লেখা। বছর তিনেক আগের। রবীন্দ্রনাথের একটা চিঠি ছিল এই স্বল্পদৈর্ঘ্য-রচনার ভরসাবিন্দু। আমাদের দেশের ড. সেলিনা জামানের সম্পাদনা-করা (সম্ভবত ‘কিশোর রবীন্দ্র-সঞ্চয়ন’ নামের) একটা বইয়ে চিঠিটা পেয়েছিলাম। চিঠিটার আদি উৎস জানা এবং এর বয়ানের অবিকলত্ব সম্পর্কে শতভাগ নিঃসংশয় হওয়ার প্রায়-অপ্রয়োজনীয় বাতিক না মেটাতে পারার কারণে এই লেখাটা কোথাও আর ছাপতে দেওয়া হয়নি এত দিন। 

বাতিক এখনও মেটেনি। তবু একটা বিশেষ উপলক্ষে এটা এখন ছাপতে ইচ্ছে করছে। ঠাকুরের চিঠিটা ছিল জুলাই মাসের ৩১ তারিখে লেখা। তার মানে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝিতে। ঝুম বরষায়। উপরন্তু ২২শে শ্রাবণের খুব কাছাকাছি কোনো একটা দিনে। সম্ভবত ১৬ই শ্রাবণে। বিশেষ কোনো উপলক্ষ-দিবস ধরে কখনো কিছু লিখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু এবারের শ্রাবণে কয়টা দিন ঠাকুরের সাথেই থাকতে হয়েছিল। কারণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর শহীদ ইকবাল তাঁদের ‘চিহ্ন’ পত্রিকায় ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ জাতীয় কিছু-একটা লেখা দিতে বলেছিলেন। বিচিত্র কারণে তাঁর ফরমায়েশ আমার শিরোধার্য-প্রায়। লেখাটা, সুতরাং, আমি দাঁড় করালাম ঠিকই কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। বেরিয়ে গিয়েছে ‘চিহ্ন’। লেখাটা যে আমি করেই ফেলতে পেরেছিলাম, সে কথা তাঁদেরকে জানানো হয় নি দেরি করার লজ্জায়। 

ভেবেছিলাম সেটা এখানে [দৈনিক বণিক বার্তায়] আমার এই [“আত্মঘাতী পরিস্থিতি”] কলামে ছাপার জন্য দেবো। কিন্তু, যেহেতু ইকবালের জন্য লেখা, তাই তাঁর হাতে না দিয়ে অন্য কোথাও “সম্পর্ক: রবীন্দ্রনাথের সাথে” নামে আমার সেই লেখাটা এখানে দিতে সাহস করলাম না— শ্রাবণ পেরিয়ে আশ্বিন এসে গেল যদিও। পরে কোথাও সেটা হয়তো ছাপা হবে কিংবা হবে না, সেটা পরের কথা। আপাতত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগকে উপলক্ষ করে এ শহরের বকুলতলায় “নিনাসা” নামের একটা কেমন-যেন-অন্যরকম বাসায় এসে আশ্বিনের অঝোর বৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের পবিত্র প্রেতাত্মা নতুন করে চেপে বসেছে মাথায়। নামছে না। আর-কিছু ভাবাই যাচ্ছে না। উপায়ন্তর না দেখে প্রেত-পুরাতন এই রচনাটির আশ্রয় নিয়েছি। শ্রাবণের বিলম্বিত শ্রাদ্ধে আশ্বিনের অঞ্জলি এ লেখা।  

দুই। বলশেভিক নিষ্পাপতার প্রতি 

বঙ্কিম-নায়িকার বিগত কটাক্ষ

বিগত ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সত্যিকারের নতুন ধারার প্রকাশনা-সাংবাদিকতা-প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস প্রকাশ করে “সহগামী খুনখারাবি” নামে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি গোপন ভিডিওচিত্র। বিষয় ছিল ইরাকে মার্কিন সেনাদের নির্বিচার খুনের সামরিক খতিয়ান। জুলাই মাসে তারা প্রকাশ করে “আফগানিস্তান যুদ্ধের ডায়েরি” নামে প্রায় ৭৫ হাজার গোপন মার্কিন সামরিক নথিপত্র প্রকাশ করে দেয়। তারপর ডিসেম্বর মাসে “ইরাক যুদ্ধের ডায়েরি” নামে তারা উন্মোচন করে প্রায় চার লক্ষ গোপন মার্কিন সামরিক নথিপত্র। কেঁপে ওঠে পৃথিবী। সারা দুনিয়ার শাসক-মিডিয়া একুশ শতকের সর্বপ্রধান (আমার বিবেচনায়) চিন্তক-দার্শনিক-যোগাযোগতাত্ত্বিক-অ্যাক্টিভিস্ট-সম্পাদক-সাংবাদিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে শুরু করে কুৎসা রটনার এক অবিশ্বাস্য অভিযান। 

পূর্বাপর এই পরিপ্রেক্ষিতে সে বছর ৮ই ডিসেম্বর তারিখের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম-এর আকাশ-বাতায়নে প্রকাশিত হয় আমার “জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কি খ্যাপা বিজ্ঞানী, বিন লাদেন, নাকি ভিনগ্রহের প্রাণী?” নামের একটি লেখা। সেখানে কথাপ্রসঙ্গে আমি “পুরো মার্কিন রাষ্ট্র-প্রণালীর ক্রমাগতভাবে ফ্যাসিস্ট-বলশেভিক হয়ে ওঠার ভীতিকর ও ... আগ্রাসী পরিস্থিতি”র কথা বলাতে ‘প্রতিক্রিয়া’ প্রকাশ করেন অগ্রজ বন্ধুভাজনেষু জনাব ওমর তারেক চৌধুরী। 

লেখার নিচে মন্তব্যের ঘরে তিনি প্রশ্ন তোলেন: “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করে একাধারে ফ্যাসিস্ট এবং বলশেভিক হয়ে উঠতে পারে?” এবং এরকম নিষ্পাপ একটি প্রশ্নের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে তিনি করেন ভয়ানক একটি লেনিনীয় ভঙ্গির বিদ্রুপ: “এ তো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মৌলিক অবদান রাখার মতো প্রশংসনীয় ভাবনা”। এবং পরিশেষে, অদ্ভুত অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশংসা-বাক্য পেশ করেন তিনি: “একটি চমৎকার, পরিপূর্ণ লেখা উপহার দেবার জন্য সেলিম রেজা নিউটনকে অভিনন্দন ...”। 

তারেক ভাই আরো কথা তুলেছিলেন। সেদিকে আমি এখন যাব না। বিদ্রুপ এবং প্রশংসা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। ওসব জিনিস সর্বদাই একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। বর্তমান রচনায় আমি বরং ওমর ভাইয়ের মতো পূর্ণবয়স্ক বলশেভিক-বামপন্থীর নিষ্পাপ অন্ধবিশ্বাসকে বঙ্কিমচন্দ্রের নায়িকার চোখ দিয়ে অতি সামান্য কটাক্ষ-ইশারা করব শুধু। এবং বিনিময়ে, যেকোনো ককটেল খেতে আগ্রহী থাকব। তথাপি পাঠক যেন আমার নিজের জীবনের সুদীর্ঘ বলশেভিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বিশেষত তারেক ভাইয়ের জন্য আমার নিষ্পাপ ভালোবাসা বিস্মৃত না হন, সেই অনুরোধ জানিয়ে রেখে শুরু করছি চোখের কাজ। বিস্তারিত ‘সরন-প্রতিসরণীয়’ কায়দায় নয়। কটাক্ষ-ইশারায় মাত্র। বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের নায়িকার ভঙ্গিতে। হাজার হোক আমাদের মরমী সাধক জালালের গানে আছে: “প্রেমিক ভঙ্গিতে যায় চেনা”।

তিন। ফ্যাসিস্ট-বলশেভিক মানুষখেগোর দল

ড. সেলিনা জামানের সম্পাদনা-করা যে বইয়ের কথা এ রচনার শুরুতে উল্লেখ করেছি, সেখানে আছে আমাদের এতদিন-অপঠিত একটি চিঠি। “দৌহিত্র নীতীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি”। ঠাকুরের এটি ১৯৩১ সালের রচনা। চিঠিটা এবার হুবহু পড়ে নেওয়া যাক: 

ওঁ

[শান্তিনিকেতন]

কল্যাণীয়েষু

নীতু, তোর চিঠি পেয়ে খুশি হলুম। জর্মানিতে ব্যাভেরিয়ার ভাবগতিক ভাল লাগছে না। যেখানে দারিদ্রে মানুষ দুর্বল সেইখানেই যেমন মারী মড়ক জোর পায় তেমনি আজকালকার য়ুরোপে দুর্ভিক্ষ যতই ছড়িয়ে পড়ছে ততই ফাসিজ্ম এবং বল্‌শেভিজ্‌ম জোর পেয়ে উঠছে। দুটোই অস্বাস্থ্যের লক্ষণ। মানুষের স্বাধীন বুদ্ধিকে জোর করে মেরে তার উপকার করা যায় এ-সব কথা সুস্থচিত্ত লোকে মনে ভাবতেই পারে না। পেটের জ্বালা বাড়লে তখনি যত দুর্বুদ্ধি মানুষকে পেয়ে বসে। বল্‌শেভিজ্‌ম ভারতে ছড়াবে বলে আশঙ্কা হয় — কেননা অন্নকষ্ট অত্যন্ত বেড়ে উঠেছে — মরণদশা যখন ঘনিয়ে আসে তখন এরা যমের দূত হয়ে দেখা দেয়। মানুষের পক্ষে মানুষ যে কি ভয়ংকর তা দেখলে শরীর শিউরে ওঠে — মারের প্রতিযোগিতায় কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে সেই চেষ্টায় আজ সমস্ত পৃথিবী কোমর বেঁধেছে —মানুষের হাত থেকে বাঁচবার জন্যেই মানুষ কেবলই ভয়ংকর হয়ে উঠছে — এর আর শেষ নেই — খুনো-খুনির ঘূর্ণিপাক চলল।

আর যাই করিস এই-সব মানুষ খেগো দলের সঙ্গে খবরদার মিশিস নে। য়ুরোপ আজ নিজের মহত্ত্বকে সব দিকেই প্রতিবাদ করতে বসেছে। আমাদের দেশের লোক — বিশেষ বাঙালি — আর কিছু না পারুক, নকল করতে পারে — তাদের অনেকে আজ য়ুরোপের ব্যামোর নকল করতে লেগেছে। এই নকল মড়কের ছোঁয়াচ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলিস। নিশ্চয় তোদের ওখানে এই-সমস্ত দানোয়-পাওয়া ভারতবাসী অনেক আছে, তাদের কাছে ভিঁড়িস নে, আপন মনে কাজ করে যাস।

...

ইতি

দাদামশায়

৩১শে জুলাই ১৯৩১

চার। রাশিয়ার চিঠি: লেনিনীয় জেল-সমাজতন্ত্রের 

গুরুতর গলদ

বিশ্বের বৃহত্তম বাধ্যতামূলক, দাসত্বপরায়ন শ্রমশিবির ছিল তথাকথিত কমিউনিস্টদের রাশিয়ায়। সবচেয়ে বেশি মানুষ জেলখানায় ছিলেন লেনিন-ট্রটস্কি-স্তালিনের বহুল-প্রচারিত ‘সমাজতান্ত্রিক’ রাশিয়ায়। “মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ” বানাতে গিয়ে বলশেভিকরা ‘ভুল করে’ বিশাল একটা জেলখানা বানিয়ে ফেলেছিল পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ এলাকা জুড়ে। এই দুঃখেই সম্ভবত বর্তমান দুনিয়ার সবচাইতে বেশি উদ্ধৃত প্রফেসর নোম চমস্কি বলেন, “লেনিনকে আপনি যদি বামপন্থী মনে করেন, আমি তাহলে বামপন্থী নই।” 

আর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যাঁর কাছে ইস্কুলের দেওয়ালকে পর্যন্ত জেলখানা মনে হতো (ন্যায্যতই), যিনি সারাজীবন বলেছেন যে “মানুষের স্বাধীন বুদ্ধিকে জোর করে মেরে তার উপকার করা যায় এ-সব কথা সুস্থচিত্ত লোকে মনে ভাবতেই পারে না”, সেই রবীন্দ্রনাথের “রাশিয়ার চিঠি”কে বলশেভিক-সমাজতন্ত্রের [আদতে কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের] সাফাই হিসেবে প্রচার করা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। অথচ, মস্কোতে নামার পর “যা দেখছি আশ্চর্য ঠেকছে” অবস্থা সত্ত্বেও বলশেভিকদের একেবারে গোড়ার “গুরুতর গলদ” দেখতে একচুলও ভুল হয় নি রবীন্দ্রনাথের। রাশিয়ার চিঠির শুরুতেই আমরা তাই দেখি:

রাশিয়ায় একেবারে গোড়া ঘেঁষে ... সমস্যা সমাধান করবার চেষ্টা চলছে। তার শেষ ফলের কথা এখনো বিচার করবার সময় হয় নি, কিন্তু আপাতত যা চোখে পড়ছে তা দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। ... 

এর মধ্যে গলদ কিছুই নেই তা বলি নে; গুরুতর গলদ আছে। সেজন্যে একদিন এদের বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে — কিন্তু ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না — সজীব মনের তত্ত্বের সঙ্গে বিদ্যার তত্ত্ব যদি না মেলে তা হলে হয় একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে ...

১৯৩০ সালে লেখা রাশিয়ার চিঠির সাথে ঠিক পরের বছরই জার্মানি-প্রবাসী নাতিকে লেখা রবীন্দ্রনাথের ১৯৩১ সালের বহুল-অপ্রচারিত চিঠিটা মিলিয়ে পড়তে বলি, পাঠক। বলশেভিক-রাষ্ট্রপন্থা যে ফ্যাসিবাদেরই নামান্তর তা বুঝতে ইতিহাসের কাণ্ডজ্ঞানই যথেষ্ট; তবু আপাতত রবীন্দ্রনাথের চিঠির দোহাই দিচ্ছি তাঁর “রাশিয়ার চিঠি” বাংলাদেশের বলশেভিক-বামপন্থীদের বিশেষ আদরের ধন, তাই। 

“ফাসিজ্ম এবং বলল্‌শেভিজ্ম” উভয়ই ঠাকুরের কাছে “অস্বাস্থ্যের লক্ষণ”, “য়ুরোপের ব্যামো”— “মরণদশা যখন ঘনিয়ে আসে তখন এরা যমের দূত হয়ে দেখা দেয়”। তাঁর মতে দুটোই “খুনোখনির ঘুর্ণিপাক” মাত্র, যারা “জোর পেয়ে” ওঠে “দারিদ্র”জনিত “মানুষের দুর্বলতা”, “দুর্ভিক্ষ”, “মারী মড়ক”, “পেটের জ্বালা” তথা “অন্নকষ্ট” ইত্যাদি কারণে। তাই, “ফাসিজ্ম এবং বল্‌শেভিজ্ম” উভয়ই তাঁর কাছে “মানুষখেগো দল”। 

বাকি থাকল “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করে একাধারে ফ্যাসিস্ট এবং বলশেভিক হয়ে উঠতে পারে” সেই প্রশ্ন। খেয়াল করলে বোঝা যাবে, ফ্যাসিবাদ এবং বলশেভিক-রাষ্ট্রপন্থা উভয়ই আদতে চূড়ান্ত কর্তৃত্বপরায়ন, সর্বাত্মক-স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রপ্রণালী। উভয়েরই গোড়ার জোরটা গায়ের জোর, বলপ্রয়োগ, সঙ্গে “সমাজতন্ত্রের” বুলি (হিটলারও নিজেকে ‘সমাজতন্ত্রী’ বলতেন)। এদের উভয়েরই মূল শত্রু জনসাধারণের স্বাধীনবুদ্ধি। উভয়েরই মূল বিশ্বাস এই যে “মানুষের স্বাধীনবুদ্ধিকে জোর করে মেরে তার উপকার করা যায়”— যা “সুস্থচিত্ত লোকে মনে ভাবতেই পারে না।” 


ইউরোপের এই ব্যামো এখন ধরেছে একদা-স্বাধীনতাকেন্দ্র অধুনা-নিওলিবারাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। নতুন ধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ‘গণতান্ত্রিক বামপন্থী’ ওবামা-প্রশাসনের কার্যকলাপে তার সাম্প্রতিকতম প্রমাণ। প্রমাণ ব্র্যাডলি ম্যানিঙের রেডিমেড বিচার-শাস্তির প্রক্রিয়ায়। প্রমাণ এডওয়ার্ড স্নোডেনের সর্বসাম্প্রতিক এনএসএ-উন্মোচনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রীয় নজরদারির বাস্তবতা হার মানিয়েছে রুশ-বলশেভিকদের ‘চেকা’, তথাকথিত কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির ‘স্ট্যাসি’, এমনকি হিটলারের ফ্যাসিস্ট জার্মানির ‘গেস্টাপো’কে হার মানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই এখন ইউএসএ বলতে বোঝেন: “ইউনাইটেড স্ট্যাসি অফ অ্যামেরিকা”। আর, অ্যাসাঞ্জ তো সেই ২০০৬ সালেই তার ব্যক্তিগত ব্লগ “আইকিউ ডট অর্গ”-এ লিখেছিলেন: “ইউনাইটেড সোভিয়েটস অফ অ্যামেরিকা”। 

পাঁচ। ইউরোপের মহত্ব, ইউরোপের ব্যামো

বলশেভিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যারা পার্টির হুকুমে চিন্তাপ্যারেড করেছি সেই কৈশোর থেকে, তারা খুবই ভালো জানি: মানুষের স্বাধীনবুদ্ধির কোনো স্থান নাই বলশেভিক পার্টি-রাষ্ট্রগুলোতে। পশ্চিম “য়ুরোপের ব্যামোর নকল” (প্রথমত পূর্ব ইউরোপের এবং ক্রমশ সারা পৃথিবীর) বলশেভিক-বামপন্থীরা অনেক করেছেন। 

চলুন, এবার “য়ুরোপের মহত্ত্বের” দিকে তাকাই: সেটা এক দিকে ব্যক্তিস্বাধীনতাকামী, পুঁজিবাদবিরোধী, রেনেসাঁজনিত ধ্রুপদী উদারনীতিবাদ, এবং অন্য দিকে মার্কসেরও জন্মের আগে জন্মানো সমাজতন্ত্রী শ্রমিক আন্দোলনের দ্বিবেণীসঙ্গমে বেড়ে ওঠা নৈরাজ্যবাদ, তথা মুক্তিপরায়ন সমাজতন্ত্র।

বঙ্কিমের নায়িকার কটাক্ষ-ইশারাটুকুই থাকল আজ। ইট-পাটকেল-ককটেল আসলে (কিংবা না-আসলেও) “বাকি কথা পরে হবে”। 

…………………

(লেখাটা ছাপা হয়েছিল দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকায় লেখকের “আত্মঘাতী পরিস্থিতি” কলামের ১০ম কিস্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর তারিখে। বাংলাদেশে তখন যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটতে শুরু করেছে।) -

সেলিম রেজা নিউটন রবীন্দ্রনাথ ফ্যাসিজম বলশেভিজম রবীন্দ্রনাথ

এ সম্পর্কিত আরো খবর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সব খবর

সব খবর

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

আমাদের কথা যোগাযোগ শর্তাবলি ও নীতিমালা গোপনীয়তা নীতি বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা

অনুসরণ করুন

২০২৫ বাংলা আউটলুক কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত