Logo
Logo
×

অভিমত

আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিয়া যান প্লিজ!!

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০৮:২০ পিএম

আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিয়া যান প্লিজ!!

বালুর ট্রাকগুলো বি এন পির নেতাকর্মীরা কেনো সরাতে পারেনি? আমি এই প্রশ্নের ১১০ টা বিকল্প উত্তর দিচ্ছি তার আগে আপনারা আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন? আমার ধারণা প্রতিক্ষেত্রে উত্তরটা হবে অভিন্ন তাই আপনারা সেটা করবেন না। কিন্তু যান্ত্রিক বটবাহিনীর পাশাপাশি যন্ত্রের মতো মগজধোলাই হয়ে থাকা কিছু মানুষ ক্রমাগত বিষ ছড়াবেন কমেন্ট বক্সে। অনেকগুলো উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে পতিত, পলাতক ফ্যাসিবাদ নতুন করে প্রতিষ্ঠার ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করে তবেই বিজয়ীর হাসি হাসবেন মু হা হা হা করে। 

শুরুতেই খেয়াল করুন। প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেছে মাত্র কয়েকদিন হতে যায়? তাদের নেতা শেখ মুজিবের মূর্তিগুলো যখন জনতা গুঁড়িয়ে দিচ্ছিলো তাদের কোনো নেতা কেনো এগিয়ে যায়নি একটা মূর্তিভাঙ্গা ঠেকাতে? বত্রিশ নম্বর যখন উত্তেজিত জনতা গুঁড়িয়ে দিল তখন তাদের কেউ দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল না কেনো?

কথিত বুদ্ধিজীবীদের ভাষায় দেশের সবথেকে ঐতিহ্যবাহী দল হওয়ার পরেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন রাতের আঁধারে মুখোশ পরে দৌড় মিছিল করে কেনো? তারপর হঠাৎ করে ভূতের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কেনো? যারা আওয়ামী লীগের থেকে নিপীড়নের শিকার তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল হওয়ার পরেও তাদের ভয়ে সবখানে গর্তে লুকিয়ে থাকছে কেনো তারা? মাত্র কয়েকদিন আগেই তারা তো ক্ষমতায় ছিল। এখন তারা গর্তে লুকিয়ে থাকছে কেনো? 

আপনারা যারা কথায় কথায় বালুর ট্রাক নিয়ে খোঁটা দিচ্ছেন আপনাদের নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে যখন কারাগার থেকে বের করে হত্যা করা হলো তার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দৃশ্যমান ও উপস্থাপনযোগ্য কোন কাজটা করতে পেরেছিলেন? এমনকি বড় পরিসরে তার একটা জানাজাও করতে পেরেছিলেন কী? সহজ উত্তর পারেন নাই। ঘনঘোর ফ্যাসিবাদের সেটা পারার কথাও না। 

আপনাদের নেতা কাদের মোল্লাকে যখন বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো তখন প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে কোন বালুর ট্রাক আপনাদের সামনে বাধা হয়েছিল? প্রসঙ্গত বলা যায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যখন অভিন্ন উপায়ে খু*ন করা হয়েছিল তার জন্য দু্ইটা কবর খোঁড়া বাদে বি এন পিও তেমন কিছু করতে পারেনি। ইলিয়াস আলীকে যখন গুম করা হলো তখন তার প্রতিবাদেও বি এন পি কিছু করতে পারেনি। শুধু কিছু নিরীহ নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে গুলি খেয়েছিল। অনেককে ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল আয়নাঘরে। অনেকে ছিল কারাগারে।

ছাত্রদল নেতা জনিকে যখন গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছিল তখনও কেউ কিছু বলতে পারেনি। কারণ তখন বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু এই গু*ম খু*ন হ*ত্যাকাণ্ড উপেক্ষা করে বি এন পি মাঠে ছিল। ডামি ইলেকশনের আগের প্রতিটি মহাসমাবেশের দিকে তাকান। তখনকার জনসমাগম কী আজকের চেয়ে কম ছিল ? মনে পড়ে বি এন পির ঐসব নেতাকর্মীদের কথা যারা নির্বাচনের আগে গ্রেফতার আতঙ্কে ধানক্ষেতে গিয়ে ঘুমিয়েছিল। পানের বরজে কিংবা চিংড়ি ঘেরে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিল তাও তারা আপস করে নাই। 

অন্যদের কথা জানি না। ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে জাহাঙ্গীর হারুনের যৌথ বাহিনী ককটেল মারার আগে কিংবা কাঁপতে কাঁপতে যেদিন গোলাপবাগের মাঠে গিয়েছিলাম সেদিনও কম জনসমাগম দেখিনি। ক্যাম্পাসের সামান্য কাজ সেরে উল্লাবেগে ময়মনসিংহের সমাবেশে গিয়ে সেখানেও কতজন সমাবেশে দেখিনি। মনে হয়েছিল পুরো বাংলাদেশের মানুষ উপচে পড়ছে সেখানে ।

উত্তরবঙ্গের মহাসমাবেশগুলোতে অনেকে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে গিয়েছেন। বরিশালে শের্নিয়া বদ সাদে কাব্দুল্লার খু*নে বাহিনীর থেকে বাঁচতে অনেকে নদী সাঁতরে এসেছেন। চট্টগ্রামে ডিঙি নৌকায় চেপে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে হাতিয়া সন্দীপের লোকেরা এসেছেন। একবৃদ্ধ একা একা নৌকা চালিয়ে এসেছিলেন হাতিয়া থেকে। তার পকেটে ছিল মাত্র পঞ্চাশ টাকার একটা নোট। তাদের এই অবদান এককথায় অস্বীকার করতে লজ্জা করে না? 

আপনারা ভাল করেই জানেন তখন বি এন পির ক্ষমতায় আসার কোনো চান্স ছিল না। রাজনীতির আলাপ একপাশে রাখলে প্রাতিষ্ঠানিক ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছিল সিন্দাবাদের ভূতের মতো। এখন বিরাট বিপ্লবী ভং ধরা অনেক সহকর্মী অধ্যাপক আমাকে বলেছিলেন তুমি আর আল আমিন মারা পড়বা অতি বিপ্লবী অতি বি এন পিগিরির কারণে। তাদের সেই ভয় দেখানো কিংবা চারপাশের নানা চাপে আমরা হাল ছাড়িনি। কারণ আমাদের চারপাশের বি এন পি নেতাকর্মীদের বুক টান করে দাঁড়িয়ে থাকাটা আমরা দেখতাম। তাদের এই দুর্দমনীয় মনোভাব দেখে অবাক হতাম। 

ফেসবুক কমেন্ট বক্সে অনেকে মন্তব্য করেন তখন কোথায় ছিলাম? তারা জানেন না যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের তাণ্ডবে সবাই যখন গর্তে লুকিয়েছেন, তখন কেউ না হোক আমি আর আমার সহকর্মী আল আমিন সরকার সরাসরি ফ্যাসিস্টদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি। আমি তাদের বলেছি আপনাদের এই সরকার অবৈধ। আপনাদের নিয়োগকৃত ডিনসহ পুরো অথর্ব প্রশাসনও অবৈধ। আল আমিন সরকার সরাসরি তাদের বলেছিলেন এতকিছু করেন পারলে একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বলেন আপনাদের নেত্রী হাসিনাকে। তখন তাদের কথা বলার কিছু ছিল না। তারা চুপ হয়ে গেছে।  

আমাদের দুজনের প্রমোশন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, ঠিক যেমন পুরো দেশের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মহা সমাবেশের আগে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা হাল ছাড়ে নাই। আমরা লড়াই করেছিলাম এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ কিন্তু সুনির্দিষ্ট আদর্শের জন্য। যে আদর্শ কিছু না হোক অন্তত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সদা জাগরূক হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। আর বিশ্বাস জাগিয়েছিল একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য আমাদের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার। 

আমার এই কড়া কথাগুলো শুনে, এখন বলবেন আপনাদের ছাত্র সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, গুম হয়েছে কারাবরণ করেছেন। জেনে রাখুন উত্তরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বি এন পিও বলবে আপনাদের থেকে কয়েকগুণ বেশি সংখ্যক মানুষ গুম, খুন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাও তারা ময়দান ছাড়েনি। আর আজকের মুক্ত স্বদেশ তাদের আপনাদের, আরও অনেকের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত লড়াইয়ের ধারাবাহিক ফলাফল। 

আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পোলাপান যদি দাবি করে তারাই দেশ মুক্ত করেছে এটা ডাহা মিথ্যা কথা। তবে বড় সত্যিটা হচ্ছে তারা এই মুক্ত করার ক্ষেত্রে বিরাট বড় প্রভাবক। তাদের ডাকে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে গুলি খেয়েছিল। তারপর নিজ সন্তানের বদলা নিতে অভিভাবকরা নেমেছিল রাস্তায়। ওদিকে তাদের আন্দোলনকে শতগুণ বেগবান করেছিল বি এন পি, জামায়াত ইসলামী, হেফাজত, ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ময়দানি লড়াইতে কাজে লাগায়। আর সেজন্যই পুরোপুরি সফল হয়েছিল জুলাইয়ের গণ আন্দোলন। 

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দৃশ্যমান নোংরামি থেকে বাংলাদেশের মানুষ বের হতে পারেনি। সেখানে একজন ব্যক্তি যেমন পাকিস্তানে বসে থেকে জিন-পরীদের দিয়ে যুদ্ধ করিয়ে দেশ স্বাধীন করে জাতির পিতা বনে গেছে। শুধু আওয়ামী লীগ করার বাইরে কোনো মুক্তিযোদ্ধার কোনো স্বীকৃতি নাই। কারও ন্যায়ের পুরস্কার কিংবা অন্যায়ের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নাই। যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের লোক দেখানো বিচার হলেও নারী বিপীড়ন ও বিহারী হ*ত্যাকাণ্ডে জড়িত সোনাগাছী ফেরত আওয়ামী নেতাকর্মীদের বিচার কেউ করেনি। 

লজ্জার বিষয় জুলাইয়ের আড়ালে আরেক একাত্তর দেখা যায়। এখানে পোলাপান মনে করে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বি এন পির কিংবা তাদের মতোই মাঠে থাকা আরেকটি বিরোধী দল জামাতের কোনো ভূমিকা নাই। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে দেখে দেখেছি পোলাপান যখন মার খেয়ে ভুট্টা হয়ে যাচ্ছে তখন তাদের পেছনে ব্যূহ রচনা করেছিল ছাত্রদল কিংবা ছাত্রশিবিরের লড়াকু শিক্ষার্থীরা। কয়েকটা জায়গায় ছাত্রদলের একক কৃতিত্বে ময়দান দখল করেছিল শিক্ষার্থীরা।

সেখানে পর্দার আড়ালে কিংবা পর্দার সামনে দুইভাবে থাকা শিবিরের ছেলেরা কোন ভূমিকা রাখে নাই। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল হেফাজত ও চরমোনাইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃত প্রগতিশীল বাম আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখেছিলাম উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আর তাবলীগের লোকজনকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শোডাউন দিতে। কিন্তু আপনারা এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদান স্বীকারই করতে চান না। 

ভারতের একজন গান্ধি আছে, পাকিস্তানের আছে জিন্নাহ সুতরাং বাংলাদেশেরও একজনকে লাগবে। যুদ্ধের সময় যে পাকিস্তান গিয়ে বসে থাকলেও গায়ের জোরে তারে জাতির পিতা বানায় দিলেন। ওদিকে বহু আগে থেকে মুন্সি মেহেরউল্লারে লোকে ডাকতো বঙ্গবন্ধু, সেই উপাধিটাও তারে দিয়ে দিলেন। উপাধি দেওয়া, দেবত্ব কিংবা পিতৃত্ব আরোপের পাশাপাশি য়ে তে আঙুল দেওয়ায় আসলেই আমরা অনন্য। 

আগে ছিলেন শেরে বাংলা। জুলাইয়ের পর আমরা পাইলাম শেরে মংলা যাকে অনেকে বঙ্গবন্ধু স্টাইলে বলেন বন্দরবন্ধু। আগে ছিল দরবেশ বাবা, আমরা পাইলাম আরেক সচিবালয় বাবা। শাহবাগীদের অন্য সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা কুত্তার মতো খ্যাঁক করে ওঠে? এখন আপ্নারাও সব ভোগ উল্লাসে ব্যস্ত। কেউ যদি খালি একবার নির্বাচনের কথা বলে আপনারাও দেখায় দেন ফাদার অব দা নেশন না হলেও ফাদার অব শাহবাগী কারে কয়?ইনিয়ে বিনিয়ে সব কথা বললেও ক্ষমতার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নাই, ঘুরে ফিরে কাহিনি তো একই? 

শাপলা গণহত্যার দিনে অর্থাৎ গত ৫ মে মার্ক্স কাকুর জন্মদিন ছিল। তিনি নাকি কৈছিলেন “History repeats itself, first as a tragedy, second as a farce” তাইলে আবু সাঈদ, ইয়ামিন, মুগ্ধ, নাফিজ কিংবা ঐ পিচ্চি মেয়েটা রিয়া গোপ ওদের কী কুত্তায় কামড়াইছিল? তারা কী তবে আপনাদের মতো নিত্য নতুন হাসিনা, নিত্য নতুন এরশাদ আর শেখ মুজিব পয়দা করার জন্য বৃথাই রক্ত দিয়া গেল? বালুর ট্রাক সরাতে না পারার যুক্তি তো আগেই দিয়েছি। এবার পারলে আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে যান প্লিজ।

(বানান ও ভাষারীতি লেখকের নিজস্ব)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন