ছবি: সংগৃহীত
আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিপক্ষে বড় জয় পেয়ে সামনের মাসে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। প্রথমবার এই রিপাবলিকান নেতা চীনের বিপক্ষে অগ্রাসী বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এবার আরও বেশি আত্মবিশ্বাস ও সমর্থন পাওয়া ট্রাম্প এই যুদ্ধে ভারতকেও জড়াবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জানিয়ে দিয়েছেন যে ভারত যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ অব্যাহত রাখে, তাহলে তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন। তিনি বলেন, ‘তারা যদি কর আরোপ করে, আমরাও একই পরিমাণ কর আরোপ করব। তারা কর আরোপ করুক, আমরাও করব এবং তারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর কর আরোপ করছে। কিন্তু আমরা এখনো কর আরোপ করিনি।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম দফায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক মাঝেমধ্যেই হোঁচট খেয়েছে। ২০১৯ সালে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্কের হার বাড়ানোর পর ভারত বেশকিছু মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ট্রাম্প জিএসপির আওতায় ভারতকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্য–সুবিধা প্রত্যাহার করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার। ২০২৩-২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের আমদানি ছিল ৪ হাজার ২২০ কোটি ডলার। বিপরীতে রপ্তানি ছিল ৭ হাজার ৭৫২ কোটি ডলারের পণ্য। জিএসপি বাতিল হওয়ায় ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রপ্তানি আরও বাধাগ্রস্ত হলে তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ও পোশাকের মতো ভারতীয় শিল্প সমস্যায় পড়বে।
এর আগেরবার ট্রাম্প চীনা পণ্যর উপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় ভারত সেই সুযোগে নিজেদের পণ্যগুলোকে চীনের পণ্যের বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে বাজার বৃদ্ধি করতে পেরেছিল। তবে, এবার সেই চ্যালেঞ্জটাও কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও পোশাক খাতের জন্য তা সমস্যা তৈরি করবে। কারণ, এই দুই শিল্প মার্কিন ক্রেতাদের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। একই সঙ্গে ভারতে মার্কিন বিনিয়োগ কমতে পারে, ফলে তা ভারতের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক হবে।
ভারতের এই অবস্থার সুযোগ বাংলাদেশের মতো ছোট অর্থনীতির দেশগুলো নিতে পারে। ভারত গত মেয়াদে চীনের সাথে যা করেছিল সেই কৌশল অবলম্বন করতে পারে দেশগুলো। পোষাক শিল্প বাদেও, আইটি, ওষুধ, কৃষিপণ্যসহ নতুন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্ত করার পরিকল্পনা করে সুযোগ কাজে লাগানোর এখনই উপযুক্ত সময়। তদুপরি, উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আরও অনেক বেশি শিক্ষার্থীদের পাঠানোর সুযোগ করে মানবসম্পদ উন্নয়ন করার পরিকল্পনা করতে হবে। এইদিক দিয়ে ভারত ও চীন অন্যদের থেকে বহুগুনে এগিয়ে।
অন্যদিকে, বেশিরভাগ প্রতিবেশীর সঙ্গেই ভারতের বৈরি সম্পর্ক চলছে। যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের অবণতি হয়, তবে ব্যবসার স্বার্থে দেশটি আরও বেশি মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। তবে, বাংলাদেশ যদি রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিকভাবে কৌশলী হতে পারে তবে এই অবস্থাকে নিজেদের কাজে লাগাতে পারে।