![এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি](https://www.banglaoutlook.org/uploads/2024/12/online/photos/বাংলাদেশ-india-674f019be4531.jpg)
লেখাটি যখন লিখতে বসেছি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ভার্সন এবং টেলিভিশনের স্ক্রলে অভিন্ন শিরোনাম দৃশ্যমান ‘আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ’। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে বের হচ্ছেন। তারপর বিক্ষোভে উত্তাল করে তুলছেন চারিপাশ। খবরে প্রকাশ ‘দুপুরের দিকে সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে একদল দুর্বৃত্ত। সেখানে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠন মূলত এ হামলা চালিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র জানা গিয়েছে’। হামলাকারীরা গিয়ে সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলে। তারপর পতাকায় আগুন দেয়। তারা সেখানে বিক্ষোভের পাশাপাশি ভাঙচুরও চালায়। সেখানে দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করে মিছিল করে সেখান থেকে চলে যায়।
বাংলাদেশ ভারত পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় গত আগস্টে। ছিক্ষার্থী-জনতার বিপ্লবের মুখে একদলীয় বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই এই সম্পর্কের এই শীতলতার সূত্রপাত। তবে গত মাসখানেক থেকে সম্পর্কের এই শীতলতা আরও গভীর হয়েছে। বিগত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন আগরতলা এবং তার কাছাকাছি অঞ্চলে ক্রমাগত বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ করে যাচ্ছিল। তারা শুরুতে অনেকটা অহিংস থাকলেও পরে মারমুখী হয়ে ওঠে। তারপর গতকাল সোমবার দুপুরে তারা হঠাৎ করেই আগ্রাসী ভঙ্গিতে সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। সেখানে গিয়ে পতাকা নামিয়ে আগুণ লাগানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংঘাতে লিপ্ত হতে দেখা যায় তাদের।
ঢাকায় সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ কর্তৃক আয়োজিত বে-অফ বেঙ্গল কনভারসেশনস ২০২৪ এ ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণব ভার্মা যে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন সেখানে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেমন হতে পারে সেদিকে বেশ ইঙ্গিত ছিল। ভার্মা তার বক্তব্যের শুরুতে ‘আমাদের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত’ শীর্ষক কূটনৈতিক শিষ্টাচারে পরিপূর্ণ শব্দপঞ্জীতে আবেগি হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। সেখানে ভৌগোলিক অবস্থান, উদীয়মান সক্ষমতা ও ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক আর বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিল প্রচ্ছন্ন হুমকি। তিনি বাংলাদেশকে তাদের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’নীতির একটি স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করলেও তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বিরত ছিলেন ।
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এই সময়ে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রৌথ ফর অল ইন রিজিয়ন কিংবা ইন্দো-প্যাসিফিক চিন্তনকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। আলোচনা হওয়ার কথা ছিল বে-অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) এর সক্রিয়তা নিয়েও। সেখানে ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বেছে বেছে কূটনৈতিক শব্দচয়ন আর হিমশীতল ব্যাখ্যাদান আমাদের উৎকণ্ঠার কারণ হতে পারত। তবে পারস্পরিক সংবেদনশীলতার নামান্তে একপক্ষীয় আরও ভাল করে বলতে গেলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে সর্বংসহা নীতি অনুসরণ করে আসা হচ্ছিল তার ইতি টানার ইঙ্গিত ভারত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা তার বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কোনো রাখঢাক করেননি। তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও অগ্রসর বাংলাদেশকে সমর্থন করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে ক্রমাগত শক্তিশালী করার নামান্তে তিনি ভারতের সঙ্গে আমাদের বিদ্যমান নতজানু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ভারতকে লাভবান করার উপযোগী পরিবহন ও জ্বালানি সংযোগ নীতিমালা নবায়নের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তবে দুই দেশের জনগণের পরস্পর ক্রমশ বৈরি হয়ে ওঠার বন্ধের ব্যাপারে তার তেমন কোনো নির্দেশনা ছিল না।
বিষয়গুলো বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে কিছু নেতিবাচক উদ্যোগের দিকে অশুভ ইঙ্গিত করে। পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের শাসনকালে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে গিয়েছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অপচেষ্টায় ভারত সরাসরি তার সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গণ বিপ্লবের মুখে তাদের প্রিয় এই শাসকের বাংলাদেশ ত্যাগ স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের অবস্থানকেও ক্রমশ বিতর্কিত করে তুলছে। এ অবস্থায় ইতিবাচক গতি বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করাও বেশ চ্যালেঞ্জ।
বিস্ময় চিহ্ন যোগে ভারতের জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘হাসিনার পলায়নের পর বদলে গিয়েছে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক!’ তারা সেখানে লিখেছে ‘গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। বাংলাদেশের তদারকি সরকারের বিদেশ উপদেষ্টার মতে, ৫ আগস্টের পরেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বদলে গিয়েছে।’
দু’দেশের নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা বৃদ্ধি হয়েছে কথাটি সরাসরি উল্লেখ করে তারা আরও লিখেছে ‘কূটনৈতিক স্তরে ঘোষিত ভাবে সম্পর্কের অবনতি এখনও পর্যন্ত সেই ভাবে দেখা যায়নি। হাসিনা সরকারের আমলে পুজোর মরসুমে এ পার বাংলায় ইলিশ পাঠাত বাংলাদেশ। ইউনূসের তদারকি সরকারের আমলেও তা বদলায়নি। উৎসবে মরসুমে এ বারও বাংলাদেশ ইলিশ পাঠিয়েছে ভারতে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের ঘটনা পরম্পরাকে ঘিরে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতির দৃশ্য দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে দুইদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।’
তবে ভারত-বাংলাদেশের একসময়ের মধুর সম্পর্ক এখন ক্রমশ তিক্ত হয়ে উঠছে কেন। এ ই বিষয়টি স্যাম্পল হিসেবে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস বৈশ্বিক পরিসরে আবেদন করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সময়টাতে বেশ উদ্বিগ্ন। তার সরকার বিশ্বাস করছে, শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। একইসঙ্গে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, ভারত রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরছে’। তবে পুরো বিষয় এখানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এর বাইরে বিশ্লেষণযোগ্য আরও অনেক বিষয় রয়েছে। আর সেগুলো থেকে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ভুল করার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে নাই।
সাম্প্রদায়িক সংঘাত, অন্তর্ঘাতী রাজনীতি আর জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরির প্রচেষ্টা সব স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের অনেক পুরাতন বৈশিষ্ট্য। কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার নাটক মঞ্চায়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর কাণ্ড, সাঁওতাল পল্লিতে আগুন এগুলোর মধ্য দিয়ে ঢিমে তালে এগিয়ে গিয়েছিল স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের সর্বশেষ ধাপের পাতানো নির্বাচন। তারপর শিক্ষার্থী জনতার গণজাগরণ সব পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। তাই তাদের সামনে সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রতিহত করার চ্যালেঞ্জ সব থেকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই বিষয়টি সবাই কমবেশি মানলেও তার থেকে উত্তরণের জন্য কী করা যেতে পারে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে জনমনে।
সম্প্রতি সাবেক ভারতীয় সংস্কৃতি সচিব জহর সরকার শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। তার মত হচ্ছে শেখ হাসিনা ভারতে থাকলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘোলাটে হবে। এই সুযোগে তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নামতে পারে। তাদের উগ্রপন্থার উত্থান ঘটলে বাংলাদেশ কিংবা ভারত কারও জন্যই সেটা ভালো হবে না। জহর সরকারের মতো আরও অনেকের মতামত এটাই। তবে শুধুই সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থা নয় সমস্যার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে প্রতিদিন।
গ্রাম থেকে ১০-১৫ টাকার সবজি ঢাকা অবধি নিয়ে আসতে গিয়ে তার দাম বেড়ে হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে। পথে-প্রান্তরে চাঁদাবাজি রুখতে পুরোপুরি ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনেকে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে ইচ্ছা করেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করছে না। তাদের ক্রমাগত অসহযোগিতার পাশাপাশি প্রশাসনে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের সঙ্গীরা বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে প্রতিনিয়ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। একই ঘটনার প্রভাব হিসেবে রাস্তায় তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যানজট। একটা পর্যায়ে পুরোপুরি দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে জনজীবন। কেউ কেউ মনে করেন এই যানজটের মতো সংকটও পূর্ব পরিকল্পিত যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি ঘটা।
মুক্তমত প্রকাশের সুযোগ নিয়ে যুগ যুগান্তের পুরাতন এবং হাস্যকর নানা দাবিতে রাজপথের দখল নিতে চাইছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। এর অবশ্য অন্য কারণও আছে। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সাময়িকভাবে রাজপথে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। একটি দলের প্রধান গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাজার মুখে পড়ার ভয়ে তাদের নেতাকর্মীদের সিংহভাগ এখন পলাতক। অন্যদিকে তাদের আত্মগোপন দেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরাশক্তি বি এন পিও রাজপথ থেকে তাদের গুটিয়ে নিয়েছে। এই সুযোগ ফাঁকা রাজপথে ছড়ি ঘোরাচ্ছে বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠন। পাশাপাশি নানাভাবে ব্যানার বদলে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করতে চাইছে সদ্য সাবেক ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাই সংঘাত এবং সংকট হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের জন্য পূর্ব নির্ধারিত অনিবার্যতা।
রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক প্রতিটি দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে গভীর থেকে গভীরতম সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাদে এর থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তবে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগটা প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমত, দাগি অপরাধীদের আটক ও শাস্তির সম্মুখীন করার মাধ্যমে মানুষের কাছে আদালতের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচারহীনতায় বিব্রত জনগণকে ‘মব লিঞ্চিং’ থেকে নিবৃত করতে এর বাইরে আরও কোনো পথ নাই। অন্তত জনধিকৃত দাগি অপরাধীদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণের দ্রব্যমূল্যকে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে যেসব অন্যায্য কর আদায়ের বিধান রয়েছে সেগুলো মওকুফের মাধ্যমে জনমনে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। রাজপথের অরাজকতা দূর করতে প্রয়োজন হলে এখনই একটা টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। ট্র্যাফিক পুলিশদের অসহযোগিতা বন্ধে সামরিক বাহিনী থেকে কম বয়সে অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার ও সৈনিকদের এখানে যুক্ত করা যেতে পারে। তবে সামরিক বাহিনীর দীর্ঘায়িত অবস্থান কখনও পুলিশের বিকল্প হতে পারে না। এতে করে পুরো পরিস্থিতি হবে হিতে বিপরীত। দীর্ঘদিন সেনানিবাসের বাইরে অবস্থান করলে সামরিক বাহিনীর ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙ্গে পড়তে পারে যা হবে পুরো বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। তাই পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপযুক্ত সংখ্যক নিয়োগ প্রদান করতে হবে। সেইসঙ্গে সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
সংস্কারের নামে বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটি বন্ধ করে যত দ্রুত সম্ভব জনমনে স্বস্তি ফেরানোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। আর সেটা করা না গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া অতটা সহজ নয়। কবি নজরুল তাঁর কবিতায় বলেছিলেন ‘কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।/ এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।/ তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!/ যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।’ ঠিক যেন সেই সময়ের উপযুক্ত উদাহরণ বর্তমান বাংলাদেশ। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ভুল কাম্য নয়। পাশাপাশি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের সহযোগিতাও একান্তভাবে কাম্য।