Logo
Logo
×

অভিমত

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই পাল্লায় মাপার রাজনীতি

Icon

জিয়া হাসান

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই পাল্লায় মাপার রাজনীতি

এমএন তরুণের আর্টিকেলটা যথেষ্ট ব্যালেন্সড মনে হলে, এইটার রাজনীতি বুঝতে আপনাকে ১/১১-তে ফিরতে হবে। লেখাটার মূল আরগুমেন্ট হলো, বিএনপি আগে ক্রিমিনাল ছিল এখন ভালো হয়ে গেছে। ফলে আওয়ামী লীগও ক্রিমিনাল থেকে ভালো হয়ে যাও, তোমাদের সুযোগ আছে। এইটাই প্রথম আলোদের রাজনীতি যে, তারা সব সময়েই বিএনপি ও লীগকে একই স্কেলে মাপে।  

রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে বিএনপির সর্বোচ্চ অপরাধ ছিল বিচারকদের বয়সসীমা বৃদ্ধি। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পুরো স্টেটকে রিডিজাইন করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে , পুলিশ বাহিনীতে ছাত্রলীগ ঢুকিয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১/১১-এর সময়ে ২০টা মামলার রেফারেন্স উইকিলিকসে আছে, সঠিক। কিন্তু এইগুলো আমেরিকান গবেষণা নয়, আমেরিকানরা সেই সময়ে ডিজিএফআইয়ের টর্চারের প্রাপ্ত কেসগুলোকে রেফার করেছে, কিন্তু সেইটা এখনো প্রথম আলোর রেফারেন্স। তারেক রহমান যে একটা মামলায় অপরাধী প্রমাণিত হয়েছেন, সেই মামলার বিচারককে দেশ ছাড়া করা হয়েছে। 

১০ ট্রাক অস্ত্র তো বিএনপির একলা না, তার আগে, শেখ হাসিনার আমলেও বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো ইন্ডিয়ান বিদ্রোহীদের অস্ত্র, অর্থ, ইউনিফর্ম ইত্যাদি দিয়ে গেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১-এর আমলে কর্মরত এজেন্সির অফিসারদের সাথে কথা বললে, তার প্রমাণ পাবেন। ওরা আমাদের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিত, আমরা তাদের বিদ্রোহীদের দিতাম।

বিএনপি মুফতি হান্নানকে দিয়ে হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করেছে সেই গল্প বলাইতে মুফতি হান্নানের ওপরে ভয়ংকর টর্চার করা হয়েছিল, সাক্ষ্য নিতে তার আঙ্গুলে সুঁই ফোটানো হয়েছিল। মুফতি হান্নান তার আগে হাসিনার আমলেই হাসিনার ওপরে হামলা করেছে, হাসিনার স্টেজে বোমা পুঁতে রেখেছিল।  

যদি বিএনপির আমলে ঘটনা ঘটলেই তার দায় খালেদা আর তারেকের হয়, হাসিনার আমলে হাসিনার ওপরে মুফতি হান্নানের বোমা হামলার দায় হাসিনার না কেন? হলি আর্টিজানের দায় হাসিনার না কেন?

ব্রিটিশ এমআই সিক্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ্য আছে, যে ব্যাচের গ্রেনেড দিয়ে কিবরিয়া সাহেবের ওপরে হামলা হয়েছিল বা ব্রিটিশ হাইকমিশনের ওপরে হামলা হয়েছে, একই ব্যাচের গ্রেনেড দিয়ে হাসিনার ওপরে হামলা হয়। তো বিএনপি নিজের আমলে দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব হামলা ঘটিয়েছে?  

১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতা ছেড়েছেন তখন বাংলাদেশে জঙ্গি ছিল না। কিন্তু, ১৯৯৯ থেকে শুরু হয় জঙ্গি হামলা, সেইটা বিএনপি র‍্যাব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। শেখ হাসিনার ওপরে হামলাকারী মুফতি হান্নানকে বিএনপি গ্রেপ্তার করেছে, ফলে সিআইডি জজ মিয়াকে দিয়ে কী বলেছে, সেইটা বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার ইতিহাস। বিএনপির একলার দায় না।  

১৯৯৯ সালে উদীচীর ওপরে হামলার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে, যার সাথে জঙ্গিদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। জজ মিয়া সেই ধারাবাহিকতার অংশ।

বিএনপির দায় অবশ্যই আছে, কিন্তু প্রথম আলো কখনোই বলে না, বিএনপিই মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার করেছিল, যা দিয়ে জজ মিয়ার দায় কেটে যায়।  

২৬ মার্চের পর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন, যেইটা খুব সম্ভবত এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর দখলে ছিল। পাকিস্তান বাহিনী এই সময়ে পুরো ডিভিশন মুভ করে, এলাকা দখলে নেয়। জিয়া এই সময়ে নিজেকে স্বাধীন বাংলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডিক্লেয়ার করেন। এই সময়টা মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় যখন, কোনো ধরনের ভারতীয় সাহায্য ছাড়া মুক্তিবাহিনী অনেক বড় একটা এলাকায় মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিল। ফলে জিয়া স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রেসিডেন্ট এই লজিকও ভুল না।  

খালেদা জিয়া শেখ মুজিবের মৃত্যু দিবসে নিজের জন্মদিনের কেক কেটেছেন—অশোভন। কিন্তু এইটা কমপ্লিটলি ইনসিগনিফিকেন্ট একটা ইস্যু। খালেদা জিয়া কখনোই ঘটা করে সেটা উদ্‌যাপন করেন নাই বা সেটা নিয়ে বিএনপি পার্টি দেয় নাই। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সবসময়েই শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, তারেক রহমান টুঙ্গীপাড়া জিয়ারত করেছেন।  

এইগুলো আমি কেমনে জানি?  

কারণ, ২০১২-এর আগে আমি প্রথম আলোর বয়ানে দুনিয়া দেখতাম, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মনোযোগী ছিলাম না। কিন্তু, ১৪-তে হাসিনার ফ্যাসিস্ট রূপান্তরের পর থেকে এই প্রতিটা প্রশ্ন আমার নিজের মতো করে স্টাডি করেছি যে, কেন কীসের ভিত্তিতে আমি আওয়ামী লীগের পতন চাই? 

কেন আমি আওয়ামী লীগ ফেলে, বিএনপিকে আনতে চাইতেছি। কারণ উভয়েই তো সমান এবং তাতে আমি দেখতে পেয়েছি। আওয়ামী লীগের মতো পাশবিক একটা দলকে মোকাবিলা করতে গিয়ে, তাদের সকল প্রতিপক্ষকে আওয়ামী লীগের লেভেলে নেমে আসতে হয়েছে। জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া সকলকেই সেটা ফেস করতে হয়েছে। নইলে, কেন খালেদা জিয়ার ৯১ থেকে ৯৬-এ কোনো টেরোরিজম নাই, বোমা হামলা নাই, দুর্নীতি নাই? এবং আওয়ামী লীগ যে ধ্বংসস্তূপ রেখে যায় সেটা বিএনপিকে ঠিক করতে হয়েছে।  

এটা ৭৬-এর জিয়াকে করতে হয়েছে, ২০০১-এ বিএনপিকে করতে হয়েছে। কিন্তু, প্রথম আলো কখনোই সেই কন্টেক্সট দেখায় না যে, বিএনপি রিঅ্যাক্ট করছে, অ্যাক্ট করছে না। কিন্তু সেটাইকে এই প্রথম আলোরা জ্বলন্ত কড়াই থেকে ফুটন্ত উনুন হিসেবে দেখায়। হাসিনা-খালেদাকে এক পাল্লায় দেখিয়েছে, যেই পাপ থেকে ১/১১-এ পরবর্তী হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের জন্ম। ইন রিয়ালিটি হাসিনা এবং খালেদা, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই না। কিন্তু তাদের সমান দেখাইতে প্রথম আলো বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দেয়।  

আওয়ামী লীগকে বিএনপি কীভাবে ভালো হয়ে গেছে, তুমিও ভালো হয়ে যাও নসিহত করে লেখা, এমএন তরুণের আর্টিকেলটা সেই একই বয়ানের অংশ। যে বয়ানে আওয়ামী লীগ বিএনপি সমান। হাসিনা-খালেদা সমান।  

এই আর্টিকেলের একটা লাইনেই, প্রথম আলোর রাজনীতির মূল বিষয়টি আছে যে, ‘কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে তারেক রহমানের অতীতের কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তার যে রেকর্ড, তাতে তিনি যে এসব বক্তব্যের সঙ্গে আন্তরিক, তা মানুষের পক্ষে আস্থায় আনা কঠিন।’ 

শোনো প্রথম আলো, বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমান হিসেবে দেখিয়ে যে বয়ান তোমরা বানিয়েছো, তারপরে তোমাদের আস্থায় নেওয়া কঠিন না অসম্ভব। তোমরা ৯০ পরবর্তী বাংলাদেশের প্রধান ক্রিমিনাল, যারা ১/১১ নামিয়েছো এবং হাসিনার বাকশালী বয়ানের সফট ভার্সনকে প্রমোট করে তাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে টিকিয়ে রেখেছো।  

সরি প্রথম আলো, তোমরা নিরপেক্ষ না, তোমরা সফট বাকশালকে নিরপেক্ষতা হিসেবে উপস্থাপন করেছো। তোমাদের আদিপাপ—যেটা বাংলাদেশের রাজনীতি ধ্বংস করেছে—তার জন্য যতদিন তোমরা প্রকৃত অনুকম্পা চেয়ে শুদ্ধ না হয়ে আসবা, ততদিন, তোমাদের সফট বাকশালি নিরপেক্ষতার বয়ানের বিরুদ্ধে থাকা একজন প্রকৃত ইন্ডিপেন্ডেন্টের দায়।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন