Logo
Logo
×

অভিমত

ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতিবাজরা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ পিএম

ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতিবাজরা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে

আওয়ামী দুঃশাসনে দেশের প্রায় সমস্ত খাত ধংস হয়ে গেছে। যথেচ্ছা দুর্নীতি, জবাবদিহিহীনতা, দলবাজিতে দেশের প্রায় সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধসে গেছে। তবে, এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তগুলোর একটি হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতায় ঋণখেলাপের সংস্কৃতি নতুন নয়, কিন্তু আওয়ামী আমলে তা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। 

আওয়ামী আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ তো ছিলোই, ব্যাংকিং লাইসেন্স নিয়ে চলেছে তুঘলকি কান্ড। এস আলমের মতো গ্রুপেরা চাইলেই ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে। এইসব অনুমোদন ব্যবহার করে টাকাপয়সা লোপাট করেছে, বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। অভিযোগ আছে, এইসবের বড় ভাগ পেয়েছে সরাসরি শেখ পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলসহ ইত্যাদি ফান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে যার কোনো হিসেব ছিলো না। 

এমনকি সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছে। এস আলমদের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চতর পদগুলোতে লোক বসানো হয়েছে। এস আলমের ব্যাংকগুলোতে নিজেদের লোক দিয়ে অডিট করানো হয়েছে যাতে কোনোরকম দুর্নিতির খবর প্রকাশ না হয়। এস আলমের এক কর্মচারী পিকে হালদার যা লুটপাট করেছে তার পরিমাণ অবিশ্বাস্য। হলমার্ক কেলেংকারিতে সোনালী ব্যাংকের মতো আস্থাশীল ব্যাংককে খোড়া করে দেয়া হয়েছে। আবুল বারাকাত, সুভাষ সিংহ রায়দের মতো আওয়ামী দস্যুরা নির্বিবাদে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করেছে। ইসলামী ব্যাংকের মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। 

হাসিনার পলায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষ আশা করছে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া খাতগুলো সংস্কার হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এই নিয়ে আশা দেখাচ্ছে। 

কিন্তু, ব্যাংকিং খাতে সে রকম আশাব্যাঞ্জক চিত্র চোখে পড়ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নরের (ডিজি) বিরুদ্ধে এস আলমের মতো গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) নুরুন নাহার এবং ড. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার নেই বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পর্যন্ত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ঋণ জালিয়াতি, অবৈধ সুবিধা গ্রহণ এবং অন্যান্য অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

তীব্র তারল্য সংকটে গ্রাহকদের আস্থা তলানিতে। অনেক ব্যাংকে, বিশেষত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে, নিজেদের আমানত তুলতে পারছেন না গ্রাহক। এই অবস্থায়, গ্রাহকদেরই উলটো ‘প্রয়োজন’ না হলে টাকা না তুলতে অনুরোধ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে বলছেন তারা। 

একদিকে আওয়ামী লুটেরাদের ধরার ব্যাপারে গড়িমশি অন্যদিক গ্রাহকদেরই কাঁধে দায়িত্ব চাপানো ভালো লক্ষণ না। ব্যাংকিং খাতকে ধংসের জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমশি করলে এতো ত্যাগের আন্দোলন বৃথা যাবে। দেশের অর্থনীতি পুনুরুদ্ধার হবে না।


Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন